Notice: Trying to get property 'post_excerpt' of non-object in /home/parbatta/public_html/wp-content/themes/artheme-parbattanews/single.php on line 53

Notice: Trying to get property 'guid' of non-object in /home/parbatta/public_html/wp-content/themes/artheme-parbattanews/single.php on line 55

ইতি চাকমা খুনের তদন্তে পুলিশ : আলোচনায় প্রেম পরকীয়া : আটক ১ : ফেসবুকে অপপ্রচার

গণতোষ চাকমাফলোআপ

পার্বত্যনিউজ রিপোর্ট::
খাগড়াছড়িতে কলেজ ছাত্রী ইতি চাকমার খুনের নেপথ্যে প্রেম, পরকীয় না অন্য কিছু রয়েছে এ নিয়ে রীতিমত নানা প্রশ্ন দানা বাধতে শুরু করেছে বিভিন্ন মহলে। শুরু থেকে এ হত্যাকাণ্ডে কতিপয় মহল নানা রং ছড়ানোর অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও এ নিয়ে নানা অপপ্রচার চলছে। এমনকি বাংলাদেশ ছাড়িয়ে পার্শ্ববর্তী দেশের চাকমা পেইজগুলোর আলোচনায় স্থান পেয়েছে ইতি চাকমা। ভারতে অবস্থানকারী চাকমাদের ফেসবুক পেইজে এ হত্যাকাণ্ডের জন্য বাঙালিদের দায়ী করে পোস্ট প্রকাশিত হয়েছে।

পুলিশ এখনো পর্যন্ত এ হত্যাকাণ্ডের মূল রহস্য উদঘাটনে অনেকটাই অন্ধকারে। তবে নিহতের দুলাভাইয়ের দেয়া তথ্যের সূত্র ধরে গণতোষ চাকমা নামে সন্দেহজনক একজনকে পুলিশ আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে।
সোমবার(২৬ ফেব্রুয়ারি) রাতে খাগড়াছড়ি শহরের আরামবাগ এলাকায় খুন হয় কলেজ ছাত্রী ইতি চাকমা। তাকে ধারালো দা দিয়ে গলা কেটে দিয়ে হত্যা করা হয়। ভগ্নিপতির ভাড়া বাড়িতে এই ঘটনা ঘটে।

ইতি চাকমা জেলার দীঘিনালা উপজেলার ছনখোলাপাড়ার মৃত অন্ত্ররেন্দ্রীয় চাকমার কন্যা। তবে সব কিছু মিলে স্থানীয় আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রাথমিক সন্দেহের তীর কিন্তু ভগ্নিপতি ও একটি উগ্র আঞ্চলিক সংগঠনের দিকে।

Khagrachari Pic 10

সরেজমিন তদন্তে জানা গেছে, খাগড়াছড়ি শহরের আরামবাগ এলাকায় বাবুল নাগের বাসায় গত ছয় মাস ধরে ভাড়া থাকেন অটল চাকমা। এখানে ভগ্নিপতির বাড়িতে থেকে কলেজে পড়াশোনা করতো ইতি চাকমা।এর আগে থাকতেন জেলাশহরের মধুপুরে। স্ত্রী জোনাকি চাকমা দীঘিনালা উপজেলার বানছড়া আনন্দময় সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা।

স্ত্রী জোনাকি চাকমা জানান, তিনি বিদ্যালয় খোলা থাকলে কর্মস্থলে চলে যান এবং দীঘিনালায় বাপের বাড়ীতে থেকে বিদ্যালয়ে আসা যাওয়া করেন। বিদ্যালয় বন্ধ থাকলে তার খাগড়াছড়ি আসা হতো। জোনাকি চাকমার অনুপস্থিতিতে ভগ্নিপতি ও ইতি চাকমা ঐ বাসায় থাকতেন। হত্যাকান্ডের সময়ও জোনাকি চাকমা দীঘিনালায় বাপের বাড়ীতে এবং দুলাভাই ও শালিকা ঐ বাড়িতে ছিলেন। বোনের মৃত্যুর খবর পেয়ে ঐদিন রাতেই খাগড়াছড়ি আসেন জোনাকি।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মাসুদ আলম চৌধুরীর মতে, একার পক্ষে এ হত্যাকাণ্ড সম্ভব নয়। হত্যাকারীরা একাধিক ও পূর্ব পরিচিত হতে পারে। লাশের প্রাথমিক অবস্থা দেখে ধারণা করা হচ্ছে, ইতি চাকমাকে হত্যার আগে নেশা জাতীয় মেশানো কিছু খাওয়ানো হতে পারে এবং মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্যে গলা কাটা হতে পারে। কারণ লাশ যে অবস্থায় পড়ে ছিল তা দেখে তাই মনে হয়েছে।

তিনি আরো জানান, বাবুল নাগের এক তলার ঐ বাসায় আরো ১৩টি পরিবার ভাড়া থাকেন। দুই লেনের বাসার মাঝখানে উঠোন। বাসায় ঢুকার গেইট মাত্র একটি। এলাকাটি খুবই নিরাপদ এলাকায়। বাইরের অপরিচিত কেউ আসলে কেউ না কেউ দেখার কথা।

মমম

ইতি চাকমা হত্যাকান্ডের পরপরই পুলিশ ও মিডিয়াকর্মীদের অটল চাকমা জানান, বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে তিনি শালিকা ইতি চাকমাকে বাসায় একা রেখে বাইরে যান। রাত ৯টার দিকে বাসায় ফিরে খাটের উপর শালিকার রক্তাক্ত লাশ দেখতে পান।

কিন্তু একদিন পর অটল চাকমা পুলিশকে জানান, ২৬ ফেব্রুযারি রাতে গণতোষ চাকমা নামে এক ব্যক্তি তার সাথে রাত্রী যাপন করেছিলেন। সকালে কাজে বেরিয়ে যান তিনি এবং বিকালে বাসায় আসেন। বিকালে গণতোষ চাকমাকে বাসায় রেখে বেরিয়ে যান। এ সময় শালিকা ইতি চাকমা বাসায় ছিল। রাতে বাসায় ফিরে শালিকার রক্তাক্ত লাশ দেখতে পেলেও গণতোষ চাকমাকে পাওয়া যায়নি।

খাগড়াছড়ি সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তারেক মোহাম্মদ হান্নান জানান, অটল চাকমার কাছ থেকে পাওয়া এ সব তথ্যের ভিত্তিতে মঙ্গলবার রাতে বেশ কয়েকটি স্থানে অভিযান চালিয়ে গণতোষ চাকমাকে আটক করা হয়েছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে ৭ দিনের রিমাণ্ড চাওয়া হয়েছে। আদালত আগামীকাল শুনানীর দিন ধার্য করায় গণতোষ চাকমাকে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, গণতোষ চাকমার আসল নাম অমর কান্তি চাকমা। পিতা- বিনন্দ রাখাল চাকমা। বাড়ি- দিঘীনালা্ ‍উপজেলার গুলছড়ি রশিক নগরে। গণতোষ চাকমা তার সাংগঠনিক বা ছদ্ম নাম। তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। গ্রেফতার এড়াতে ছদ্মনামে এ বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিল। ধারণা করা হচ্ছে সে কোনো পাহাড়ী উগ্রবাদী সাম্প্রদায়িক আঞ্চলিক সংগঠনের সাথে জাড়িত। সব মিলিয়ে ইতি চাকমার হত্যাকান্ডের রহস্য ক্রমেই দানা বাঁধছে।

আইন শৃঙ্খলা বাহিনী এখনো পর্যন্ত নানা ধারণা নিয়ে বিচার বিশ্লেষণ করছেন। এ হত্যাকাণ্ডের সাথে ভগ্নিপতিও জড়িত থাকতে পরে। এমনও হতে পারে, দীর্ঘদিন একসাথে থাকায় শালিকা ও দুলাভাইয়ের মধ্যে কোনো সম্পর্ক তৈরি হয়ে থাকতে পারে যা থেকে পরবর্তী জটিলতার কারণে এই খুন। কিম্বা একা থাকা অবস্থায় শালিকার উপর ভগ্নিপতির লোলুপ দৃষ্টি পড়তে পারে।

আবার এমনও হতে পারে, ভগ্নিপতি ও তার বন্ধু মিলে ইতি চাকমার সাথে জোরপূর্ব দৈহিক চাহিদা মিটানোর পর ঘটনা জানা জানি হতে পারে এমন আশংকা থেকে ঠান্ডা মাথায় ইতি চাকমাকে হত্যার পর না জানার নাটক সাজানো হচ্ছে।

Khagrachari Pic 03

অপরদিকে ইতি চাকমার মৃত্যুর পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে শুরু থেকেই এ হত্যাকাণ্ডের সাথে বিভিন্ন পাহাড়ী মেয়েদের সাথে বাঙালী ছেলেদের ছবি দিয়ে তাদের ইতি চাকমা দাবী করে বাঙালীদের দায়ী করে স্ট্যাটাস দিতে শুরু করে উগ্র পাহাড়ী সন্ত্রাসীদের ও তাদের সমর্থকেরা। তাদের বিভিন্ন ফেসবুক পেইজে এক বাঙালি যুবকের সাথে ইতি চাকমার বেশ কিছু ছবি প্রকাশ পেয়েছে। এসকল ছবি দেখিয়ে বলা হচ্ছে, এই হত্যাকাণ্ডের সাথে বাঙালী যুবকেরা জড়িত।

এদিকে ইতি চাকমা হত্যাকাণ্ডের পর পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে অরুণাচল রাজ্য থেকে প্রকাশিত একটি অনলাইন “ অরুণাচল চাকমা নিউজ পেইজে ‘ইতি চাকমা নামে এক পাহাড়ি নারীকে গণধর্ষনের পর হত্যা করা হয়েছে’ মর্মে সংবাদ ছাপা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের জন্য ‘বাঙালী মুসলিম স্যাটেলারদের’ দায়ী করে ঐ নিউজে আরো বলা হয়েছে,“ বাংলাদেশ ধর্ষণ ও জবাইকারীদের দেশ। এর আগেও অনেক আদিবাসী নারীকে বাঙালী মুসলিম স্যাটেলাররা গণধর্ষণ ও জবাই করে হত্যা করলেও তার কোনো বিচার হয় নি’।

এ বিষয়ে জানতে পার্বত্য নাগরিক পরিষদের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার আলকাস আল মামুন ভুইয়ার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, সকলেই জানেন পাহাড়ে পাহাড়ি নারীদের বাঙালি যুবকদের প্রেম কিংবা সম্পর্ক স্থাপন, প্রেম ও বিয়ে অনেকটা নিষিদ্ধ করেছে আঞ্চলিক সংগঠনগুলো।

বহু পাহাড়ি নারী বাঙালী যুবকের সাথে প্রেম-বিয়ে করে পরবর্তীতে হত্যা, গণধর্ষণসহ নানাভাবে হয়রানীর শিকার হয়েছে। বাঙালি ছেলের সাথে প্রেম করার কারণে অনেক পাহাড়ি নারীকে গণধর্ষণ এমনকি লিলামে তুলে বিয়ে দেওয়ার বহু ঘটনা স্বাক্ষী হয়ে আছে। সাংবাদিক সৈকত ভদ্র তার অন্যতম উদাহরণ।

তিনি বলেন, ফেসবুকে পাহাড়ী উগ্রপন্থীদের ছড়ানো ছবিগুলো আমিও দেখেছি। এ ছবিগুলো যদি সত্য হয় তাহলে আমার ধারণা বাঙালী ছেলেদের সাথে যোগাযোগ থাকার কারণে পাহাড়ী উগ্রপন্থী সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী লোক পাঠিয়ে ইতি চাকমাকে হত্যা করেছে। আমরা চাই ইতি চাকমা প্রকৃত হত্যাকারীরা চিহ্নিত হোক ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি পাক।

ইতি চাকমার হত্যাকাণ্ড নিয়ে সামাজিক গণমাধ্যমে নানা অপপ্রচার সম্পর্কে স্থানীয় আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তারা বলেন, বিষয়গুলো আমরা মনিটরিং করছি। প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন