Notice: Trying to get property 'post_excerpt' of non-object in /home/parbatta/public_html/wp-content/themes/artheme-parbattanews/single.php on line 53

Notice: Trying to get property 'guid' of non-object in /home/parbatta/public_html/wp-content/themes/artheme-parbattanews/single.php on line 55

আন্তর্জাতিক চাপ সরলে ওরা কিছুই করবে না: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

পার্বত্যনিউজ ডেস্ক

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের জন্য মিয়ানমার পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বললেও আন্তর্জাতিক চাপ সরে গেলে তারা কিছুই করবে না। তিনি জানান, আনুষ্ঠানিক আলোচনার মাধ্যমে ১০টি বিষয়ে সিদ্ধান্ত হলেও একতরফাভাবে আনান কমিশনের সুপারিশের পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের প্রসঙ্গটি মিয়ানমার একতরফাভাবে বাদ দিয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ২৩ থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত মিয়ানমার সফর করেন। সে দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লেফটেন্যান্ট জেনারেল কাইও সোয়ের সঙ্গে বৈঠকের পাশাপাশি তিনি অং সান সু চির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। এই সফর নিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তিনি সচিবালয়ে তাঁর দপ্তরে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন রাহীদ এজাজ ও রোজিনা ইসলাম

প্রথম আলো: আপনার মিয়ানমার সফর কেমন হলো?
আসাদুজ্জামান খান: মিয়ানমার সফরে দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে রোহিঙ্গা প্রসঙ্গ নিয়ে আলোচনা করার সময় দেখলাম, তারা রোহিঙ্গাদের ‘বাঙালি’ বলেছে। আমি তাদের বলেছি, বিশ্বে ৩৫ কোটি লোক বাংলায় কথা বলে। তারা কি সবাই বাঙালি? আমরা স্পষ্টভাবে বলেছি, এরা বাঙালি নয়। রাখাইনের এসব লোকজনের বাংলাদেশ ও মিয়ানমারে আসা-যাওয়ার দীর্ঘ ইতিহাস আছে। সেই ইতিহাস যে তাদের জানা দরকার, এটাও বলেছি।

প্রথম আলো: মূল আলোচনায় কী হলো?
আসাদুজ্জামান খান: আমরা তাদের বললাম, তোমাদের দেশের ১০ লাখ লোক বাংলাদেশে এসেছে। এটা আমাদের জন্য বিশাল বোঝা। আমাদের বন নষ্ট হচ্ছে। সামাজিক জীবন নষ্ট হচ্ছে। আমরা বিপর্যয়কর পরিস্থিতিতে আছি। তাই তোমরা তোমাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নাও।

প্রথম আলো: আপনার এ কথার জবাবে মিয়ানমারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কী বললেন?
আসাদুজ্জামান খান: তিনি বললেন, তাদের ফিরিয়ে নেওয়া হবে। তবে তাদের ফেরানোর আগে তারা যে মিয়ানমারের নাগরিক, সেটা যাচাই করে দেখতে হবে। এ কথার জবাবে তাঁকে বললাম, পরিচয় যাচাইয়ের বিষয়ে কী করা উচিত সেটা নিয়ে তো একটা সিদ্ধান্ত আছে।

প্রথম আলো: ২ অক্টোবর ঢাকায় মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলরের দপ্তরের মন্ত্রীর সঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠকের সিদ্ধান্তের কথা বলছেন?
আসাদুজ্জামান খান: হ্যাঁ। সেই সময় বিষয়টি সুরাহার জন্য একটা জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ কর ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। বাংলাদেশ থেকে রাখাইনের লোকজনকে কীভাবে ফেরত পাঠানো হবে, তা ওই জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ সিদ্ধান্ত নেবে। সেই জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ ৩০ নভেম্বরের মধ্যে করার প্রস্তাব দিয়েছি। পরে মিয়ানমার এই প্রস্তাবে রাজি হয়েছে। এটির কর্মপরিধি কী হবে, সেটা এই সময়ের মধ্যে হবে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আসেম বৈঠকে গিয়ে এ নিয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নেবেন।

প্রথম আলো: প্রত্যাবাসনের বিষয়ে তারা কী বলল?
আসাদুজ্জামান খান: তারা কোনো বিষয়েই দ্বিমত করেনি। শুধু বলেছে, বিষয়গুলো নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে তারা সিদ্ধান্ত নেবে। এরপর আমরা বলেছি, জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ, কফি আনানের কমিশন ও প্রধানমন্ত্রীর পাঁচ দফার ভিত্তিতে কাজ করতে হবে।

প্রথম আলো: ওইখানে মানে আনান কমিশনের বিষয়টা কি ঠিক আছে?
আসাদুজ্জামান খান: না নেই। ওখানেই তারা বারবার ঘষামাজা করছে।

প্রথম আলো: রোহিঙ্গা প্রসঙ্গে অং সান সু চি কী বললেন?
আসাদুজ্জামান খান: সু চির সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর উল্টো আচরণ পেলাম। তিনি নেতিবাচক কিছু বলেননি। আমরা যা বলেছি, তাতেই তিনি সায় দিয়েছেন, খোলামেলা আলোচনা করেছেন।

প্রথম আলো: সু চির সঙ্গে কোন কোন বিষয়ে আলোচনা হয়েছে?
আসাদুজ্জামান খান: তাঁকে বললাম, বাংলাদেশ মাদক উৎপাদন করে না। কিন্তু তোমার দেশের মাদক আমাদের যুবসমাজকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। সু চি জানালেন, তাঁদের দেশেও ইয়াবা একই সমস্যা তৈরি করেছে, যা নিয়ে তাঁরা খুব চিন্তিত।

প্রথম আলো: রোহিঙ্গাদের প্রসঙ্গে তাঁর সঙ্গে কী কথা হলো?
আসাদুজ্জামান খান: তাঁকে বললাম, রোহিঙ্গারা যদি বেশি দিন বাংলাদেশে থেকে যায়, তাহলে আমরা যেমন বিপদে পড়ব, আপনারাও বিপদে পড়বেন। উগ্রপন্থীদের ফাঁদে এসব লোকজন পা দিলে আমরাও তাদের আর নিয়ন্ত্রণ করতে পারব না। এই প্রেক্ষাপটে আপনার প্রতি অনুরোধ, দ্রুত এদের ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করেন। উনি তখন জানালেন, কফি আনান কমিশনের সুপারিশ মেনে তিনি কাজ শুরু করেছেন। অর্থাৎ রাখাইনে ফিরে যাওয়ার পর তারা আবার যেন বাংলাদেশে না আসে, সে জন্য তিনি উদ্যোগ নিচ্ছেন। রোহিঙ্গাদের জীবন-জীবিকার বিষয়টি নিয়েও তিনি ভাবছেন।

প্রথম আলো: অং সান সু চি কি আপনাকে নতুন কোনো প্রস্তাব দিয়েছেন?
আসাদুজ্জামান খান: তিনি আলোচনার একপর্যায়ে বলেছেন, অতীতে দেখা গেছে লোকজন রাখাইনে ফেরার পর আবার বাংলাদেশে চলে গেছে। এ ক্ষেত্রে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দিয়ে আমরা যদি একধরনের গ্রাম তৈরি করি, সে ক্ষেত্রে তারা হয়তো আর যাবে না। তিনি রোহিঙ্গাদের জন্য আইডিপি ভিলেজ করার কথা বলেছেন।

প্রথম আলো: মিয়ানমার কিন্তু আগেই গৃহহীন রোহিঙ্গাদের অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত লোকজনের শিবিরে (আইডিপি ক্যাম্প) নিয়েছে।
আসাদুজ্জামান খান: তিনি কিন্তু আইডিপি ক্যাম্পের কথা বলেননি। আইডিপি ভিলেজ করার কথা বলেছেন। পুনর্বাসনের জন্য সব ধরনের সুবিধা দিয়ে এসব লোকজনকে একটা নির্দিষ্ট জায়গায় রাখার কথা বলেছেন।

প্রথম আলো: আপনার এই সফরের সময় ১০ দফার যে সিদ্ধান্ত হয়েছিল, তা থেকে কি তারা সরে এসেছে? বিশেষ করে কফি আনান কমিশনের সুপারিশের পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন আর রোহিঙ্গা ঢল থামাতে তাদের অঙ্গীকারের বিষয়টি ওই ১০ দফায় ছিল। পরে মিয়ানমার আপনার সফর নিয়ে যে বিজ্ঞপ্তি প্রচার করেছে, তাতে এ প্রসঙ্গগুলো নেই।
আসাদুজ্জামান খান: ওই প্রসঙ্গগুলো মিয়ানমার বাদ দিয়েছে। অথচ এসব ছিল আলোচনার পর দুই পক্ষের অভিন্ন সিদ্ধান্ত। আমাদের রাষ্ট্রদূত জানতে চাইলেন কী করব। রাষ্ট্রদূতকে বললাম, কফি আনান কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের বিষয়টি যদি উল্লেখ না থাকে তবে আলোচনার সম্মত বিবরণী সই করবেন না। যেহেতু বিজ্ঞপ্তিতে ওটা ছিল না, তাই আমরা সই করিনি।

প্রথম আলো: মিয়ানমার ঘুরে এসে সমস্যা সমাধানে দেশটির অবস্থানকে কীভাবে দেখেন?
আসাদুজ্জামান খান: দেখুন, আন্তর্জাতিক চাপ সরে গেলে মিয়ানমার কিছুই করবে না। সে জন্যই তো আমরা ওটাতে (সম্মত কার্যবিবরণী) সই করিনি। আমাদের স্পষ্ট বক্তব্য, আনান কমিশনের বিষয়টি লিখতে হবে।

প্রথম আলো: রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমার সেনাবাহিনীর যে নির্যাতন হচ্ছে, সেটা যে গণহত্যা এটা কি আলোচনায় বলেছেন?
আসাদুজ্জামান খান: গণহত্যা বলিনি। নৃশংসতা বলেছি। সু চি আমাকে বলেন, তোমরা তাদের ফেরত আসতে উৎসাহিত করো। তারা তো আসতে চায় না। আমি বলেছি, তারা কেন আসতে চায় না সেটা আপনি নিশ্চয়ই জানেন। আসার পরিবেশ নেই বলেই তারা আসতে চায় না।

প্রথম আলো: মিয়ানমারের বাসিন্দা শব্দটি যে আপনারা ব্যবহার করলেন, সেটা কি তারা খুব সহজেই মেনে নিল? মিয়ানমার তো রোহিঙ্গাদের তাদের নাগরিক বলছে না।
আসাদুজ্জামান খান: আমরা তো বলেছি, কয়েক শ বছর ধরে এদের পূর্বপুরুষ মিয়ানমারে বসবাস করেছে। তাদের জন্ম সেখানে। তারা যদি ওই দেশের বাসিন্দা না হয়, তাহলে কোথাকার বাসিন্দা?
এ প্রসঙ্গে একটা ঘটনা উল্লেখ করতেই হয়। কূটনৈতিক শিষ্টাচারের ব্যত্যয় ঘটিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর আলোচনার সময় এক জেনারেল হঠাৎ করে রোহিঙ্গাদের নিয়ে তাঁর মত দিতে শুরু করেন। তিনি বলেন, এরা বাঙালি। ব্রিটিশরা এদের কৃষিশ্রমিক হিসেবে বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারে নিয়ে এসেছিল। এরপর আমাদের রাষ্ট্রদূত জেনারেলকে বললেন, রাখাইন রাজ্য অনেকটা বিস্তৃত ছিল চট্টগ্রাম পর্যন্ত। এরা যেই ভাষায় কথা বলে, সেটা বাংলা ভাষা নয়। এটা রাখাইন অঞ্চলের ভাষা। এরপর সেই জেনারেল চুপসে গেলেন।

প্রথম আলো: মিয়ানমার কি আরসার কোনো তালিকা বাংলাদেশকে দিয়েছে?
আসাদুজ্জামান খান: আমাকে একটা তালিকা দেওয়ার কথা তারা বলেছে। পুলিশের মহাপরিদর্শককে (আইজিপি) প্রশ্ন করে জেনেছি, তার কাছে আরসার একটি তালিকা দেওয়া হয়েছে, যা পূর্ণাঙ্গ নয়।

প্রথম আলো: কয়জনের তালিকা দেওয়া হয়েছে?
আসাদুজ্জামান খান: উনারা ৫০০ জনের তালিকার কথা বলেন। কিন্তু আইজিপি ২০০ জনের কথা জানিয়েছেন। তবে আমি নিশ্চিতভাবে এটা জানি না।

প্রথম আলো: সীমান্তে ভূমিমাইন পুঁতে রাখার বিষয়টি কি আলোচনায় তুলেছিলেন?
আসাদুজ্জামান খান: জঙ্গিরা ভূমিমাইন পুঁতে রাখতে পারে। তবে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও পুলিশ সীমান্ত থেকে ভূমিমাইন সরিয়ে নেবে।

প্রথম আলো: সমস্যা সমাধানের ব্যাপারে আপনি কতটা আশাবাদী?
আসাদুজ্জামান খান: দেখুন, অভিজ্ঞতায় বলে, খুব সহজে এরা কিছু করবে না। চাপটা যদি অব্যাহত থাকে, তাহলে অবশ্যই করতে বাধ্য হবে।

প্রথম আলো: আপনাকে ধন্যবাদ।
আসাদুজ্জামান খান: আপনাদেরও ধন্যবাদ।

 

সূত্র: প্রথম আলো

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন