আলীকদম উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কালামের বিরুদ্ধে অনাস্থা

আলীকদম প্রতিনিধি:

বান্দরবানের আলীকদম উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আবুল কালামের বিরুদ্ধে অনাস্থা দিয়েছেন ভাইস চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা। উপজেলা পরিষদ (সংশোধন) আইন, ২০১১ এর ১৩ক (২) উপ-ধারা (১) মোতাবেক এ অনাস্থা আনা হয়। রবিবার সরকারি ডাকযোগে (জিপিও) ও ইমেইলে অনাস্থাপত্র চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার বরাবর পাঠানো হয়েছে।

অনাস্থাপত্রে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) প্রকল্প বাছাই, প্রস্তুতকরণ ও অনুমোদন পদ্ধতিতে দুর্নীতি, উপজেলা পরিষদের ২০% প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নে অনিয়ম, উপজেলা পরিষদের রাজস্ব আত্মসাত, সরকারি গাড়ি ব্যবহারে অনিয়ম, নিয়মিত অফিস না করা এবং নারী ও শিশু নির্যাতন মামলার বিচারাধীন আসামী হিসেবে অভিযুক্ত করা হয়।

অনাস্থাপত্র অনুসারে জানা গেছে, উপজেলা পরিষদ উন্নয়ন সহায়তা তহবিল ব্যবহার নির্দেশিকার ৭নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রকল্প বাছাই, প্রস্তুত করণ ও অনুমোদন পদ্ধতিতে এ সংক্রান্ত কমিটির আনুষ্ঠানিক সভা না করে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) মনগড়া প্রকল্প গ্রহণ করেন উপজেলা চেয়ারম্যান। গত ২০১৬-২০১৭ অর্থ বছরে প্রায় ১ কোটি ১১ লাখ টাকা বরাদ্দের প্রকল্প গ্রহণের পরিষদের সদস্যদের জানানো হয়নি। প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রে এ সংক্রান্ত নির্দেশিকার ৭(৪) অনুচ্ছেদ লঙ্ঘন করা হয়। নির্দেশিকানা মেনে চেয়ারম্যান কালাম স্বেচ্ছাচারিতা করে মনগড়া ও অস্তিত্বহীন সংগঠনের নামে প্রকল্প গ্রহণ করেন। এ নিয়ে ইতোপূর্বে চার ইউনিয়নের চেয়ারম্যানগণ লিখিত অভিযোগ করেন জেলা প্রশাসকের কাছে।

সরকারের ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয় ও বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) বরাদ্দ থেকে ২০% বরাদ্দকৃত অর্থে উপজেলা পরিষদ কর্তৃক প্রকল্প গ্রহণের নিয়ম রয়েছে। বিগত কয়েকটি অর্থবছরে চেয়ারম্যান কালাম নিজের সুবিধা ও খেয়ালখুশিমত মনগড়া প্রকল্প গ্রহণ করছেন। এসব প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নের মানা হয়নি সংশ্লিষ্ট নীতিমালা। নেয়া হয়নি উপজেলা পরিষদের কমিটির সদস্যদের কোন প্রকার মতামত।

বিগত অর্থ বছরগুলোতে ‘রেপারপাড়া বাজারস্থ টোল আদায় পয়েন্ট’ ইজারা প্রদানে সংশ্লিষ্ট ইজারাদারের সাথে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান গোপন আঁতাতের মাধ্যমে কম রাজস্ব দেখিয়ে ইজারা দিয়ে আসছিলেন। গত ৪ মে ২০১৭ এ টোল পয়েন্টটি মাত্র ১২ লক্ষ ১০ হাজার টাকায় ইজারা দেওয়ার জন্য একক সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন উপজেলা চেয়ারম্যান। এ নিয়ে চার ইউপি চেয়ারম্যান জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ করলে পুনরায় ইজারা দিতে বাধ্য হন তিনি। টোল পয়েন্ট ইজারায় পাওয়া রাজস্ব আয় ব্যবহারে ‘অর্থ ব্যবস্থাপনা ও বন্টন পদ্ধতি সংক্রান্ত নীতিমালা’ মানা হয়নি।

এছাড়াও অনাস্থাপত্রে উপজেলা পরিষদের বাসা বরাদ্দ প্রদানে অনিয়ম, নিজ পছন্দের কর্মচারীদের সরকারি কোয়ার্টার ব্যবহার করতে দেয়া, পরিষদ কম্পাউন্ডের আমড়ার বিক্রিলব্ধ ৭০ হাজার টাকা রাজস্ব তহবিলে জমা না দিয়ে আত্মসাত, পরিষদের কোয়ার্টার এলাকায় ঝড়ে উপড়ে পড়া গাছ বিক্রয়লব্ধ অর্থ উপজেলা রাজস্ব তহবিলে জমা না দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়।

অনাস্থাপত্রে বলা হয়, উপজেলা পরিষদের সরকারি জীপগাড়ী জেলার বাইরে গমনাগমনের বিষয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগ, উপজেলা-১ শাখার সুনির্দিষ্ট নির্দেশিকা আছে। নির্দেশিকা মতে, ‘উপজেলা এলাকার বাইরে সরকারি কাজে জেলা সদরে কিংবা জেলা এলাকার মধ্যেই শুধু জীপগাড়ী ব্যবহার করা যাবে’। জেলার বাইরে গাড়ী নেয়ার প্রয়োজন হলে স্থানীয় সরকার বিভাগের পূর্বানুমতি গ্রহণ করার বাধ্যবাধকতা থাকলেও চেয়ারম্যান কালাম মর্জিমাফিক পরিষদের জীপগাড়ি নিয়ে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় ব্যক্তিগত কাজে যাতায়াত করেন। যা এ সংক্রান্ত নীতি মালা পরিপন্থী।

আরো জানা গেছে, চেয়ারম্যান আবুল কালাম নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ এর ১০ ও ৩০ ধারায় বিচারাধীন মামলার আসামী। বর্তমানে এ মামলাটি বিজ্ঞ আদালতে বিচারাধীন। একই পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান শিরিনা আক্তার বাদী হয়ে বিজ্ঞ বিচারক, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনাল, বান্দরবান পার্বত্য জেলার আদালতে এ মামলা দায়ের করেন। গত ০৭/০৭/২০১০ ইং মামলার বাদী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ এর ২৭ (১গ) ধারার বিধানমতে অপরাধ আমলে গ্রহণ করার প্রার্থনা করলে আদালত তা মঞ্জুর করেন।

উপজেলায় সরকারি উন্নয়ন কর্মকার্তা গতিশীলতা আনয়ন, দুর্নীতিমুক্ত উপজেলা পরিষদের কার্যাবলী বাস্তবায়নের স্বার্থে আমরা নিম্ন স্বাক্ষরকারীগণ আলীকদম উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে উপজেলা পরিষদ (সংশোধন) আইন, ২০১১ এর ১৩ক (২) উপ-ধারা (১) মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আবেদন জানান, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান কাইনথপ ম্রো, সদর ইউপি চেয়ারম্যান জামাল উদ্দিন, চৈক্ষ্যংইউপি চেয়ারম্যান ফেরদৌস রহমান, নয়াপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান ফোগ্য মার্মা ও কুরুকপাতা ইউপি চেয়ারম্যান ক্রাতপুং ম্রো। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান অনাস্থা স্বাক্ষর করে ও পরে জানান, তিনি অভিযোগের প্রকাশ্য শুনানীতে তার মতামত ব্যক্ত করবেন।

উল্লেখ্য, উপজেলা পরিষদ (সংশোধন) আইন, ২০১১ এর ১৩ক (২) উপ-ধারা (১) অনুসারে অনস্থা প্রস্তাব পরিষদের চার-পঞ্চমাংশ সদস্যের স্বাক্ষরে লিখিতভাবে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনারের নিকট দাখিল করা হয়েছে। আলীকদম উপজেলা পরিষদের স্থায়ী কমিটির সদস্য রয়েছে ৭ জন।

এ ব্যাপারে আলীকদম উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কালামের সাথে কয়েকবার যোগাযোগ করা হলেও তার মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন