উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আটকের পর ১০জনকে কারাগারে প্রেরণ

উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আটক ২৬, পাঁচ বিদেশি নাগরিককে মুছলেখা নিয়ে ছেড়ে দিয়েছে ১১জনকে, সাজা ও ১০জনকে কারাগারে প্রেরণ।

উখিয়া প্রতিনিধি:

কক্সবাজারের উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্প সমূহে সরকারি নির্দেশ উপেক্ষা করে বিতর্কিত কার্যক্রম ও সন্দেহজনক চলাফেরার অভিযোগে বিদেশি নাগরিকসহ ২৬ ব্যক্তিকে আটক করেছে পুলিশ। গত সোমবার(৬ নভেম্বর) রাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ৫জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে যৌথ অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গভীর পাহাড়ি অরন্য থেকে আটক করা হয়। উখিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আবুল খায়ের সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, আটকের মধ্যে ৪জন কানাডিয়ান ও ১জন চায়নিজ নাগরিক রয়েছে। অবশিষ্টরা নরসিংদী, চুয়াডাঙ্গা, ফেনী, টেকনাফের বাসিন্দা।

উখিয়া থানার (ওসি) আরো জানান, আটকের মধ্যে ১০জনকে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে অর্থদণ্ডের মাধ্যমে সাজা দেওয়া হয় সেই সাথে ১১জনকে ৫৪ ধারায় আদালতে প্রেরন করে। তাদের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির অভিযোগ আনা হয়। তৎমধ্যে মুছলেকা নিয়ে বিদেশি ৫জন নাগরিককে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন জানান, জেলা প্রশাসনের অনুমতি ব্যতীত রেখে ও প্রচলিত আইন অমান্য করেই রাতে রোহিঙ্গা ক্যাম্প সমূহে দেশি-বিদেশি সন্দেহভাজন লোকজন অবস্থান করে থাকেন। ‘বিশেষ উদ্দেশ্যে’ এসব ব্যক্তি ক্যাম্পে অবস্থান নেয়ার গোপন সংবাদ ছিল প্রশাসনের কাছে। তাই অভিযানে নেমে এসব লোকজনদের আটক করে প্রশাসন। ‘

জেলা প্রশাসক আরো জানান, দেশি-বিদেশি কিছু লোক রোহিঙ্গা ইস্যুকে কেন্দ্র করে দেশের প্রচলিত আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানোর অপচেষ্টা চালানোর সু-নির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে। এমনকি উখিয়া উপজেলার পালংখালী ইউনিয়নের আঞ্জুমান পাড়া নামের সীমান্তবর্তী একটি এলাকায় নাফনদী তীরে একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার লোকজন কর্তৃপক্ষের কোন অনুমতি ছাড়াই চলাচলের সুবিধার জন্য অস্থায়ী সেতু স্থাপনের কাজও শুরু করেন। জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা বিনা অনুমতিতে নির্মাণাধীন ওই সেতুর কাজ গত সোমবার বন্ধ করে দিয়েছেন।

কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের গহীনঅরন্য এলাকা লম্বাশিয়া ডি-৪ এলাকার বস্তি হিসেবে পরিচিত আস্তানায় অভিযান পরিচালনা করা হয়।

অভিযানের নেতৃত্ব থাকা কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) খালেদ মাহমুদ  জানান, এমন পাহাড়ি এলাকায় এত রাতে বিদেশি নাগরিকদের ঘুরাঘুরি দেখতে পায়। তাদের নিজেদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে হলেও এত রাতে এখানে অবস্থান করার কথা নয়। ‘এসব বিদেশি নাগরিকদের রাতের বেলায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অবস্থানের সরকারের পররাষ্ট্র এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়েরও কোনো অনুমতির কাগজপত্র নেই। এমনকি জেলা প্রশাসনের কোনো কর্মকর্তারও নিকট জানা নেই রাত ১১টায় বিদেশি নাগরিকগণের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অবস্থানের কথা।

অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট খালেদ মাহমুদ আরো জানান, ২ ঘণ্টার অভিযানে তারা ৫জন বিদেশি নাগরিককে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অভ্যন্তরে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে এবং অলিগলিতে সন্দেহভাজন ঘুরাফেরার কারণে হাতেনাতে আটক করে। এসব বিদেশিদের মধ্যে রয়েছেন ১জন চায়নার নাগরিক এবং অপর ৪জন কানাডিয়ান নাগরিক। তাদের কারো কাছে বাংলাদেশ সরকারের যথাযথ কর্তৃপক্ষের কোনো অনুমতি নেই রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অবস্থানের জন্য।

এমনকি তারা সীমান্তবর্তী এলাকা তদুপরি রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মতো একটি স্পর্শকাতর পাহাড়ি এলাকায় অবস্থান করার কোনো যুক্তিসঙ্গত কারণও দেখাতে পারেননি। এ কারণে বিদেশি নাগরিকদের সঙ্গে আচরণবিধি মেনে লিখিত কাগজ নিয়ে তাদেরকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

অভিযানে থাকা পুলিশের উখিয়া-টেকনাফ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার চাইলাউ মারমা বলেছেন, সন্ধ্যার পর থেকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বাইরের কোনো লোকজনের প্রবেশ নিষিদ্ধ করার ঘোষণা গত দুই মাস ধরেই মাইকিং করে জানানো হচ্ছে।

তবুও রাতে অভিযানের সময় দেখা গেছে, বিপুল সংখ্যক লোকজন ক্যাম্পের স্থানীয় বস্তি, দোকান-পাট ও মসজিদ-মাদ্রাসার ছাউনি থেকে পুলিশ দেখে ছুটাছুটি করে পালাচ্ছিলেন। তবুও ধাওয়া দিয়ে অল্প সময়েই ৪জন রোহিঙ্গাসহ ১৯জনকে আটক করা হয়। আটক হওয়া লোকজনের মধ্যে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আগত লোকজন এনজিও’র ছদ্মাবরণে এসব এলাকায় ঘাপটি মেরে অবস্থান নিয়েছিলেন।

এ বিষয়ে উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো নিকারুজ্জামান রবিন চৌধুরী জানান, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অভ্যন্তরে এনজিও কর্মী পরিচয়ে রোহিঙ্গাদের মাঝে নানা উস্কানিমূলক অপপ্রচারের অভিযোগও রয়েছে। এমনকি অনেক এনজিও সরকারের যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়ই রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নানা ধরনের কাজে জড়িত থাকার অভিযোগের কথাও শুনেছেন বলে জানান তিনি। অভিযানে কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প ইনচার্জ রেজাউল করিম, উখিয়া থানার অফিসার ইনচার্জসহ ৫জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, বিপুলসংখ্যক পুলিশ ও আনসার অংশগ্রহণ করেন।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন