উখিয়ায় চিংড়ি ঘের নিয়ে সংঘর্ষ আহত-১: অর্ধশত রাউণ্ড গুলিবর্ষণ: আহত ১৫

গুলিবর্ষণ

কক্সবাজার প্রতিনিধি ॥
কক্সবাজারের উখিয়ায় চিংড়ি ঘেরের বিরোধ নিয়ে ঘণ্টাব্যাপী বন্দুক যুদ্ধে পুলিশ ও বিজিবির ছোড়া গুলিতে অন্তত ১৫ জন নারী-পুরুষ আহত হয়েছে। এ সময় পুলিশের গুলিতে ৫ জন গুলিবিদ্ধ হয়ে আশংকাজনক অবস্থায় রয়েছে। আহতদের স্থানীয় বিভিন্ন প্রাইভেট ক্লিনিকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। উত্তেজিত হাজার হাজার চিংড়ি ঘের মালিক পুলিশের ও ওয়াক্ফ স্টেটের মোতওয়াল্লি সোহেল মোস্তফা চৌধুরীর দু’টি নোহা গাড়ী ভাংচুর করে। জনতার রোষানল থেকে পালিয়ে কোন মতে রক্ষা পেয়েছে পুলিশ ও বিজিবি সদস্যরা।

আজ শুক্রবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে পালংখালী আঞ্জুমান পাড়া সড়কের করাচি পাড়া এলাকায় ঘটনাটি ঘটেছে।

প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মৌলভী আবদুল ওয়াক্ফ এস্টেটের মোতাওয়াল্লী লতিফ আনোয়ার চৌধুরীর নিকট থেকে প্রায় ৬০ লক্ষ টাকা দিয়ে ৯শ ৫০ একর জমির ১৪টি চিংড়ি ঘের লাগিয়ত হিসেবে দু’ বছরের জন্য লীজ নেয়। সম্প্রতি মোতাওয়াল্লী পরিবর্তন হয়ে সোহেল মোস্তফা চৌধুরীর নতুন মোতাওয়াল্লী নিয়োগ হয়। মোতাওয়াল্লী পরিবর্তন হওয়ায় চিংড়ি ঘের লীজ নেওয়া প্রান্তিক চাষীরা তাদের চিংড়ি ঘের এবং টাকা ফেরত না দিয়ে অন্যত্রে লাগিয়ত করার গভীর ষড়যন্ত্রে মেতে উঠে।

চাষীরা এ খবর পেয়ে আজ শুক্রবার ভোর ৭টা থেকে পালংখালী আঞ্জুমান পাড়া সড়কের বিভিন্ন মোড়ে হাজার হাজার নারী-পুরুষ জড়ো হয়ে অবস্থান নেয়। এক পর্যায়ে মোতাওয়াল্লী সোহেল মোস্তফা চৌধুরী থানা পুলিশ ও বিজিবি নিয়ে এলাকায় ঢুকতে চাইলে চাষীরা তাদের গতিরোধ করে তাদের ন্যায্য পাওনার দাবীতে নতুন মোতাওয়াল্লীদের অবরুদ্ধ করে। এ সময় উদ্ধুদ্ধ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে আত্মরক্ষার্থে পুলিশ ও বিজিবি প্রায় অর্ধশত রাউন্ড গুলি ছুড়ে।

এ সময় পুলিশ ও বিজিবির গুলিতে আজিজুর রহমান প্রকাশ কালা চান (২৮), সুলতান (৩২), একরাম (৩০), ছগির আহমদ লালু (৩৫), শামশুন্নাহার (২৫), আয়েশা (৩০), মনোয়ারা (৩৩), জানুয়ারা (২২), ছরওয়ারা বেগম (৪০), ছেনুয়ারা (৩২), হাজেরা বেগম (৪৫), লায়ল (৪২), আনোয়ারা সহ অন্তত ১৫ জন আহত হয়। আহতদের স্থানীয় বিভিন্ন প্রাইভেট ক্লিনিকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে বলে পালংখালী ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি জাফরুল ইসলাম জানিয়েছেন।

সুলতান আহমদ জানান, সোহেল মোস্তফা চৌধুরী গ্রুপের নেতৃত্বে জেলা সভাপতি আলী আহমদ ও আওয়ামীলীগ নেতা মঞ্জুরের নেতৃত্বে মহেশখালীর এনাম বাহিনী ও রোহিঙ্গা শিবিরের অস্ত্রধারী অর্ধশতাধিক সন্ত্রাসী স্থানীয় চাষীদের প্রায় ১০টি বসত বাড়ী ভাংচুর ও লুটপাট চালায়।

এ ঘটনায় উভয় পক্ষ থানায় পৃথক অভিযোগ দায়ের করেছে বলে থানা সূত্রে জানা গেছে। উখিয়া থানার ওসি (তদন্ত) হাবিবুর রহমান পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ আত্মরক্ষার্থে ফাঁকা গুলি ছুড়ার কথা স্বীকার করেছেন এবং পৃথক মামলা রুজু হচ্ছে বলে তিনি জানান।

উল্লেখ্য প্রান্তিক চিংড়ী ঘের চাষী সুলতান আহমদ ও জামাল হোসেন গত ১৬ অক্টোবর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক বরাবরে তাদের ন্যায্য পাওনা আদায়ের দাবীতে একটি অভিযোগ দায়ের করলে ২৬ অক্টোবর বৈঠকের মাধ্যমে বিষয়টি নিস্পত্তি করার জন্য সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু স্থানীয় কতিপয় ষড়যন্ত্রকারী ও এস্টেটের মোতাওয়াল্লীর যোগসাজসে বিভিন্ন বাহনা দিয়ে চাষীদের দু’দফায় প্রায় ১কোটি ৩০ লাখ টাকা আতœসাতের পায়তারায় মেতে উঠে। ইতিপূর্বে উক্ত ওয়াক্ফ এস্টেটের মোতাওয়াল্লী জহিরুল ইসলাম ও লতিফ আনোয়ার চৌধুরী প্রায় ৮৫ লাখ টাকা নিয়ে গা ঢাকা দেয়। আগামী ৪ নভেম্বর উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ সাইফুল ইসলামের কার্যালয়ে উভয় পক্ষকে নিয়ে বৈঠকের কথা রয়েছে। কিন্তু এ সিদ্ধান্তের আগে নতুন মোতাওয়াল্লী তড়িগড়ি করে এস্টেট পরিচালনা করতে গেলে গতকাল চিংড়ি চাষীদের বাধার মূখে অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন