রাজস্থলীর বাড়ীটি ছিলো আরাকান আর্মিদের আশ্রয়স্থল
পার্বত্যনিউজ ডেস্ক:
রাঙ্গামাটির রাজস্থলী উপজেলার তাইতং পাড়ার থেকে মায়ানমারের আরাকান আর্মির সহযোগি সন্দেহে আটক অংনু ইয়ান রাখাইনকে গতকাল রাঙ্গামাটির আদালতে হাজির করার পর জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। গতকাল বিকালে রাঙ্গামাটি জেলা জজ আদালতের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আলী আহসান তাকে জেল হাজতে প্রেরণ করে। রাজস্থলী থানায় বিদেশী নাগরিক সম্পর্কিত আইনে একটি মামলা দায়ের করে। পরে রাজস্থলী থানা পুলিশ কড়া পাহারায় তাকে রাঙ্গামাটি জেলা জজ আদালতে হাজির করা হয়।
এদিকে রাজস্থলী উপজেলার আরাকান আর্মিদের আশ্রয়স্থল বিলাস বহুল বাড়ী দুই কেয়ার টেকার আটক করেছে রাজস্থলী থানা পুলিশ। গতকাল সন্ধ্যায় রাজস্থলী উপজেলার দুর্গম একটি পাড়া থেকে তাদেরকে আটক করে। আটকের পর তাদেরকে নিয়ে রাজস্থলী থানায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে রাজস্থলী পুলিশ।
নির্ভরযোগ্য একটি সুত্র জানায়, আরাকান আর্মির সাথে বাড়ির মালিক ডা. রেনাইজোর সাথে আরাকান আর্মির সাথে গভীর একটি সম্পর্ক ছিলো। তার এই বিলাশ বহুল বাড়ীটি ছিলো আরাকান আর্মির আশ্রয়স্থল ছিলো। আরাকান আর্মিরা কেই যদি অসুস্থ হতো তাহলে এই বাড়ীতে রেখেই তাকে চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হতো বলে ধারনা করা হচ্ছে।
সুত্র জানায় সেই সুবাদে অংনু ইয়ান রাখাইন গত এক মাস আগে এই বাড়ীতে আনা হয়। তাকে চট্টগ্রামে চিকিৎসা সেবা প্রদানের পর এই বাড়ীতেই তাকে একটি ঘরে তালা বদ্ধ অবস্থায় রাখা হয়।
আটককৃত অংনু ইয়ান রাখাইন জানান, সম্প্রতি তিনি রাজস্থলী উপজেলায় ডা. বাড়ীতে এসেছে। ডাক্তার তাকে নিয়ে চট্টগ্রামের বেলভিউ হসপিটালে ও ফয়েজ লেক চক্ষু হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা দিয়েছে। অংনু ইয়ান রাখাইন জানান, সে ঘর থেকে বের হতো না। তাকে সময় মতো এসে খাবার দিয়ে যেতে একজন। কিন্তু সে কে সে চিনে না। তাকে ডাক্তারের কথা জিজ্ঞাস করা হলে সে বলে সে কিছ্ইু জানে না।
স্থানীয় কয়েকজন গ্রামবাসী জানান, স্থানীয় ডা. রেনাইজো একজন ডাক্তার বাজারে তার দোকান আছে। তিনি এই এলাকায় একজন দানবীর হিসাবে পরিচিত রয়েছে তার। ১৯৯৬ সালে তিনি রাজস্থলী উপজেলায় আসে। এর পর থেকে তিনি স্থানীয় জানগনের সাথে খুবই সুসম্পর্ক গড়ে তুলে। গ্রামবাসী জানান, তিনি এই গ্রামের বিয়ে করেন। বর্তমানে তার স্ত্রী সহ তিনি নেদারল্যান্ডে অবস্থান করছে।
তারা জানান, তিনি যে এই আরাকান আর্মির সাথে জড়িত তা আমরা কখনোই জানতে পারিনি। এলাকায় মাঝে মাঝে নতুন নতুন কিছু লোক দেখতাম। এই বাড়ীতে আসতো থাকতো। ঘুরাফেরা করতো। তারা যে মিয়ানমারের তা আমরা কখনোই বুঝতে পারিনি।
গ্রামবাসী আরো জানান, ডা. রেনাইজো অনেক বড় মাপের মানুষ। তিনি এলাকার বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে সহযোগিতা করে। তার এখানে কিছুদিন আগে আমরা ১৫ টির মতো ঘোড়া দেখেছি। কিন্তু কিছুদিন পর এই ঘোড়া গুলো আর দেখা যায়নি। বর্তমানে এখানে মাত্র ২ টি ঘোড়া রয়েছে। তারা বলেন, আরো শোনা যায় যে, রেনাইজোর ঘোড়া গুলো বান্দরবান উপজেলার বড় মদকে এখানে পাওয়া গেছে।
এদিকে রাজস্থলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওয়াহিদুল ইসলাম জানান, গতকাল বুধবার রাতে গোপন সূত্রে খবর পেয়ে স্থানীয় ডা. রেনাইজো নামক এক নেদারল্যান্ড প্রবাসীর বাসায় সেনা পুলিশ যৌথ অভিযান চালিয়ে তাকের উদ্ধারের পর প্রশাসন সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। তিনি বলেন, এই ঘটনার পর আর কোন আরকান আর্মি এই এলাকায় আছে কিনা এবং কোন ধরনের আশকতার চেষ্টা হচ্ছে কিনা তা প্রত্যক্ষ করতে গোয়েন্দা নজরদারী বাড়ানো হয়েছে।
এদিকে রাজস্থলী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা সুমন চৌধুরী জানান, রাজস্থলী উপজেলার এতো সুন্দরবাড়ী আর কারো নেই। আসলে আমরা কখনোই এই লোকটির সম্পর্কে ভুল ধারনা জন্মানোর কোন উপায় ছিলো না। তিনি বলেন, ডা. রেনাইজো নেদারল্যান্ড প্রবাসি তাই তার এতো বড়ো অট্টালিকা থাকতেই পারে। তিনি গ্রামের দানবীর হিসাবেও পরিচিত লাভ করে খুব অল্প সময়ের মধ্যে। কিন্তু গত কয়েকদিন আগে বান্দরবানে ঘোড়া আটক হওয়ার পর পরই তার উপর বিশেষ নজরদারী শুরু হওয়ার পর তার বাড়ী থেকে সেনাবাহিনী অনেক কষ্টে বাড়ী দরজা ভেঙ্গে এসকল জিনিসপত্র উদ্ধার করা হয়। এ সময় বাড়ীর মালিককে আটক করা না গেলেও তার সহযোগীকে আটক করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে অং ইউ স্বীকার করেছেন যে তিনি আরাকান আর্মীর সহযোগী। তাঁর বাড়ি আরাকানে। বাড়ী থেকে অত্যাধুনিক ইলেকট্রনিক ডিভাইজ সহ বিভিন্ন মুল্যবান কাগজ পত্র জব্দ করা হয়।
উল্লেখ্য গত ২৬ আগষ্ট রাতে সেনাবাহিনী নেতৃত্বাধীন যৌথ বাহিনীর অভিযানে বুধবার গভীর রাতে উপজেলা সদরের একটি বিলাস বহুল বাড়িতে অভিযান পরিচালনা করে তাকে আটক করা হয়্। এ যুবককে আরাকান আর্মির পোশাক, ল্যাপটপ, ক্যামেরা ও ঘোড়াসহ আটক করা হয়্ ।
সূত্র: দৈনিক গিরিদর্পন