Notice: Trying to get property 'post_excerpt' of non-object in /home/parbatta/public_html/wp-content/themes/artheme-parbattanews/single.php on line 53

Notice: Trying to get property 'guid' of non-object in /home/parbatta/public_html/wp-content/themes/artheme-parbattanews/single.php on line 55

উপজাতীয় সন্ত্রাসীদের হামলায় ফটিকছড়ি চা বাগানের ম্যানেজারসহ আহত ৩

Ramgarh 17

নিজাম উদ্দীন লাভলু:

পাবর্ত্য চট্টগ্রামের একটি আঞ্চলিক দলের সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের হামলায় ফটিকছড়ির ব্র্যাক কর্ণফুলী চা বাগানের দুই কর্মকর্তা গুরুতর আহত হয়েছেন। রবিবার বেলা সাড়ে ১০টার দিকে এ হামলার ঘটনা ঘটে বলে জানা গেছে।

আহত দুই ম্যানেজার বর্তমানে চট্টগ্রামের একটি প্রাইভেট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। এরআগে গত বুধবার ভূমি বিরোধকে কেন্দ্র করে ঐ চা বাগান এলাকায় উপজাতীয়দের ৮টি ঘরে অগ্নি সংযোগের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার পর থেকেই বাগান এলাকায় উপজাতি, বাঙালী বাসিন্দাদের মাঝে উত্তেজনা বিরাজ করছিল।

এদিকে বাগানের দুই কর্মকর্তার উপর হামলার ঘটনার পর লক্ষ্মীছড়ি জোনের বাইন্যাছড়া ক্যাম্প থেকে সেনাবাহিনীর একটি টহলদল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। ফটিকছড়ি থানার অফিসার ইনচার্জ মফিজ উদ্দিন ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ঘটনাস্থলে পুলিশ প্রেরণ করা হয়েছে।

ব্র্যাক কর্ণফুলী চা বাগান সূত্র জানায়, গতকাল রবিবার বাগানের ফেনুয়া ডিভিশনের ২৮ নম্বর ব্লক পরিদর্শনে যায় কর্ণফুলি চা বাগানের ম্যানেজার মো: শাহনেওয়াজ (৫০), ট্যাকবাড়িয়া ডিভিশনের ম্যানেজার মো. ইলিয়াছ (৫২) এবং লেলাং ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার মো: আবুল হোসেন (৪৩)। প্রতিদিনের মতো তারা দুইদ্যেখোলা সংলগ্ন ঐ ঐলাকায় পৌছালে আগে থেকে ওঁত পেতে থাকা ১০-১৫জন সশস্ত্র উপজাতীয় সন্ত্রাসী অস্ত্রেরমুখে তাদের ঘিরে ফেলে ।

নাম পরিচয় জানার পরই সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা তাদের এলোপাথারি মারধর শুরু করে। বেদম প্রহারে তারা অজ্ঞান হয়ে পড়লে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়। পরে শ্রমিকরা তাদের আহত অবস্থায় উদ্ধার করেন। বাগানের নিজস্ব হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে চট্টগ্রাম শহরে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়।

লেলাং ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আবুল হোসেন বলেন, বাগানের ব্যবস্থাপক শাহনেওয়াজের অনুরোধে তিনি বাগানে যান। নিজস্ব মোটর সাইকেল যোগে সকাল সাড়ে ১০টায় বাগানের দ্যুদ্যাখোলা নামকস্থানে ব্রীজে পৌঁছলে ৩-৪জন উপজাতি যুবক তার গাড়ির গতিরোধ করে প্রথমেই চাবি ও মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়। এর পরপরই বাগানের জীপযাগে ম্যানেজার শাহনেওয়াজ ও মো: ইলিয়াছ ঐখানে পোঁছামাত্র সন্ত্রাসীরা গাড়িটি আটক করে তাদের কাছ থেকেও গাড়ির চাবি, মোবাইল ফোন, চশমা ইত্যাদি ছিনিয়ে নেয়।

এসময় পাশের জঙ্গল থেকে আরও ১৫-২০জন শসস্ত্র উপজাতি সন্ত্রাসী এসে বাগানের দুই ম্যানেজারের উপর হামলা চালায়। সন্ত্রাসীরা লাঠিসোটা দিয়ে এলোপাথারি মারপিট করে দুজনকে। বেদম মারপিটের তাদের পড়নের প্যান্ট ছেঁড়ে যায় এবং উলঙ্গ হয়ে পড়ে। ইউপি সদস্য আরও বলেন, সন্ত্রাসীদের পায়ে ধরে ক্ষমা চাইলেও তারা নির্দয়ভাবে আঘাত করতে থাকে। এতে দুজনই অজ্ঞান হয়ে পড়েন। তিনি বলেন, এসময় ২-৩জন সন্ত্রাসী তাকে ঘিরে রাখে।

সন্ত্রাসীরা দুই কর্মকর্তাকে বাগান ছেড়ে চলে না গেলে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকী দেয়। চলে যাওয়ার সময় তারা বাগানের জীপগাড়িটি ভাংচুর করে ব্রীজের নীচে ঠেলে ফেলে দেয়।

ব্র্যাক কর্ণফুলী চা বাগান কর্তৃপক্ষ পাহাড়ের আঞ্চলিক সংগঠন ইউপিডিএফ কে এঘটনার জন্য দায়ী করেন। তারা অভিযোগ করে জানান, জাফরাবাদ, দুইদ্যেখোলা, ট্যোক বাড়িয়া, সরকারী ডেবা, রক্তছড়ি, মানিকপুর এলাকার বিশাল শত শত একর চা বাগানের ইজারাকৃত জমিতে কাজ করতে দিচ্ছেনা ইউপিডিএফ। তারা জমি গুলো তাদের দাবী করে। পরিচর্যার কাজে বাধা দেয়ায় বাগানের জাফরাবাদ এলাকায় প্রায় ৫ হাজার চা গাছ মরে যাচ্ছে।

এলাকাবাসী অভিযোগ করে বলেন, ফটিকছড়ি সীমান্তে প্রায় ৫শ একর কৃষি ভূমি ও শত শত একর পাহাড়ী ভূমি উপজাতী সংগঠন ইউপিডিএফ দখল করে রেখেছে। তাদেরকে চাঁদা না দিলে সেখানে চাষাবাদ করা যায়না।
স্থানীয় ইউপি সদস্য আবুল হোসেন জানান, ফটিকছড়ি-লক্ষ্মীছড়ি সীমান্তের ট্যাকবাড়িয়া এলাকায় বেশ কিছুদিন ধরে পাহাড়ি জনগোষ্ঠি ও চা বাগান কর্তৃপক্ষের মধ্যে বিরোধ চলছিল। ভূমি বিরোধের জের ধরে গত বুধবার উপজাতীয়দের ৮টি ঘর পুড়ে দেওয়া হয়।

এ ঘটনায় পাহাড়ি-বাঙ্গালির মধ্যে উত্তেজনার সৃষ্টি হলে গত বৃহস্পতিবার কাঞ্চননগর ইউনিয়ন পরিষদে এক শান্তি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে সৃষ্ট বিরোধ নিস্পত্তিকল্পে আগামী ২৮ জানুয়ারী পুনরায় বৈঠক করার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। মীমাংসা না হওয়া পর্যন্ত বিরোধপূর্ণ জায়গায় উভয়পক্ষকে কোন কিছু না করতে অনুরোধ জানানো হয়। ঐ বৈঠকে লক্ষ্মীছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান সুপার জ্যোতি চাকমা, ফটিকছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: নজরুল ইসলাম, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান এ্যাডভোকেট উত্তম কুমার মহাজন, লক্ষীছড়ির ভাইস চেয়ারম্যান অংগ্য প্রু মারমা, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান বেবি রানী বসু, ফটিকছড়ি থানার অফিসার্স ইনচার্জ মফিজ উদ্দিন, লক্ষ্মীছড়ি থানার অফিসার্স ইনচার্জ রকিবুল হাসান, বাইন্যাছড়া ক্যাম্প কমান্ডার ক্যপ্টেন হাসান মেহেদী, কাঞ্চন নগর ইউপি চেয়ারম্যান রশীদ উদ্দিন কাতেব, লেলাং ইউপি চেয়ারম্যান কুতুব উদ্দিন মুহুরী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে উভয়পক্ষের উপস্থিতি ও সন্মতিতে শান্তি বৈঠক অনুষ্ঠানের পর গতকাল রবিবার বাগানের দুই কর্মকতাদের উপর উপজাতীয় সন্ত্রাসীদের হামলার ঘটনায় ঐ এলাকার অধিবাসীদের মধ্যে চরম উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। স্থানীয় তথ্যাভিজ্ঞমহল জানান,আইনশৃঙ্খলাবাহিনী এ ব্যাপারে দ্রুত ও কার্যকরী ব্যবস্থা না নিয়ে বড় ধরণের সংঘাতের আশংকা রয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন