আলীকদমে টোল পয়েন্ট ইজারা নিয়ে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ

3_3-282x160

আলীকদম প্রতিনিধি :
উপজেলা পরিষদ ম্যানুয়ালে বর্ণিত ইজারা পদ্ধতি সম্পর্কিত নীতিমালা লঙ্ঘন করে বান্দরবানের আলীকদমে ‘রেপারপাড়া বাজারস্থ টোল আদায় পয়েন্ট’ ইজারা প্রদান প্রক্রিয়া নিয়ে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।

বর্তমান ইজারাদারকে পুনরায় ইজারা টোল পয়েন্ট পাইয়ে দেওয়ার অভিপ্রায়ে ‘ইজারা বিজ্ঞপ্তি’তে মনগড়া শর্তারোপ করা হয়েছে মর্মে অভিযোগ স্থানীয় ব্যবসায়ীদের।

তবে অভিযোগ আমলে নিতে রাজি নন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ নায়িরুজ্জামান। তাঁর দাবী প্রকাশিত ইজারা বিজ্ঞপ্তির শর্তাবলীতে পূর্বের ধারাবাহিকতা রক্ষা হয়েছে মাত্র।

অভিযোগকারীরা বলেন, ইজারা সংক্রান্ত নীতিমালায় উল্লেখ আছে, ‘দরপত্রদাতাকে উদ্ধৃত মূল্যের ৩০% অর্থ ব্যাংক ড্রাফট/ পে-অর্ডারের মাধ্যমে দরপত্রের সাথে জমা দিতে হবে। উক্ত টাকা হইতে ২৫% অর্থ ইজারা মূল্যের সাথে সমন্বয় করা হইবে এবং বাকী ৫% অর্থ জামানত হিসাবে সংরক্ষিত থাকিবে।’ অথচ ইউএনও’র স্বাক্ষরিত ইজারা বিজ্ঞপ্তির ৪নং শর্তে বলা হয়েছে “দরপত্রের উদ্ধৃত দরের ১০০% টাকা নিন্মস্বাক্ষরকারীর অনুকুলে পে-অর্ডার/ব্যাংক ড্রাফট্ আকারে অবশ্যই দাখিল করতে হবে।”

অভিযোগকারীদের দাবী, ইউএনও’র স্বাক্ষরিত ইজারা বিজ্ঞপ্তির কয়েকটি শর্ত সরকারি নীতিমালার বিরোধী। কঠিন শর্ত দিয়ে স্থানীয় কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে ইজারা গ্রহণ প্রক্রিয়ায় কৌশলে বাধা দেওয়া হচ্ছে।

তবে, স্থানীয় সরকার বিভাগ কর্তৃক জুলাই, ২০১৩-এ প্রকাশিত উপজেলা পরিষদ ম্যানুয়ালে দেখা যায়, এতে ‘সরকারি হাট-বাজারসমূহের ব্যবস্থাপনা, ইজারা পদ্ধতি এবং উহা হইতে প্রাপ্ত আয় বন্টন সম্পর্কিত’ একটি নীতিমালা আছে। সরাসরি ‘টোল পয়েন্ট ইজারা পদ্ধতি’ সংক্রান্ত নীতিমালা নেই। ইউএনও’র দাবি ম্যানুয়ালে এ সংক্রান্ত সুনির্দিষ্ট নীতিমালা না থাকায় স্থানীয় সিদ্ধান্তে শর্তারোপ করা হয়েছে। আরা হাট-বাজার সংক্রান্ত নীতিমালা মানতে এ কমিটি বাধ্য নন।

স্থানীয় যুবলীগ নেতা আনোয়ার জিহাদ ও শফিউল আলম, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা অংশেথোয়াই মার্মা ও বিএনপি নেতা আব্দুল হামিদ স্বাক্ষরিত অভিযোগপত্রে দাবি করা হয়, এ সংক্রান্ত নীতিমালা অনুযায়ী ইজারা বিজ্ঞপ্তিতে সরকারি মূল্য উল্লেখ থাকতে হয়। কিন্তু উপজেলা প্রশাসনের জারী করা বিজ্ঞপ্তিতে ‘ইজারা বিজ্ঞপ্তির সরকারি মূল্য উল্লেখ’ নেই। যা রহস্যজনক। এছাড়া সিডিউলের সাথে পণ্যের ইজারা মূল্যের কোন চার্ট সংযোজন করা হচ্ছে না। ফলে ইজারা গ্রহণে আগ্রহীরা প্রশাসনিক এহেন গোপনীয়তায় বিষয়টি নিয়ে অন্ধকারে আছেন।

তারা অভিযোগ করে বলেন, নীতিমালায় আছে, ‘দরপত্র দাখিলের জন্য নির্ধারিত দিনের অন্ততঃ ১৫ দিন পূর্বে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে হয়’। অথচ গত ২৬ এপ্রিল পত্রিকায় প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে সিডিউল বিক্রির সময় দেওয়া হয়েছে মাত্র তিনদিন। এছাড়া বিজ্ঞপ্তিটি ব্যাপক প্রচারের কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

এ সংক্রান্ত অভিযোগের কপি পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী, জেলা প্রশাসক ও স্থানীয় সরকারের উপ-পরিচালক বরাবর ডাক ও ই-ইমেলে পাঠানো হয়েছে।

জানতে চাইলে এ সংক্রান্ত কমিটির সদস্য ও সদর ইউপি চেয়ারম্যান জামাল উদ্দিন ও চৈক্ষ্যং ইউপি চেয়ারম্যান ফেরদৌস রহমান বলেন, এসব শর্ত আরোপের বিষয়টি আমরা জানতাম না। এ নিয়ে ইউএনও’র সাথে পরামর্শ করে প্রয়োজনে শর্ত পরিবর্তন করে পুনঃবিজ্ঞপ্তি প্রকাশের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ ব্যাপারে ইউএনও মোহাম্মদ নায়িরুজ্জামান বলেন, ‘উপজেলা পরিষদ ম্যানুয়ালে টোল পয়েন্ট ইজারা দেওয়ার নীতিমালা নেই। হাট-বাজার ইজারা দেওয়া সংক্রান্ত নীতিমালা আছে। তাই উপজেলা চেয়ারম্যানকে সভাপতি করে এ সংক্রান্ত একটি কমিটির আরোপিত শর্তাবলী অনুযায়ী ইজারা বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। যা আমার পক্ষে এককভাবে পরিবর্তন করা সম্ভব নয়।’

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন