উখিয়া, টেকনাফের সামাজিক বনায়ন রোহিঙ্গাদের দখলে: পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা

ঘুমধুম প্রতিনিধি:

কোনভাবেই বন্ধ হচ্ছেনা রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ। গত ২৫ আগস্ট থেকে গেল ৪ মাসে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে প্রায় ৮ লাখ রোহিঙ্গা। অন্যদিকে আগে থেকে অবস্থান করছিল আড়াই লাখ। সব মিলে ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে উখিয়া’র পাহাড়ি এলাকায়। আর এসব রোহিঙ্গারা পাহাড় কেটে ক্ষতবিক্ষত করে তৈরি করছে বসতি। এতে বৃক্ষ শূন্য হয়ে পড়েছে পাহাড়ি এলাকা। ফলে পরিবেশের উপর যেমন বিরূপ প্রভাব পড়েছে তেমনি পাহাড় ধ্বসে বড়ধরনের অঘটনের আশঙ্কা দিন দিন বাড়ছে। এমনটাই বলছেন পরিবেশবিদরা।

বনভূমির হিসাব অনুযায়ী গত ২৫ আগস্ট থেকে ৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত উখিয়ায় ৪ হাজার ২ শত একর পাহাড়ি এলাকায় বসতি স্থাপন করেছে রোহিঙ্গারা। আর তা অব্যাহত রয়েছে। এতে সম্পূর্ণভাবে দখলে যাচ্ছে পাহাড়ি এলাকা। শূন্য হচ্ছে বনভূমি।

পরিবেশবিদরা বলছেন, রোহিঙ্গাদের পাহাড় দখলের ফলে মারাত্বকভাবে ক্ষতি হচ্ছে পরিবেশের। এই ক্ষতির জন্য অপরিকল্পিত বসতি স্থাপনকেই দ্বায়ী করছেন তারা। এদিকে প্রকৃতি আর পরিবেশ সর্ম্পকে ধারনা না থাকা রোহিঙ্গারা বলছেন, আশ্রয়ের জন্য তারা পাহাড় কাটছে। অনেকে আবার অন্যের দেখাদেখি একই অপকর্ম করছেন।

উখিয়া কুতুপালং ক্যাম্পে’র রাবেয়া খাতুন নামে এক রোহিঙ্গা নারী জানান, কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই। তাই পাহাড় কেটে ঘর করেছেন। এছাড়া অন্যরাও একই কাজ করছে। বালুখালী ক্যাম্পের মফিজুর রহমান নামে আরেক রোহিঙ্গা জানান, মিয়ানমারের অত্যাচার থেকে প্রাণ বাঁচাতে এদেশে এসেছেন। এদেশ তাদের আশ্রয় দিয়েছে। কিন্তু পাহাড় কাটতে না বললেও তারা বাধ্য হয়ে পাহাড় কাটছে।

পাহাড় ধসের আশঙ্কা থাকার কথা জানতে চাইলে বলেন, পাহাড় ধস কখন হবে জানেননা আপাতত থাকতে হচ্ছে তাই পাহাড় কেটেছে। উখিয়া-টেকনাফের বেশিরভাগ পাহাড় এখন রোহিঙ্গাদের দখলে। যতই নতুন নতুন রোহিঙ্গা আসছে ততই পাহাড় দখলের পরিমান বাড়ছে বলে জানান, কক্সবাজার বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (দক্ষিন) মো. আলী কবির।

তিনি আরো জানান, পাহাড় কেটে অপরিকল্পিত বসতি স্থাপনের ফলে পাহাড় ধসে বড় ধরনের ক্ষয়-ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। পাহাড় কাটায় পরিবেশের ক্ষতির ব্যাপারে পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক সাইফুল আশরাফ জানান, পাহাড় কাটার ফলে মারাত্বকভাবে পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে। যত দ্রুত সম্ভব তা সমাধান করতে হবে। নয়ত বড় ধরনের অঘটন ঘটতে পারে।

রোহিঙ্গাদের পাহাড় নিধনের ফলে প্রতিবেশগত ভারসাম্য এখন হুমকির মুখে। এদিকে ইতিমধ্যেই প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে কক্সবাজারকে। যা রোধে দ্রুত উদ্যোগ গ্রহণ জরুরী বলছেন, পরিবেশবাদিরা।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন