উখিয়ায় ১৯ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে পুলিশের গায়েবী মামলা: দাবি বিএনপির

উখিয়া প্রতিনিধি:

উখিয়া থানায় উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান সোলতান মাহমুদ চৌধুরী সহ ১৯ জন বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল ও জামাতের শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে বিষ্ফোরক ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা দয়ের করা হয়েছে। গত বুধবার এসআই মো. ফারুক হোসেন বাদী হয়ে এ মামলাটি রুজু করেন। দায়ের কৃত মামলাকে গায়েবী মামলা দাবি করে বিএনপির নেতৃবৃন্দরা বলেছেন, এলাকায় কোন ঘটনা সংগঠিত না হওয়ার পরও শান্ত উখিয়ার রাজপথকে অশান্ত করার জন্য এধরনের আজগুবি মামলা দায়ের করা হয়ছে।

অতিরিক্ত জেলা পুলিশ সুপার (উখিয়া সার্কেল) মামলার সত্যতা নিশ্চিত করে বলছেন কয়েকজনকে এজাহার নামীয় ও ৪০ জনকে অজ্ঞাত নামা আসামি করে উখিয়া থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলাটি রুজু হয়। স্থানীয় জনগণ জানান, উল্লেখিত স্থানে কোন ঘটনায় সংগঠিত হয়নি। মামলার ঘটনা শুনে সবাই হতভম্ব হয়ে পড়েছে। সর্বত্র নেতা কর্মীদের মাঝে ক্ষোভ, উদ্বেগ ও উৎকন্ঠা পরিলক্ষিত দেখা দিয়েছে। সুশিল সমাজের নেতৃবৃন্দরা জানান, এধরনের মামলায় পুলিশের ইমেজ নষ্ট হওয়ার পাশাপশি সাধারণ জনগণ পুলিশের প্রতি বিশ্বাস হারাবে।

কক্সবাজার জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য শাহজাহান চৌধুরী মামলায় গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে দমন-পীড়ন ও নির্যাতন করার জন্য আওয়ামী লীগ সরকার পুলিশকে ব্যবহার করে গায়েবী মামলা দায়ের করেছে। পুলিশ যদি একের পর এক আজগুবি ও গাযেবী মামলা দায়ের করে তাহলে সাধারণ নিরাপরাধ লোক ও ভিন্ন মতের রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরা ঘর ছাড়া হওয়া ছাড়া কোন উপায় থাকবে না। আওয়ামী লীগ সরকার কৌশলে পুলিশকে ব্যবহার করে বিএনপি নেতা-কমীর্দেরকে দমন নির্যাতন চালাচ্ছেন। তিনি আরও বলেন, সরকার দলীয় পুলিশের উপর ভরসা করে আসন্ন সংসদ নির্বাচন কখনো বিএনপি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ আশা করতে পারে না।

উখিয়া থানায় দায়েরকৃত মামলায় এজাহারে উল্লেখ করা হয়, গত ৩১ অক্টোবর ভোর সকালে উখিয়ার জাদী মুড়া নামক স্থানের টেকনাফ সড়কে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে আদালতে সাজা দেওয়ার প্রতিবাদে নাশকতার উদ্দেশ্যে হাত বোমা (ককটেল) বিষ্ফোরন করে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনা স্থলে গিয়ে ৫টি ককটেল, ভাঙ্গা আয়নার কাঁচ ও কাটা তার জব্দ করে। এব্যাপারে এসআই বাদী হয়ে ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইন১৫(৩) যার মামলা নং- ২৬, তারিখ: ৩১-১০-২০১৮ইংরেজি।

এদিকে দায়েরকৃত মামলার এজাহারে আসামি করা হয়েছে, উখিয়া বিএনপির সভাপতি সোলতান মাহমুদ চৌধুরী, সহ সভাপতি নুরুল ইসলাম সিকদার প্রকাশ সালাম সিকাদর, উখিয়া যুবদলের সভাপতি আহাছান উল্লাহ, উখিয়া ছাত্রদলের আহবায়ক আরফাত হোসেন চৌধুরী সহ  বিএনপির নেতা শাহজান আলী, সাইফুল ইসলাম, আমির হামজা, বেলাল, মনিরুল ইসলাম, কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাবেক সভাপতির জামাতা উখিয়া জামাতের আমির মাওলানা আবুল ফজল, জামাত নেতা শাহব উদ্দিনও উখিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতির ছোট ভাই মো. কায়ছার সহ ১৯ জনের নাম উল্লেখ করা হয়।

উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান সোলতান মাহমুদ চৌধুরী জানান, মামলার এজাহারে যে ঘটনার কথা উল্লেখ করা হয়েছে ওই দিন ঘটনাস্থলে কিছুই সংঘটিত হয়নি। নিরপেক্ষ তদন্ত করলে মামলার বর্ণিত ঘটনার প্রমাণ কেউ করতে পারবে বলে আমার মনে হয় না। যাদেরকে স্বাক্ষী করা হয়েছে সবাই বহিরাগত। আমাদের বিরুদ্ধে পুলিশ বাদী হয়ে বিষ্ফোরক ধারায় যে মামলাটি দায়ের করেছে তা দুঃখ জনক। সভ্য সমাজে এধরনের কাণ্ডজ্ঞানহীন মামলা করায় পুলিশের প্রতি ঘৃণা ছাড়া আর কিছুই থাকবে না। আমি এর বিচার আল্লাহর উপর ছেড়ে দিলাম।

উখিয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান সরওয়ার জাহান চৌধুরী এক বিবৃতিতে জানান, সাধারণ সম্পাদক সোলতান মাহমুদ চৌধুরী সহ বিএনপি-জামাতের ১৯ জন নেতা-কর্মীকে আসামি করে দায়েরকৃত গায়েবী মামলাটি পুলিশের নগ্ন হস্তক্ষেপ। ভোট বিহীন সরকার পুলিশকে ব্যবহার করে সারাদেশের ন্যায় বিএনপিকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখতে হাজার হাজার মিথ্যা মামলা দিয়ে লক্ষ লক্ষ নেতা-কর্মীকে ঘর ছাড়া করছে। তিনি আরও বলেন, রোহিঙ্গা আশ্রয় নেওয়ার কারণে কর্মসচি শীতল করার জন্য কেন্দ্রীয় অফিসের নির্দেশ রয়েছে। আমরা গত ১বছর যাবৎ রাজ পথে কোন আন্দোলন সংগ্রাম কর্মসূচি পালন করি নাই। সুতারাং নাশকতার ঘটনায় যে মামলাটি করেছে তা রাজনৈতিক ভাবে হয়রানি করা ছাড়া আর কিছুই নই।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন