আলীকদমে সেনাবাহিনী মোতায়েনের দাবিতে বিএনপি’র ৩ প্রার্থীর সাংবাদিক সম্মেলন

Alikadam BNP Press Confarence News Pic copy

আলীকদম প্রতিনিধি:

বান্দরবানের আলীকদম উপজেলায় ষষ্ঠ ধাপে আগামী ৪ জুন অনুষ্ঠিতব্য ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে সেনাবাহিনী মোতায়েন করার দাবি জানিয়েছেন বিএনপি দলীয় মনোনয়ন পাওয়া ৩ জন প্রার্থী। রোববার দুপুরে আলীকদম প্রেস ক্লাবে অনুষ্ঠিত সাংবাদিক সম্মেলনে এ দাবি করেন তারা। সেনাবাহিনী মোতায়েন ছাড়া নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না বলে আশংকা করেন বিএনপি’র প্রার্থীরা।

সাংবাদিক সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন, ৩নং নয়াপাড়া ইউনিয়নে বিএনপি দলীয় মনোনীত প্রার্থী জুলফিকার আলী ভূট্টো। এতে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন ১নং আলীকদম ইউনিয়নে বিএনপি দলীয় প্রার্থী মোহাম্মদ ইউনুস মিয়া ও ২নং চৈক্ষ্যং ইউনিয়নের প্রার্থী মো. জয়নাল আবেদীন। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন সাবেক উপজেলা বিএনপি সভাপতি ফরিদ আহাম্মদ, লামা উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল আমিন, যুবনেতা আবুল হাসেম ও শ্রমিক নেতা মো. কামাল উদ্দিন প্রমূখ।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে ৩ ইউপি চেয়ারম্যান প্রার্থী ৩টি ইউনিয়নের সুনির্দিষ্ট ১১টি ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে ম্যাজিস্ট্রেট ও সেনাবাহিনী নিয়োগের দাবি তোলেন। কেন্দ্রগুলো হচ্ছে ১নং আলীকদম ইউনিয়নের ৬, ৭, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ড কেন্দ্র, ২নং চৈক্ষ্যং ইউনিয়নের ৩, ৭, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ড এবং নয়াপাড়া ইউনিয়নের ৩ ও ৮ নম্বর ওয়ার্ড।

এছাড়াও সংবাদ সম্মেলনে তিন প্রার্থী নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসনের কাছে ৫টি দাবী তুলে ধরেন। দবিগুলো হচ্ছে- ১. চারটি ইউনিয়নের কমপক্ষে ৩০টি ভোট কেন্দ্রে ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে সেনাবাহিনী, র‌্যাব, বিজিবি, আনসার ও পুলিশ বাহিনীর পর্যাপ্ত সদস্য মোতায়েন করে সন্ত্রাসী-ক্যাডার বাহিনীর আক্রমণ থেকে ভোট কেন্দ্র রক্ষা, ভোট কারচুপি, জালভোট ও ভোট ক্রয়-বিক্রয় বন্ধ করা। ২. উপজাতীয় ভোটারদের নির্বিঘ্নে ও বিনাবাধায় ভোটদানে নিরাপত্তা প্রদান ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় সেনাবাহিনীর সজাগ দৃষ্টি রাখা, ৩. বহিরাগত আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী, ক্যাডার ও সন্ত্রাসীদের নির্বাচনের পূর্বে আলীকদম ত্যাগের নির্দেশনা দেওয়ার জন্য নির্বাচন কমিশনের হস্তক্ষেপ কামনা, ৪. উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ বাহিনী নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করা ও ৫. নির্বাচন চলাকালীন ভোট কেন্দ্র এলাকায় সেনাবাহিনীর টহল ও তৎপরতা জোরদার করা।

নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন না করে সরকার দলীয় প্রার্থীকে অবৈধভাবে বিজয়ী করতে বিতর্কিত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারিদের ভোট গ্রহণের দায়িত্ব দিয়েছেন। এক প্রশ্নের উত্তরে সদর ইউনিয়নের বিএনপি প্রার্থী মো. ইউনুস মিয়া বলেন, আলীকদম যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা ৭ থেকে ৮ বছর ধরে কর্মস্থলে অনুপস্থিত। অথচ তাকে ৪নং ওয়ার্ডের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে প্রিসাইডিং অফিসার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় স্কুলশিক্ষক প্রশাসনের ছত্রছায়ায় মো. মহিউদ্দিন সরকারি কর্মচারী হয়েও প্রকাশ্যে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন।

বিএনপির এ তিন প্রার্থী আরো অভিযোগ করেন, পার্শ্ববর্তী লামা উপজেলা থেকে সরাসরি আওয়ামী রাজনীতির সাথে জড়িত বিপুল সংখ্যক সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারি এনে নির্বাচনী কর্মকর্তার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সরকার দলীয় নৌকা প্রতীকের পক্ষে স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তায় ভোট কেন্দ্রের নিয়োজিত প্রিসাইডিং ও পোলিং অফিসারদের সহায়তায় নেওয়া হবে। আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ অবৈধভাবে প্রশাসন ও ভোটারদের ওপর প্রভাব বিস্তার করছে। টাকার বিনিময়ে ভোট ক্রয়, নির্বাচনী আচরণ বিধিকে তোয়াক্কা না করে প্রকাশ্যে প্রতিপক্ষ প্রার্থীদের হুমকী, ভয়ভীতি, সাম্প্রদায়িক ও উস্কানীমূলক বক্তব্য দিচ্ছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা। এতে ভোটের সুষ্ঠু পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। কেন্দ্র দখল, জাল ভোট, বাহির থেকে ব্যালট পেপার ঢোকানোর পাঁয়তারার পাশাপাশি জেএসএস এর কর্মীবাহিনী দুর্গম এলাকার কেন্দ্রগুলোতে অস্ত্রবাজি করে ভোটের পরিবেশ নস্যাৎ করবে বলে আশংকা করেন বিএনপির চেয়ারম্যান প্রার্থীরা।

তারা বলেন, প্রশাসনের সহায়তায় ভোট কারচুপি করা হলে এলাকার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট, দাঙ্গা-হাঙ্গামা, মারামারি ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হবে।

এ ব্যাপারে আলীকদম সদর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ দলীয় মনোনীত প্রার্থী জামাল উদ্দিন বলেন, আমি এবং আমার দল উদার গণতন্ত্র এবং জনগণের রায়ের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। ভোট কারচুপির কোন আশংকা নেই। প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশন সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ থেকে তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করবে।

উপজেলা নির্বাচন অফিসার নববিন্দু নারায়ন চাকমা বলেন, নির্বাচন কমিশন সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ আছে। প্রার্থীরা যদি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ করলে প্রমাণ সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত ছাড়া ইউপি নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হবে না। তাছাড়া আলীকদমের ইউপি নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েনে এ পর্যন্ত কোন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন