উপজাতি কোটার যৌক্তিকতা ও অসম বণ্টন

373115_142001439207087_1830662928_n
পাঠকের মতামত
নাজমুল আহসান

বিসিএস পরীক্ষায় প্রিলিমিনারি পর্যায় থেকেই বিভিন্ন কোটা অনুসারে ফল প্রকাশের জেরে উদ্ভূত আন্দোলনের পক্ষে-বিপক্ষে অনেক জ্ঞানী ফেসবুকার অনেক কথাই বলছেন, আমি অধমেরও এ নিয়ে কিছু বলার ইচ্ছে জন্মালো। আগে আমার ব্যাক্তিগত একটি অভিজ্ঞতার কথাই বলি। আমি যেবার চট্টগ্রাম ভার্সিটিতে মেরিট লিস্টে ঠাঁই পেলাম, সেবার পেয়েছিলাম বায়ান্ন। কিন্তু সিরিয়াল পিছনে থাকায় আমার চুড়ান্ত ঠাঁই হলো না। একই সময়ে নৃগোষ্ঠী কোটায় ৩৯ পেয়েও চান্স পাওয়া গেছে! আমারও একটা কোটা ছিল (অন্তত, আমি তা-ই জানতাম), নাম হচ্ছে- ‘পার্বত্য বাঙালি কোটা’! এই কোটার অস্তিত্ব চট্টগ্রাম আর কুমিল্লা ভার্সিটি ছাড়া আর কোথাও নেই। পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসকারী স্থায়ী বাসিন্দারা এই কোটার উপযুক্ত। কিন্তু পরে দেখলাম, আমি উপযুক্ততা হারিয়েছি! কারণ, আমি কলেজ পর্যায়টা পার্বত্য চট্টগ্রামের বাইরে কাটিয়েছি, যদিও আমার পরিবার সেখানে স্থায়ী! কষ্ট পেয়েছিলাম খুব!

পার্বত্য বাঙালী অথবা উপজাতিরা এই কোটা লাভ করে, ‘পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীদের জন্য রাষ্ট্রপ্রদত্ত বিশেষ সুবিধা’ সংক্রান্ত সংবিধানের একটি ধারার উপর ভিত্তি করে। পার্বত্য বাঙালীরা যদি পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীগুলোর মধ্যে হয়ে থাকে, তাহলে পার্বত্য বাঙালিরা অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং চাকুরী ক্ষেত্রে কেন এই সুবিধা পাচ্ছে না? আর যদি না হয়, তাহলে একই অঞ্চলে বসবাস করে এবং একই ভৌগোলিক বাঁধার সম্মুখীন হয়েও পাহাড়ীরা কেন পাচ্ছে? পার্বত্য বাঙালীরা যদি কেবলমাত্র উচ্চ-মাধ্যমিক পর্যায় বাইরে পার করার কারণে কোটা সুবিধা পাবার অনুপযুক্ত হয়ে থাকে, তাহলে কোটা সুবিধা পেয়ে ক্যাডেট কলেজ, বুয়েট, মেডিকেল সহ দেশের প্রতিটি বিশ্ব-বিদ্যালয় পর্যায় পর্যন্ত পড়াশুনার পরও বিসিএস সহ অন্যান্য সকল চাকুরীতে পাহাড়িরা কোটা সুবিধা পাবার যোগ্য কি করে হয়? যেখানে দেশের মোট জনসংখ্যার ০.০০১৭% (মাত্র তিন লাখ) চাকমারা দেশের সমগ্র উচ্চ-শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও চাকুরী ক্ষেত্রের অন্তত ৩.৫% দখল করে বসে থাকে, তখন একে আর যা-ই হোক ন্যায়সঙ্গত বলা যায় না।

তাদের রাষ্ট্রীয় ও বেসরকারীভাবে যেভাবে পৃষ্ঠপোষকতা করা হয়, তার যৌক্তিকতা ও সুষম বন্টন নিয়ে চিন্তা করা হয়েছে কি? যেমন- নৃগোষ্ঠীদের নিজেদের মধ্যেই এলিট শ্রেণী গড়ে উঠেছে, যাদের নেতৃত্বে আছে চাকমা ও মারমারা। এদের দাপটে পার্বত্য চট্টগ্রামের বাকী ১১-১৫টি উপজাতির নাম নিশানা জাতীয় পর্যায়ে চোখেই পড়ে না! চাকমাদের মধ্যে ৮৫-৯০% শিক্ষিত, বিসিএস সহ সরকারী চাকুরী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্ত নৃগোষ্ঠীদের জন্য সংরক্ষিত কোটার সিংহভাগ তাদের দখলে থাকে প্রতিবছর। পার্বত্য চট্টগ্রামে কাজ করা পশ্চিমা এনজিও গুলোর বিলাসবহুল চাকুরীগুলোও অসাংবিধানিকভাবে কেবল তাদের জন্যই সংরক্ষণ করা হয়। পশ্চিমা দেশের অ্যাম্বাসিগুলো স্ব-স্ব দেশে পড়াশুনার জন্য একচেটিয়াভাবে পাহাড়িদের বেছে নেয়। এর ফলে প্রকৃত অর্থে ‘পিছিয়ে পড়া’ জনগোষ্ঠীরা বা নৃগোষ্ঠীরা কি এই সুবিধা ভোগ করতে পারছে? এই সুবিধার সুষম বন্টন ন্যায়ের ভিত্তিতে হচ্ছে কি?

পুরো দেশ সামগ্রীকভাবে এর ফলাফল হয়তো বইতে পারছে, কিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রাম এককভাবে তা পারছে না। সেখানে অর্ধেকের মত অধিবাসী বাঙালী। তাদের অনেকের আগমন প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন থাকতে পারে। কিন্তু সেখানে মোট জনসংখ্যার বড় একটা অংশ বাঙালী। তারা ভৌগোলিক ও আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে পাহাড়িদের মত একই প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হচ্ছে, কিন্তু তারা তো রাষ্ট্র থেকে ছিটেফোটা সুবিধাও পাচ্ছে না! এর ফলে সামাজিক রেস থেকে তারা ছিটকে পড়ছে, সেখানে একটি এলিট সম্প্রদায় গড়ে উঠছে, যার ফল হবে মারাত্নক। একটি উদাহরণ দিলেই বিষয়টি পরিষ্কার হতে পারে। পার্বত্য চট্টগ্রামে নৃ-গোষ্ঠী থেকে এখন পর্যন্ত অন্তত ৭০০-১০০০ বিসিএস ক্যাডার হয়েছে, যাদের কয়েকজন দু’এক ব্যাচ পরই হয়তো সচিব হবেন। ইতোমধ্যেই নব বিক্রম কিশোর ত্রিপুরা সচিব হয়েছেন, মেজর জেনারেল অনুপ কুমার চাকমা মায়ানমারে রাষ্ট্রদূত হয়েছেন। অথচ, পার্বত্য বাঙ্গালীদের মধ্যে এখন পর্যন্ত কেউ প্রথম শ্রেণির সরকারী কর্মচারী হতে পেরেছেন কিনা তা গবেষণাসাপেক্ষ ব্যাপার! এই শ্রেণি-বৈষম্যের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ফলাফল পড়ছে সেখানে, যেসব এই পরিসরে হয়তো আলোচনা করা সম্ভব নয়। সত্যিকার অর্থে, নৃ-গোষ্ঠীদের ‘নির্যাতিত’ হিসেবে প্রচার করা হচ্ছে এই সব অনায্য সুবিধা বহাল রাখার জন্যেই। কারণ, বাস্তবতা আমাদের সামনে একটি ফলাফল দাঁড় করায়, যেটি প্রচলিত ধারণার বিপরীত। সময় এসেছে এসব নিয়ে কথা বলার।

আমার সাথে অনেকেই দ্বি-মত পোষণ করবেন, অনেকেই অনেক কিছু তুলে ধরবেন। আমি শুধু বলবো, কিছু বলার আগে সেখানকার বাঙালীদের মানবিক দিক দিয়ে ‘মানুষ’ হিসেবে বিবেচনা করে, তাদের মানবিক চাহিদাটুকু মাথায় রাখবেন। আর একটি কথা মনে রাখবেন, দেশের অন্যত্র বসবাসকারী সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালীদের সাথে পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসকারী বাঙালীদের গুলিয়ে ফেললে ভুল করবেন, সেক্ষেত্রে এখানে কথা না বলাটাই উত্তম হবে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

One Reply to “উপজাতি কোটার যৌক্তিকতা ও অসম বণ্টন”

  1. mr, nazmul ahasan,..do one thing don’t spend to write article in the web or other visible media….better do more hard study to get the place or do a movement to become BANGALI UAJATI…i hope then you may get the opportunity for the government and privet institutions..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন