উগ্র বৌদ্ধ জাতীয়তাবাদ মিয়ানমারে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের জন্য হুমকি
পার্বত্যনিউজ ডেস্ক:
উগ্র বৌদ্ধ জাতীয়তাবাদ মিয়ানমারে একটি উদ্বেগজনক সামাজিক সমস্যা হিসেবে আবির্ভুত হয়েছে। এটি বহু-ধর্ম ও বহু-জাতিক রাষ্ট্রটিতে শন্তিপূর্ণ সহাবস্থানের জন্য একটি গুরুতর হুমকি। ইন্টারন্যাশনাল ক্রাসিস গ্রুপ (আইসিজে)’র এশিয়া বিষয়ক সর্বশেষ রিপোর্টে এ কথা বলা হয়েছে।
এতে আরো বলা হয় যে, গত আগস্টে আল ইয়াকিন বা এআরএসএ (আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি) আরাকান রাজ্যের উত্তরাঞ্চলে যে হামলা চালায় তা মূলত স্থানীয় ক্ষোভ থেকে সৃষ্ট।
এটা নিশ্চিতভাবে বৌদ্ধ জাতীয়তাবাদীদের একটি যুক্তি বা ব্যাখ্যা হিসেবে কাজ করবে। এই ঘটনা এই অঞ্চলের সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিবর্তনশীল শক্তি ও জাতিগত ইস্যুগুলোকে আরো জটিল করে তুলবে।
এই পরিবর্তনশীল শক্তি কিভাবে মিয়ানমারের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে আতংক সৃষ্টি করছে, জাতীয়তাদী বাগাড়ম্বর উষ্কে দিচ্ছে এবং জঙ্গিদের আচরণ প্রভাবিত করছে তা অনুধাবন ও সমাধান সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
গত ৫ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত ‘মিয়ানমারের বৌদ্ধবাদ ও রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা’ শীর্ষক আইসিজি’র এশিয়া রিপোর্টে আরো বলা হয়, ২০১৫ সালে এনএলডি’র নিরংকুশ বিজয় মা-বা-থা’কে কিছুটা পেছনে ঠেলে দিয়েছে।
কিন্তু আগ বাড়িয়ে একে ক্ষয়িষ্ণ শক্তি হিসেবে আখ্যায়িত করা ভুল। সম্প্রতি দেশটির সংঘ কাউন্সিল মা-বা-থা নাম ও এর সাইনবোর্ড প্রদর্শন নিষিদ্ধ করে।
কিন্তু সংগঠনটি এখন পর্যন্ত ওই নিষেধাজ্ঞার বিরোধিতা করে যাচ্ছে। এই সংগঠন রাজনৈতিক বিক্ষোভ ও সহিংস উষ্কানি প্রদান অব্যাহত রেখেছে। সংগঠনটির টিকে থাকার ক্ষমতা ও এর আদর্শের জনপ্রিয়তা এ থেকে বুঝা যায়।
বিভিন্ন মহলের ওপর এর ধর্মীয় কর্তৃত্ব সরকারের সঙ্ঘ কাউন্সিলের চেয়ে অনেক বেশি। মা-বা-থা এখন সরকারের নিষেধাজ্ঞাকেই নিজেদেরকে আরো জনপ্রিয় করার কাজে লাগাচ্ছে।
আইসিজি জানায়, মা-বা-থা ও এর বক্তব্যগুলো মোকাবেলার কাজটি শুরু করতে হবে সংগঠনটির প্রতি সমর্থনের উৎসস্থল থেকে। রাজনৈতিক জাতীয়তাবাদ থেকে অনেক বিস্তৃত পরিসরে মা-বা-থা জড়িত। এটি ধর্মীয় ও নাগরিক শিক্ষা, সেবা সরবরাহ ও বিরোধ নিরসনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
রাজনৈতিক ক্ষমতা দখল এই সংগঠনের সদস্যদের প্রাথমিক উদ্দেশ্য নয়। তবে নিজেদের নৈতিক এজেন্ডাগুলো এগিয়ে নিতে রাজনৈতিক প্রভাব গরুত্বপূর্ণ বলে তারা মনে করে।
মা-বা-থা’র প্রভাব মোকাবেলা করতে হলে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী ও তরুণ সম্প্রদায়ের জন্য এসব ক্ষেত্রে অংশগ্রহণের আলাদা পথ তৈরি করতে হবে বলে আসিজি মনে করে। কট্টর বৌদ্ধ জাতীয়তাবাদী সংগঠনটি যে ধরনের সেবা দিচ্ছে এবং যে পরিমাণ সমর্থন হাসিলের ক্ষমতা রাখে তা অনুধাবন করা না গেলে সরকারের প্রচেষ্টা নিষ্ফল হবে এবং উল্টো ফল বয়ে আনতে পারে।
পরম-পূজনীয় ও ক্যারিশম্যাটিক বৌদ্ধভিক্ষুরা মা-বা-থা’র নেতৃত্ব দিচ্ছেন। ধর্মীয় ইস্যুতে এসব ভিক্ষুর কর্তৃত্ব সরকার বা সরকারের ধর্মীয় কর্তৃপক্ষের চেয়ে অনেক বেশি বলে মিয়ানমারের অনেক বৌদ্ধ মনে করেন। মা-বা-থা’র আবেদন ব্যাপকভাবে বিস্তৃত।
যারা এই সংগঠনটিকে রাজনীতির অঙ্গনে দেখতে চান না বা এর ঘৃণাছড়ানো বক্তব্য অপচ্ছন্দ করেন তাদের কাছেও এর আবেদন রয়েছে। কারণ, সংগঠনটি কমিউনিটি পর্যায়ে বহুরকম ‘ভালো কাজ’র সঙ্গে জড়িত। এরা বৌদ্ধ ধর্মীয় স্কুল পরিচালনা করে, সামাজিক সেবা দেয় এবং সেক্যুলার শিক্ষা থেকে শুরু করে আইনি সহায়তা এবং দুর্যোগকালে ত্রাণ সহায়তাও দিয়ে থাকে।তাই মা-বা-থা’র জনসমর্থনের ভিত্তি অনেক মজবুত।
এই সংগঠনের অনেক আপত্তিকর আদর্শ রয়েছে। যেমন কোন নারীর পছন্দমতো স্বামী বেছে নেয়ার অধিকার এরা স্বীকার করে না। কিন্তু অসহায় নারীদের সহায়তায় অসংখ্য প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলায় নারীদের মধ্যেও মা-বা-থা’র জনপ্রিয়তা রয়েছে।
নারী-পুরুষ নির্বিশেষে অনেকের জন্য মা-বা-থা শুধু একটি জোরালো ও পর্যাপ্ত তহবিলযুক্ত সেবাই দিচ্ছে না, দ্রুত সামাজিক পরিবর্তনের আবহ এবং কর্মসংস্থান ও অন্যান্য সুযোগের অভাবে ভোগা তরুণ সমাজকে একাত্মতার অনুভুতি ও দিকনির্দেশনাও দিচ্ছে।