Notice: Trying to get property 'post_excerpt' of non-object in /home/parbatta/public_html/wp-content/themes/artheme-parbattanews/single.php on line 53

Notice: Trying to get property 'guid' of non-object in /home/parbatta/public_html/wp-content/themes/artheme-parbattanews/single.php on line 55

উখিয়া টেকনাফ নাইক্ষ্যংছড়িতে নির্মিত হচ্ছে ১০টি নতুন রোহিঙ্গা বস্তি

ঘুমধুম প্রতিনিধি:

মিয়ানমার সরকার বাহিনীর অত্যাচার ও নির্যাতনে বাংলাদেশের অভ্যান্তরে  অনুপ্রবেশ করা রোহিঙ্গারা কক্সবাজার ও বান্দরবান জেলায় কয়েকটি এলাকায় পাহাড় কেটে নতুন নতুন বস্তি গড়ে তুলছে।

ইতিমধ্যে ১০টি বিচ্ছিন্ন নতুন বস্তির অস্তিত্ব মিলেছে। স্থানীয় প্রভাবশালীদের সহযোগিতায় ইতোমধ্যেই তারা উখিয়া, টেকনাফ ও নাইক্ষ্যংছড়িতে নতুন করে ১০টি বস্তি গড়ে তুলেছে।

এসব এলাকায় এখন দিনরাত চলছে পাহাড়, বনজঙ্গল কেটে বাঁশ ও পলিথিনের ছাউনি দিয়ে ঘর তোলার কাজ। রোহিঙ্গারা প্রকাশ্যে এ তৎপরতা চালালেও স্থানীয় প্রশাসন বলছে তারা বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছে।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বলেছেন নতুন আসা রোহিঙ্গারা ইতোমধ্যে বনবিভাগের সাড়ে চারশ একর ভূমি দখল করে ফেলেছে। এর আগে গত বছর রোহিঙ্গারা দখল করেছিল প্রায় ৫০০ একরের বেশি খাস ও পিএফ জমি।

সরেজমিন পরিদর্শন ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়নের বালুখালী ঢালার মুখ, তাজনিরমাখোলা,  শফিউল্লাহ কাটা, হাকিমপাড়া,কুতুপালংয়ের টিভি রিলে উপকেন্দ্রের সংলগ্ন অংশ, টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়নের রইক্ষ্যং ও নাইক্ষ্যংছড়ি ঘুমধুমের বাঁশবাগান, চাকঢালা, জারুল ছড়ি, চিকন ঝিরি এলাকায় বনাঞ্চল সাবাড় করে গত কয়েকদিনে আসা রোহিঙ্গারা বস্তি গড়ে তুলছে।

এসব এলাকায় পাহাড়ি ভূমি দখল করে অন্তত এক লাখ রোহিঙ্গা বসবাস শুরু করেছে। তারা পাহাড় কেটে, বনজঙ্গল উজাড় করে বাঁশ ও পলিথিন দিয়ে তৈরি করছে নতুন ঘরবাড়ি। নতুন বস্তি হওয়ার খবর পেয়ে এসব এলাকার দিকে ছুটে যাচ্ছে অনুপ্রবেশকারী হাজারও রোহিঙ্গা।

এসব এলাকার পথে পথে এখন রোহিঙ্গা নারী-পুরুষের দীর্ঘ সারি। এদের কারও হাতে বস্তা, কুড়াল আবার কারও হাতে পলিথিন ও বাঁশ। অধিকাংশ নারীর কোলেই রয়েছে শিশু।

পাহাড় কেটে ঘর বানাচ্ছে রোহিঙ্গারা

এক রাতের ব্যবধানে এসব এলাকায় কয়েকটি পাহাড় ন্যাড়া করে ফেলেছে রোহিঙ্গারা। সেখানে বনের গাছপালা উজাড় করে,পাহাড় কেটে সমতল করছে তারা। যত দূর দেখা যায় পাহাড়ের চূড়ায়, পাদদেশে শত শত পলিথিনের ছাউনিযুক্ত ঘর।

কেউ ঘর তৈরি করে বিশ্রাম নিচ্ছে, কেউ নতুন ঘর গড়ার কাজ করছে। এসব ভূমি বনবিভাগের হলেও স্থানীয় প্রভাবশালীরা টাকার বিনিময়ে তা বরাদ্দ দিচ্ছে রোহিঙ্গাদের কাছে।

আগে থেকেই উখিয়ার কুতুপালং, বালুখালী, টেকনাফের নয়াপাড়া, লেদা ও শামলাপুর এলাকায় অবস্থিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত মিলে প্রায় দেড় লাখ রোহিঙ্গা বনবিভাগের জমির ওপর বসবাস করে আসছে।

টেকনাফ হোয়াইক্যং ইউনিয়নের পুটিবনিয়া বন বিভাগের জমিতে পাহাড় কেটে সমতল করে মাটিতে বাঁশ পোঁতার কাজ করছিলেন মিয়ানমারের মংডুর খেয়ারি প্রাং গ্রাম থেকে আসা গ্বী হোছন (৪২),ছালামত উল্লাহ (৫৪), ঢেকিবনিয়ার ফকির পাড়ার নুরুল বশর (৪০) ও গদুরা বাজারের মোঃ নবী (৫২) জানান, তারা পৃথক ভাবে পরিবারের সঙ্গে পাশেই মাটি সমতল করার কাজ করছিলেন তার পরিবারের আরও ৩ /৪জন করে সদস্য নিয়ে।

তাদের কয়েকজন অভিযোগ করে জানান, তারা পাশের এক চাকমার কাছ থেকে টাকা দিয়ে পলিথিন ও বাঁশ কিনেছেন। ওই বাঁশ ও পলিথিন দিয়ে যে ঘর তৈরি হবে তাতে তাদের প্রতি পরিবারের ৮ /১২জন সদস্য রাত কাটাতে পারবে।

এখানে প্রতিটি ঘর তৈরি হচ্ছে ৮ ফুট বাই ১০ ফুট আয়তনের। জমি দখলে রাখা স্থানীয়রা এমন ঘর তৈরির নির্দেশনা দিয়েছে বলে জানান ফরিদ মিয়া। থাকার অনুমতির জন্য জমির এসব কথিত মালিককে দিতে হয়েছে দুই হাজার টাকা করে।

পাহাড়ের পাদদেশে উঠছে রোহিঙ্গাদের ঘর
তিনি জানান, মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসার সময় তিনি জমানো সব অর্থ নিয়ে এসেছিলেন। ওই অর্থ বদলে বাংলাদেশি টাকা নিয়েছেন নৌকার মাঝির কাছ থেকে।

আগে মিয়ানমারের মুদ্রা ১৫ হাজার কিয়াটের বিনিময়ে বাংলাদেশের এক হাজার টাকা পাওয়া যেত। এখন বাংলাদেশি এক হাজার টাকা নিতে নৌকার মাঝিকে দিতে হয়েছে ৩৩ হাজার কিয়াট।

নাফ নদী পার করে দেওয়ার জন্য প্রতি দুজনের জন্য নেওয়া হয়েছে ১৫ হাজার কিয়াট করে। তারা এক গ্রাম থেকে ৭০ জন পালিয়ে এসেছেন। এপারে এসে আশ্রয়ের সন্ধান পেতে ইতোমধ্যে সঞ্চয়ের সব অর্থই শেষ হয়ে এসেছে।

পাহাড়ের চূড়া সমতল করে ঘর বানাচ্ছিলেন মিয়ানমারের মংডুর খেয়ামং গ্রাম থেকে আসা মো. রফিক (৪০) ও তার পরিবারের সদস্যরা। রফিক জানান, তিনি পরিবারের ১১ সদস্যকে নিয়ে পাঁচদিন আগে টেকনাফের ঝিমংখালী সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে বাংলাদেশে ঢোকেন। এরপর উখিয়ার বালুখালী অনিবন্ধিত শরণার্থী শিবিরে ছিলেন চারদিন।

দিনরাত চলছে রোহিঙ্গাদের ঘর বানানোর কাজ
উখিয়ার বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ব্যবস্থাপনা কমিটির চেয়ারম্যান লালু মাঝি বলেন, ‘বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্প ছাড়াও বালুখালী ঢালার মুখ নামক স্থানে নতুন করে আরও একটি বস্তি তৈরি হচ্ছে। এই ক্যাম্পে স্থান সংকুলান না হওয়ায় বর্তমানে ওই নতুন বস্তির দিকে অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের ঢল নেমেছে। ওই বস্তিতে এখন হাজার হাজার রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে।’

টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য জালাল আহমদ বলেন, ‘সীমান্ত পেরিয়ে গ্রামগুলোতে হাজার হাজার রোহিঙ্গা ঢুকছে। প্রতিদিন অসংখ্য নারী, পুরুষ ও শিশু এলাকার স্কুল, মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আশ্রয় নিচ্ছে। যেদিকে তাকাই সেখানেই রোহিঙ্গা আর রোহিঙ্গা। এসব রোহিঙ্গাদের জন্য ইউনিয়নের পুটিবনিয়া ও রইক্ষ্যং এলাকায় নতুন করে গড়ে উঠেছে বস্তি।’

স্থানীয় প্রভাবশালীরা টাকার বিনিময়ে রোহিঙ্গাদের জমি দিচ্ছে

উখিয়ার পালং ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মোজাফ্ফর আহমদ বলেন, ‘ইউনিয়নের তাজনিমার খোলা, হাকিমপাড়া, শফিউল্লাহ কাটা এলাকায় নতুন করে গড়ে উঠছে রোহিঙ্গা বস্তি।

স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা এসব বস্তিতে উঠার জন্য রোহিঙ্গাদের উৎসাহিত করছেন।’ এর আগে গত বছর বালুখালী পাহাড়ি এলাকায় নতুন করে কয়েকটি রোহিঙ্গা ক্যাম্প গড়ে তোলা হয়। সেখানে আর কোনও জায়গা না থাকায় নতুন এসব এলাকাকে বেছে নেওয়া হয়েছে।

ঘুমধুম ইউপির চেয়ারম্যান একেএম জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, মানবতার দোহাইয়ে বাঁশবাগানে  অস্থায়ী ঝুপড়ি করে কিছু রোহিঙ্গা বসবাস করছে।

রোহিঙ্গাদের নতুন করে বস্তি গড়ে তোলা প্রসঙ্গে কক্সবাজারের উখিয়ার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাঈন উদ্দিন বলেন, ‘আর কোথাও নতুন করে রোহিঙ্গা ক্যাম্প হতে দেওয়া হবে না।

গত এক সপ্তাহ ধরে উখিয়ায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা রোহিঙ্গাদের কুতুপুালং ও বালুখালী ক্যাম্প এলাকায় নিয়ে আসা হবে।’ টেকনাফ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) প্রণয় চাকমা বলেন,‘পুটিবনিয়া বনভূমিতে নতুন করে প্রায় ৪০ হাজার রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে। আমরা বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছি। এখনও এ বিষয়ে দাফতরিকভাবে কোনও কিছু বলা সম্ভব নয়।’

কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা আলী কবির বলেন, ‘এবার রোহিঙ্গাদের তৎপরতা একটু বেশি। স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তির সিন্ডিকেট রোহিঙ্গাদের আশ্রয়ের নামে নতুন করে বস্তি তৈরির চেষ্টা করছে। আমরা অভিযান চালিয়ে দুয়েকটি বস্তি উচ্ছেদও করেছি।

এসব এলাকায় উচ্ছেদ অভিযান চলমান রয়েছে।’ তিনি আরও  বলেন, ‘এখন পর্যন্ত সাড়ে ৪শ একর বনভূমি রোহিঙ্গাদের দখলে চলে গেছে। এছাড়াও পুরনো ক্যাম্পগুলোর দখলে রয়েছে ৬শ একর বনভূমি। এসব বনভূমি থেকে দখল উচ্ছেদ করতে না করতে নতুন করে রোহিঙ্গাদের ঢল পুরো প্রশাসনকে ভাবিয়ে তুলেছে।’

গত ২৪ আগস্ট মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে পুলিশ ও সেনা পোস্টে হামলা চালায় সে দেশের একটি বিদ্রোহী গোষ্ঠী। এতে ১২ পুলিশ সদস্য ও বহু রোহিঙ্গা হতাহত হয়। এর জেরে রাজ্যে অভিযানের নামে রোহিঙ্গাদের ওপর হত্যা, ধর্ষণ, বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগসহ কঠোর দমন-পীড়ন শুরু করে দেশটির সেনাবাহিনী।

এ কারণে প্রতিদিন পালিয়ে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিচ্ছে অসংখ্য রোহিঙ্গা। এর আগে গত বছরের ৯ অক্টোবর থেকে টানা দমন-পীড়ন চালায় সেনাবাহিনী। ওইসময় প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে আসে প্রায় ৮৭ হাজার রোহিঙ্গা। তারা কক্সবাজারের বিভিন্ন এলাকায় অবৈধভাবে পাহাড় কেটে বস্তি গড়ে তোলে বসবাস করছে।এবারও রোহিঙ্গারদের দখলে চলে গেল শতশত একর জমি। শংকিত এলাকাবাসীও।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন