Notice: Trying to get property 'post_excerpt' of non-object in /home/parbatta/public_html/wp-content/themes/artheme-parbattanews/single.php on line 53

Notice: Trying to get property 'guid' of non-object in /home/parbatta/public_html/wp-content/themes/artheme-parbattanews/single.php on line 55

আরাকানে মুসলমানদের সাথে হিন্দুদের হত্যা করছে বর্মীরা(ভিডিও)

পার্বত্যনিউজ ডেস্ক:

মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলিমদের সাথে হিন্দুদের উপরও আক্রমণ হচ্ছে । সেখানে মিয়ানমারের দমন অভিযানের কারণে এবার দেশটি থেকে পালিয়ে চারশ জনের বেশি হিন্দু ধর্মাবলম্বীও সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকেছে বলে জানা গেছে। তাদের মধ্যে মহিলা এবং শিশুর সংখ্যা বেশি। তাদের অনেকে বলেছেন, হিন্দুদেরও বাড়িঘর আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়ার পাশাপাশি অনেককে হত্যা করা হয়েছে।

কক্সবাজারের উখিয়া থেকে হিন্দু বৌদ্ধ খৃষ্টান ঐক্য পরিষদের স্থানীয় নেতা স্বপন শর্মা এই আশ্রয় নেয়াদের দেখতে গিয়েছিলেন।

তিনি জানিয়েছেন, উখিয়ার কুতুপালং শরণার্থী শিবির থেকে অল্প দূরত্বে একটি মন্দিরে এবং তার আশে পাশে আশ্রয় নিয়েছেন পালিয়ে আসা ৪১২জন হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা। তাদের মধ্যে কয়েকজন বৃদ্ধ ছাড়া বাকিরা নারী এবং শিশু। কক্সবাজারের জেলাপ্রশাসনও তাদের আশ্রয় নেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

এই আশ্রয় নেয়াদের একজন রমা কর্মকার জানিয়েছেন, রাখাইন রাজ্যের মংডু জেলার রিকটা নামের গ্রাম থেকে দুই শিশু সন্তান নিয়ে তিনি এসেছেন। তাদের গ্রামে তার স্বামীসহ অনেক পুরুষকে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী গুলি করে হত্যা করেছে। এই দৃশ্য তারা দেখেছেন। তাদের বাড়িঘরে আগুন দিয়ে নারী এবং শিশুদেরও নির্যাতন করেছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। সেকারণে এই নারীসহ গ্রামের হিন্দু পরিবারগুলো সব পালিয়ে বাংলাদেশে এসেছেন।

শিকাগো ট্রিবিউন জানাচ্ছে ৮৬ জন হিন্দুকে রোহিঙ্গাদের সাথেই হত্যা করা হয়েছে। এরমধ্যেই ৪১২ জন রাখাইন হিন্দু উখিয়ায় এসে আশ্রয় নিয়েছে।

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংডু জেলার রিকটা গ্রাম ছাড়াও চিয়ংছড়ি এবং ফকিরাবাজার গ্রামে ছিল হিন্দুদের বসবাস। এই তিনটি গ্রাম থেকে নির্যাতনের কারণে হিন্দুরা পালিয়ে সীমান্তে এসেছেন বলে জানাচ্ছেন স্বপন শর্মা।

তাদের মধ্যে ৪১২ জনের মতো বাংলাদেশে ঢুকতে পেরেছেন। মি: শর্মা আরও বলেছেন কয়েকশ সীমান্তে জিরোলাইনে রোহিঙ্গা মুসলিমদের সাথে অবস্থান করছেন।

সম্প্রতি বাংলাদেশে আশ্রিত ৭ জন আরাকানী হিন্দু নারীর সাক্ষাতকারের একটি ভিডিও আরাকান টিভি’র বার্তা কক্ষে পৌঁছে। সাক্ষাতকারে এসব নারীরা তাদের প্রতি বর্মী বাহিনী ও উগ্রপন্থী রাখাইনের নৃশংসতার বর্ণনা দেন ।

সাক্ষতকারদাতা ৭ নারীর একজন হলেন মংডু জেলার ২ নম্বর ওয়ার্ডের ফকিরা বাজারের নিকুঞ্জের পূত্র রঞ্জিতের স্ত্রী । তিনি বলেন, “রোহিঙ্গারা নয়, আমাদেরকে নির্যাতন করছে মঘ ও রাখাইনরা । তারা সেখানে বোমা মারছে, হামলা করছে, কিরিছ দিয়ে মানুষ কাটছে । রোহিঙ্গা মুসলমানেরা আমাদেরকে এখানে আসার জন্য সহযোগিতা করেছে ।”

এসময় প্রশ্নকারী তাদের কাছ থেকে জিঙ্গেস করেন, রাখাইন ও মঘেরা তো মুসলমানদের মারছে বলে আমরা জানি , কিন্তু আপনারা পালিয়ে এলেন কেন? এর প্রতি উত্তরে একই এলাকার বিনিশায্যার পূত্র স্বপনের স্ত্রী বলেন, “আমাদের স্বামীদেরকে রাখাইনরা তাদের সাথে যোগ দিয়ে মুসলমানদের হত্যা করার জন্য বলেছিল । কিন্তু আমাদের স্বামীরা তাদের কথা প্রত্যাখ্যান করে । এতে ক্ষিপ্ত হয়ে আমাদের বিরুদ্ধেও হত্যাকান্ড চালাচ্ছে । অনেক হিন্দুকে তারা মেরে ফেলেছে ।”

সাক্ষাতকারদাতা ৭ নারীর অপর ৫ জন হলেন, একই এলাকার মিলনের মেয়ে, মিনিংগ্যার স্ত্রী, বিনন্দের স্ত্রী, ধইল্যা বাইন্যার পূত্র সীমান্ত বাইন্যার স্ত্রী । আরেক নারীর পরিচয় জানার আগে ভিডিওটি শেষ হয়ে যায় ।

প্রাপ্ত তথ্যমতে, এসব হিন্দু নারীদের মধ্যে একজনের স্বামী মালয়েশিয়ায় ৩ বছর যাবৎ সেলুনের কাজ করে । আর বাকিদের স্বামী ফকিরাবাজারে সেলুন এবং জুয়েলারী কাজ করতো । তাদের স্বামীরা এখন বেঁচে আছে নাকি মারা গেছে তা তাদের জানা নেই । বাংলাদেশ যাওয়ার সময় অনেক রোহিঙ্গা তাদের সহযোগিতা করেছেন বলেও জানান ।

এদিকে স্টেট কাউন্সিলর দপ্তর থেকে প্রকাশিত স্টেটমেন্ট অনুযায়ী বার্মার বিভিন্ন গণমাধ্যম সংবাদ প্রচার করেছে, আরাকানে ৬ জন হিন্দুকে হত্যা করেছে রোহিঙ্গা স্বাধিকারের জন্য আন্দোলনকারী দল আরাকান স্যালভেশন আর্মি (আরসা) । কিন্তু বাংলাদেশে আশ্রিত হিন্দু নারীরা বলছে তার বিপরীত কথা । রোহিঙ্গারা নয়, তাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরেছে রাখাইন ও মঘ ।

এর দ্বারা এটি প্রতিয়মান হচ্ছে যে, হিন্দুদের হত্যা করে তার দায় রোহিঙ্গাদের কাঁধে তোলে দেয়ার অপচেষ্টা চালাচ্ছে সরকার । যাতে রোহিঙ্গা মুসলমানদেরকে বিশ্বের সামনে জঙ্গি হিসেবে পরিচিত করে তোলতে পারে, এবং জঙ্গির বিরুদ্ধে অভিযানের নামে রোহিঙ্গা ও হিন্দুদের গণহত্যা চালানো যায় ।

গত ২৪ আগস্ট দিবাগত রাত থেকে শুরু হওয়া বর্মী সামরিক বাহিনীর কিলিং অপারেশনে দুই সহস্রাধীক যেসব নিরীহ মানুষকে হত্যা করা হয়েছে. তৎমধ্যে অর্ধশতাধিক হিন্দুও রয়েছে বলে জানান আরাকান টিভি’র মংডু প্রতিনিধি। তিনি জানান, বেশ কিছু হিন্দু পাড়া পুড়িয়ে দিয়েছে রাখাইনরা । সেখানে প্রচুর ফায়ারিং করেছে সৈন্যরা । তাতে মুসলমানদের সাথে বহু হিন্দুও মারা গেছে । কিন্তু ঘটনাস্থলে যাওয়ার সুযোগ না থাকায় হতাহতের সংখ্যা নিশ্চিত করা মুশকিল ।

গতকাল পর্যন্ত প্রায় পাঁচ হাজার অমুসলিমদের আরাকান থেকে সরিয়ে নিয়েছে প্রশাসন । হিন্দুরা অমুসলিমদের কাতারে পড়লেও তাদের নেওয়া হয়নি । শুধুমাত্র রাখাইন ও মঘদের নিয়ে যওয়া হয়েছে । ফলে ধারনা করা হচ্ছে রোহিঙ্গা ও হিন্দুদের অস্তিত্বর শেকড় আরাকান থেকে একেবারে উপড়ে ফেলার জন্য এর চেয়ে বেশি নির্যাতন চালাবে সরকারি বাহিনী ।

সূত্র: বিবিসি ও আরাকান টিভি

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন