আবারো ভাঙনের মুখে পার্বত্য বাঙালী ছাত্র পরিষদ!

পিবিসিপি

মুজিবুর রহমান ভুইয়া :

বিবাহিত, সন্তানের পিতা, অছাত্র, ব্যবসায়ী, অপার্বত্যবাসী, অগণতান্ত্রিক পকেট কমিটি, টাকা নিয়ে কমিটি করা প্রভৃতি অভিযোগে আবারো ভাঙনের মুখে পার্বত্য চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী বাঙালী সংগঠন পার্বত্য বাঙালী ছাত্র পরিষদ। নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষিত হবার সাথে সাথে এই ভাঙনের সুর বাজতে শুরু করেছে। তবে ভাঙনের রেখা দেখা গিয়েছিল গত ২৫ এপ্রিল কাউন্সিলের দিনেই।

নেতৃত্ব নিয়ে প্রকাশ্যে বিরোধ মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে শুরু করেছে। এ নিয়ে পরস্পর বিরোধী বক্তব্য দিতে শুরু করেছেন সংগঠনটির তৃনমুল থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। দলের কেন্দ্র থেকে তৃনমুল পর্যন্ত চলছে টানাপোড়েন- যার রেশ পৌঁছেছে উপদেষ্টাদের মধ্যেও।  এনিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো ভাঙ্গনের মুখে পড়তে যাচ্ছে পাহাড়ের বাঙ্গালীদের পক্ষে সোচ্চার সংগঠন হিসেবে পরিচিত ঐতিহ্যবাহী পার্বত্য বাঙ্গালী ছাত্র পরিষদ-পিবিসিপি। এর আগেও ২০১৩ সালের শেষদিকে তৎকালীন সভাপতি ইসমাইল নবী শাওনকে অব্যাহতি ও খাগড়াছড়ি জেলা কমিটির কার্যক্রম স্থগিত করার কারণে একবার ভাঙ্গনের মুখে পড়েছিল এ সংগঠনটি। সে যাত্রায় নানা ঘ্টনার পর কোনোমতে রক্ষা পেলেও এবার পাল্টা সংগঠন করার ইঙ্গিত দিয়েছেন সংগঠনটির বিক্ষুব্ধ নেতারা। আর এ নিয়ে প্রকাশ্য মুখ খুলেছেন খাগড়াছড়ি জেলা পিবিসিপি‘র সাবেক সভাপতি ও সদ্য ঘোষিত কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি মো: আবদুল মজিদ। নতুন কমিটির সাধারণ সম্পাদককে ময়মনসিংহের বাসিন্দা বলে অভিযোগ করেন তিনি। অভিযোগ সভাপতির বিরুদ্ধেও। তিনি বিবাহিত ও সন্তানের পিতা বলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন সদস্য পার্বত্যনিউজের কাছে অভিযোগ করেন।

জানা গেছে, গত ২৫ এপ্রিল রাঙ্গামাটিতে পার্বত্য বাঙ্গালী ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় কাউন্সিলের পর গেল বৃহস্পতিবার পার্বত্য বাঙ্গালী ছাত্র পরিষদের পুর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়। কমিটিতে রাঙ্গামাটির সাব্বির আহমেদকে সভাপতি, খাগড়াছড়ির পানছড়ির সারওয়ার জাহান খানকে সাধারণ সম্পাদক করে ৭১ সদস্যের কমিটি অনুমোদন দেয় পার্বত্য বাঙ্গালী ছাত্র পরিষদের উপদেষ্টা সংগঠন পার্বত্য নাগরিক পরিষদ। সংগঠনটির চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার আলকাছ আল মামুন সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা কমিটি এ অনুমোদন প্রদান করে।

এ নিয়ে সদ্য ঘোষিত কেন্দ্রীয় কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি মো: আবদুল মজিদ পিবিসিপি‘র এ কমিটিকে ইঞ্জিনিয়ার আলকাছ আল মামুন ভুইয়া ও শেখ আহাম্মেদ রাজুর পকেট কমিটি দাবী করে এ প্রতিনিধিকে বলেন, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলে টাকা নিয়ে কমিটি দেয়ার যে প্রবণতা রয়েছে তা এখন পিবিসিপিতেও ভর করেছে। সংগঠনের সদ্য ঘোষিত কমিটির সাধারণ সম্পাদককে ময়মনসিংহের বাসিন্দা দাবী করে বলেন, পার্বত্য বাঙ্গালী ছাত্র পরিষদের নেতৃত্ব দেয়ার জন্য ময়মনসিংহ থেকে লোক আনতে হবে সে পরিস্থিতি এখনো তৈরী হয়নি। পাহাড়ের মানুষ বহিরাগত কারো নেতৃত্ব মানবে না বলেও দাবী করেন তিনি। উপদেষ্টা পরিষদের সভাপতি আলকাস আল মামুনকে জামায়াতের রোকন, আতিকুর রহমানকে বান্দরবানের জামায়াত নেতা উল্লেখ করে তিনি বলেন, জামায়াত নেতাদের পকেট কমিটির বিরোধিতা করে চলে এসেছিলাম রাঙামাটি থেকে। জামায়াত থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। জামায়াতের মধ্যে বন্দী থাকা যাবে না। পিবিসিপি আগেও তো জামায়াত ডমিনেটেড ছিলো তখন প্রতিবাদ করেন নি কেন- এমন প্রশ্নের জবাবে আবদুল মজিদ বলেন, তারা বলেছিল জামায়াতিকরণ করবে না, এখন দেখতে পাচ্ছি তারা জামায়াতিকরণ করে ফেলেছে। সারোয়ার দীর্ঘদিন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি ছিল তখন বিরোধিতা করেননি কেন জানতে চাইলে আবদুল মজিদ বলেন, তখনো বিরোধিতা ছিল। এ কমিটির সাথে জনগণের কোনো সম্পর্ক নেই জানিয়ে তিনি বলেন, জনগণ এখন নতুন কিছু করতে চায়।

খুব শীঘ্রই বাঙ্গালীদের স্বার্থ রক্ষায় নতুন সংগঠন করার কথা জানিয়ে পিবিসিপি নেতা মো. আবদুল মজিদ বলেন, রাজনৈতিক বলয়ের বাইরে শুধুমাত্র বাঙ্গালীদের পক্ষে কথা বলাই হবে সেই সংগঠনের কাজ। যেখানে কোন ভাড়াটিয়া নেতৃত্ব নয়, পাহাড়ের নেতৃত্বই প্রতিষ্ঠিত হবে। ইতিমধ্যে সংগঠনের প্রাথমিক কাজ শুরু করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করলেও এর বেশী কিছু তিনি জানাতে রাজি হননি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সদ্য গঠিত কমিটির সভাপতি মো: সাব্বির আহমেদ অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে পার্বত্যনিউজকে বলেন, সারওয়ার জাহান খান দীর্ঘদিন ধরেই এ সংগঠনের জন্য কাজ করে আসছে। তবে তিনি উপদেষ্টা কমিটির সাথে কথা বলার পরামর্শ দিয়ে এর বেশী কিছু বলতে রাজি হননি।

যোগাযোগ করা হলো পার্বত্য বাঙ্গালী ছাত্র পরিষদ-পিবিসিপি‘র সদ্য নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক সারওয়ার জাহান খান নিজেকে খাগড়াছড়ি বাসিন্দা এবং পাহাড়ের ভোটার দাবী করে পার্বত্যনিউজকে বলেন, আমার বেড়ে ওঠা, লেখাপড়া সবকিছুই পাহাড়ে। যাদের ছাত্রত্ব নেই বা স্বার্থ ক্ষুণ্ণ হয়েছে তারাই আমাকে ময়মনসিংহের বাসিন্দা বলে প্রচার করছে। তিনি নিজেকে পার্বত্য চট্টগ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা দাবী করে বলেন, আমার বাবা দীর্ঘদিন পানছড়ি মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ছিলেন। তবে কেন তার বাবা স্ব-পরিবারে ময়মনসিংহ ফিরে গেছেন এমন প্রশ্নের জবাবে সারওয়ার জাহান খান বলেন, আমার বাবা চিকিৎসার জন্য অন্যদের সাথে নিয়ে ঢাকায় অবস্থান করছেন। তিনি তার বিরুদ্ধে দেয়া সব বক্তব্যকে স্রেফ অপ-প্রচার বলেও দাবী করেন।

এদিকে পকেট কমিটি দেয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে পার্বত্য নাগরিক পরিষদের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার আলকাছ আল মামুন ভুইয়া পার্বত্যনিউজ‘র এ প্রতিনিধিকে বলেন, তৃণমুলের নেতাকর্মীদের মতামতের ভিত্তিতে গঠনতন্ত্র মেনেই নতুন কমিটি গঠন করা হয়েছে। এখানে আমার নয় পাহাড়ের অধিকারহারা মানুষের স্বার্থের কথা ভেবেই সব করা হয়েছে। ছাত্র পরিষদে অছাত্র নেতৃত্ব কেউই সমর্থন করে না। অতীতের যেকোন সময়ে চেয়ে এবারের কমিটিকে অনেক বেশী শক্তিশালী দাবী করে বলেন, এ কমিটি আমি এককভাবে অনুমোদন দিইনি, উপদেষ্টা পরিষদ সর্বসম্মতিক্রমেই অনুমোদন দিয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন