ঈদের ছুটিতে খাগড়াছড়িতে পর্যটকদের ভীড়: দেশের বিরাজমান অবস্থায় পর্যটকদের মাঝে হতাশা

khagrachari tourist story pic 04 12-08-13.doc

মুহাম্মদ আব্দুল হালিম, খাগড়াছড়ি:

খাগড়াছড়ি পর্যটন স্পটগুলোর চারপাশে এখন শুধু ভ্রমন পিপাসু মানুষ। মুসলিমদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব হলেও এখন পাহাড়ী-বাঙালী সকলেই এ ঈদ আনন্দে পর্যটনে ভীড় করছে। এ যেন পাহাড়ী-বাঙ্গালীর সম্প্রীতির মিলনমেলা বসেছে। কিন্তু দেশের সরকার ও বিরোধীদলের বর্তমান রাজনৈতিক বিষয়ে একে অপরকে ছাড় না দেওয়ার প্রেক্ষাপটে চলমান রাজনৈতিক সংকট নিয়ে পর্যটকদের মাঝে দেখা দিয়েছে হতাশা। তাদের মনে শঙ্কা কখন যেন কি হয়ে যায়। এছাড়া হরতাল অবরোধসহ নানা রাজনৈতিক কর্মসূচী দেখে অনেক পর্যটকেরা এবার ঈদের আনন্দে ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। তাই অন্যবারের তুলনায় এবার খাগড়াছড়িতে পর্যটকের আগমন একটু কম।

চট্টগ্রাম জেলার সাতকানিয়া থেকে বেড়াতে আসা প্রবাসী জসিম উদ্দিন জানান, উঁচু উঁচু সবুজ বেষ্টিত পাহাড় আর প্রাকৃতিক সুড়ঙ্গ দেখে আমি মুগ্ধ। আল্লাহর এ নির্দশন দেখে মুগ্ধ হলেও বর্তমান দেশের প্রচলিত রাজনৈতিক সমস্যা নিয়ে চরম হতাশায় আছি। মনের আনন্দে অনেকটা ভাটা পড়েছে। আলুটিলার রহস্যময় সুরঙ্গ পর্যটকদের জন্য আরেকটি আকর্ষণ। পাহাড়ঘেরা এই প্রাকৃতিক সুরঙ্গ দিয়ে একাকী ভ্রমন করতে যে কারো ভয় লাগবে। এর একটু সামনে অগ্রসর হলেই চোখে পড়বে পর্যটকদের আকর্ষনের জায়গা রিছাং ঝরনা। আকাঁ বাকাঁ রাস্তা আর পাহাড় পাড়ি দিলে চোখে পড়বে এ ঝরণার। দূর থেকে আসা পর্যটকরা পাহাড়ী পথে হাটাঁর অভ্যাস নেই বলে রাস্তার বিভিন্ন জায়গায় বসে বসে বিশ্রাম করছে। এক পাহাড়ের উপর থেকে শোনা গেলো উৎসুক মানুষের চিৎকারের আওয়াজ। ঝরণায় গিয়ে দেখা গেল সবার আনন্দে চিৎকার চেচাঁমেচী আর বাধঁ ভাঙ্গা উচ্ছাস।

৪০ ফিট উপর থেকে সবুজ আর পাহাড়ের বুক চিড়ে পড়া পাথরের উপর পড়া ঠান্ডা পানিতে চরকি খাচ্ছে সব বয়সের মানুষ। কেউ ঝরণায় চরকি খেয়ে বা ভিজে আনন্দ পাচ্ছে। আবার কেউ তা দেখে মজা পাচ্ছে। চন্দনাইশ গাছবাড়িয়া সরকারী কলেজ থেকে এইচএসসি কৃতকার্য ছাত্রী ইসমত আরা বেগম জানান, খাগড়াছড়ির রিছাং ঝর্নািএমন একটি প্রাকৃতিক নির্দশন যা দেখে মনের আনন্দে দোলা দিয়েছে। এছাড়া ঝুলন্ত ব্রিজ দেখে আরো বেশি ভাল লেগেছে। অবসর সময়ে বার বার এসব প্রাকৃতিক পরিবেশে ঘুরতে আসলে সত্যিই ভাল লাগবে।

চেঙ্গী, মাইনী আর ফেনী নদী বিধৌত পর্যটন শহর খাগড়াছড়ি। চারিদিকে অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, সবুজ পাহাড়, এবং ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বৈচিত্র্যময় জীবন-সংস্কৃতির কারণে এমনিতেই পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে এ জেলা। আলুটিলার প্রাকৃতিক রহস্যময় গুহা, রিছাং ঝর্না, হেরিটেজ পার্ক, পানছড়ির অরণ্যকুটির, দেবতা পুকুর-সবই দেশের মনোরম পর্যটন স্পটগুলোর মধ্যে অন্যতম। তৈদুছড়া ঝর্নাটি পর্যটকদের কাছে বেশ আলোচিত হয়ে উঠেছে। সেখানে অনেক কিছুই রোমাঞ্চকর। বড় দুটি ঝরনা, জলপ্রপাতের মত জল প্রবাহ; ছাড়াও দেখার মত আছে আরো অনেক কিছু। এসবকে ঘিরে দেশের অন্যতম বৃহৎ পর্যটন কেন্দ্র গড়ে উঠার সম্ভাবনার কথা বলেন সেখানে যাওয়া দেশী-বিদেশী পর্যটকরা। এছাড়া খাগড়াছড়ি সদরের আলুটিলার রিছাংঝর্না যাতায়াতে সুবিধা হওয়ায় সবসময় পর্যটকে মুখর থাকে। জেলার বাইরের পর্যটকরা ঝর্না দেখে মুগ্ধ।

ঢাকা বা চট্টগ্রাম থেকে সরাসরি বাসে বা প্রাইভেট গাড়ীতে করে আসা যায় খাগড়াছড়ি। পরিবহন টার্মিনাল বা শহরের যে কোন স্থানে নামলে রিক্সা-অটোরিক্সায় শহরের প্রাণকেন্দ্র শাপলা চত্বর আসতে সময় লাগবে সর্বোচ্চ ৫ মিনিট। এখান হতে উল্লেখিত পর্যটন স্পটগুলোতে যাওয়া যায় সহজেই। কোথাও অটোরিক্সা, সিএনজি, চাঁদের গাড়ী কিংবা প্রাইভেট গাড়ীতে।

ঢাকা উত্তরা থেকে বেড়াতে আসা রোকসানা আক্তার জানান, খাগড়াছড়ির পাহাড় নদীনালা অনেক সুন্দর। বিশেষ করে রহস্যময় আলুটিলা সুড়ঙ্গ যা না দেখলে বর্ননা করা কঠিন। এদিকে ঈদ আর পর্যটকদের আনাগোনার কথা মাথায় রেখে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে পুলিশ। বিভিন্ন পর্যটনী এলাকা গুলো ছাড়া শহরেও অতিরিক্তি পুলিশ মোতায়ন করা হয়েছে । খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক মাসুদ করিম জানান, পর্যটকদের সুবিধার জন্যে আলুটিল্ পর্যটন কেন্দ্রেসহ সকল স্থরে পর্যাপ্ত নিরাপত্ত্বা ব্যবস্থা সর্বদা রয়েছে। পর্যটন কেন্দ্রে সমূহে আরো আকর্ষনীয় করতে পর্যটন মন্ত্রানলয়ের কাছে আবেদন করা হচ্ছে। পর্যটনের উন্নয়নে কোটি টাকার প্রয়োজন জেলা প্রশাসকের পক্ষ্যে এতো টাকা বিনোয়োগ করা কঠিন।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন