উখিয়ায় বন্যা কবলিত অর্ধলক্ষ বানভাসি মানুষের চরম দূর্ভোগ: খাবার সংকট

উখিয়া প্রতিনিধি:

কয়েকদিনের প্রবল বর্ষণ, পাহাড়ি ঢল  ও সমুদ্রের জোয়ারের পানিতে উখিয়ায় বন্যা পরিস্থিতির কারণে চরম দুর্ভোগের শিকার হয়েছে শত শত বানভাসি মানুষ। এ পযর্ন্ত বন্যার পানিতে ভেসে যাওয়া ও পাহাড় ধ্বসের ঘটনায় নিহত ৪জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। পুরো উপজেলার অধিকাংশ এলাকার প্লাবিত হয়ে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে অর্ধলক্ষ মানুষ। কক্সবাজার-টেকনাফ সড়ক যোগাযোগসহ অধিকাংশ গ্রামের রাস্তাঘাট ডুবে থাকায় সড়ক যোগাযোগ বন্ধ ছিল ১২ঘন্টার মত। এলাকার মৎস্যঘের, পানের বরজ, ক্ষেত-খামারসহ গবাদিপশুর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বন্যায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হলেও এখন পর্যন্ত উপজেলার কোথাও সরকারি পক্ষথেকে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ হয়নি বলে জানিয়েছেন বন্যার্ত মানুষ।

উখিয়া উপজেলা নির্বাহী মোহাম্মদ মাঈন উদ্দিন জানিয়েছেন, উখিয়ার বন্যা পরিস্থিতির অবস্থা ভয়াবহ। প্রতিটি এলাকায় পানি বৃদ্ধি পেয়ে সমগ্র এলাকা প্লাবিত হয়েছে। তিনি জানান, আমরা স্থানীয় চেয়ারম্যান মেম্বারদের সাথে যোগাযোগ করে এলাকার জনগণকে নিরাপদে সরিয়ে দেওয়ার কাজ চালিয়ে আশ্রয় কেন্দ্র গুলোতে নিয়ে গেছি। সাইক্লোন সেন্টার ও স্কুল গুলোতে বন্যার আক্রান্ত জনগণকে সরিয়ে নেওয়াসহ প্রতিটি এলাকার ব্যাপারে আমরা সজাগ দৃষ্টি রাখছি। এলাকার জনগণের প্রাণ রক্ষার ব্যাপারে যা যা করনীয় সবকিছু করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে উখিয়ার বন্যার ব্যাপারে জেলা প্রসাশক মহোদয়কে অবহিত করা হয়েছে।

জানা গেছে, গত কয়েকদিন থেমে থেমে বৃষ্টিপাত হলেও বুধবার ভোররাত থেকে উখিয়ায় বিরামহীন একনাগাড়ে বৃষ্টি হতে থাকে। এতে পুরো উপজেলার বানের পানিতে ব্যাপকভাবে প্লাবিত হয়ে ধ্বসে পড়েছে এলাকার শত শত মাটির ঘরবাড়ি। বন্যার পানি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের স্রোতে ভেসে গিয়ে নিখোঁজ ২ শিক্ষার্থীর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। নিহতরা হলেন, উপজেলার জালিয়া পালং ইউনিয়নের সোনাই ছড়ি এলাকার জাফর আলমের মেয়ে আয়েশা সিদ্দিকা দাখিল মাদ্রাসার ৭ম শ্রেণির ছাত্রী ছামিরা আক্তার (১৪) ও রত্নাপালং ইউনিয়নের মধ্যরত্না এলাকার অমূল্য বড়ুয়ার ছেলে পালং আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণির ছাত্র ইতন বড়ুয়া (১৪)। নিহতদের উদ্ধারের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন, জালিয়াপালং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুরুল আমিন চৌধুরী।

তিনি বলেন, নিহত মাদ্রাসা ছাত্রী ছামিরার লাশ রেজুখাল থেকে দুপুরের দিকে উদ্ধার করা হয়। রত্নাপালং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান খাইরুল আলম চৌধুরী জানান, বন্যার স্রোতে ভেসে যাওয়া ইতন বড়ুয়া। এদিকে বুধবার সন্দ্যার সময় রত্নাপালং ইউনিয়নের সাদৃকাটা নামক এলাকায় বন্যার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় মাঠ থেকে গরু আনতে গিয়ে বন্যার পানি দেখে হৃদক্রিয়া বন্ধ হয়ে মো. ইসলাম সাওদাগর (৫৫) নামে একব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে বলে নিহতের পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে। পালংখালী ইউপি চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী জানিয়েছেন, বুধবার রাত ৮টার দিকে ইউনিয়নের আঞ্জুমানপাড়া এলাকায় পাহাড় ধ্বসে পড়ে শাহারিয়ার বাপ্পি নামের এক শিশু মারা গেছে। লাশ উদ্ধার করে বৃহস্পিবার সকালে শিশুটিকে দাপন করা হয়েছে। তিনি আরও জানান, ইউনিয়নের রাস্তাঘাট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, চিংড়ি ঘের সহ বন্যায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

পানিবন্দি হয়ে পড়েছে রত্নাপালং ইউনিয়নের পশ্চিম রত্না, সাদৃকাটা, খোন্দকার পাড়া, ভালুকিয়াপালং, গয়ালমারা, চাকবৈঠা, রাজাপালং ইউনিয়নের হাজীর পাড়া, মৌলভীপাড়া, মালিভটা, ঘিলাতলী, হরিণ মারা, হারাশিয়া, হিজলিয়া, তুতুরবিল, মধ্যম রাজাপালং, ডিগিলিয়া, বড়ুয়া পাড়া, পাতাবাড়ি,  হিন্দুপাড়া, হরিনমারা, দুছড়ি, উত্তর পুকুরিয়া, সিকদারবিল, পালংখালী ইউনিয়েনের রহতের বিল, ধামনখালী, আঞ্জুমানপাড়া, পশ্চিম পালংখালী, হলদিয়া পালং ইউনিয়েন চৌধুরী পাড়া, রুমখাপালং, বড়বিল, পাগলির বিল, জালিয়াপালং ইউনিয়নের লম্বরী পাড়া, পাইন্যাশিয়া,  সোনাইছড়ি সহ বেশ কয়েকটি গ্রাম সহ প্রায় ৪৫টিরও অধিক গ্রামের মানুষ এখনও বন্দি অবস্থায় রয়েছে।

তাছাড়া উপজেলার বিভিন্ন বাজারের শতাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ সহশ্রাধিক বাড়িঘর, স্কুল-মাদ্রাসা ও অফিস-আদালত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বর্ষণের ফলে কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল প্রায় ১২ঘন্টা মত। কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কের যান চলা চল মোটামোটি স্বাভাবিক হলেও গ্রামীণ সড়ক গুলোর অবস্থা ভয়াবহ আকার ধারন করেছে। কাদা মাটির কারণে জনচলাচল অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ভারী বর্ষণ অব্যহত থাকায় পাহাড় ধ্বসের আশঙ্কায় সতর্ককতাজারী করেছে উপজেলা প্রশাসন। পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় বসবাসকারীদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যেতে সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী অফিসার পক্ষ থেকে মাইকিং করা হয়েছে।

চেয়ারম্যান খাইরুল আলম চৌধুরী ও চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী জানান, এবারের বন্যায় গ্রামীণ সড়ক গুলো লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে। চেয়ারম্যান নুরুল আমিন চৌধুরী বলেন, সাগরের জোয়ারের পানি প্রবেশ করায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় উপকূলীয় গ্রাম গুলো। উপজেলা চেয়ারম্যান সরওয়ার জাহান চৌধুরী বন্যা কবলিত পরিবার গুলোকে দ্রুত পুন:বাসন ও ত্রাণ সামগ্রী বিতরণের দাবি জানান। চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, এবারে বানের পানিতে মৎস্য ঘের গুলো ডুবে যাওয়ায় লক্ষ লক্ষ টাকার মাছ ভেসে গেছে। ব্যবসায়ীরা জানান, কোটবাজার স্টেশনে হাটু পরিমান পানি ঢুকে পড়ায় অসংখ্য দোকানের মালামাল নষ্ট হয়ে খাবার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।

এদিকে সরকারি ভাবে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা না হলেও ব্যক্তি পর্যায়ে অনেকে বন্যার্তাদের সাহার্য্যে হাত বাড়িয়েছে। সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মাহমুদুল হক চৌধুরী নৌকা যোগে পানিবন্দি পরিবার গুলোকে খিচুড়ি সহ শুকনা খাবার বিতরণ করেছে বলেও জানা গেছে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন