আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় হবে ‘ইমাম মুসলিম’
নিজস্ব প্রতিবেদক:
ওমাইর এতিমখানা ও ইমাম মুসলিম (রহ:) ইসলামিক সেন্টার পরিদর্শন শেষে এক বিশেষ অনুষ্ঠানে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান লে. কর্ণেল ফোরকান আহমদ বলেছেন, একদিন আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হবে ইমাম মুসলিম (রহ:) ইসলামিক সেন্টার। এটা সম্ভব এবং খুব দ্রুত করা দরকার। তবে এজন্য আমাদের দরকার মন-মানসিকতার।
ইমাম বুখারী (রহ:) জামে মসজিদে রবিবার দুপুরে অনুষ্ঠানে তিনি আরও বলেন, আমাকে ক্ষমতা দেয়া হয়নি। দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। সকল ক্ষমতার মালিক একমাত্র আল্লাহ। কক্সবাজারকে সাজাতে সার্বিক পরিকল্পনা নেয়ার দায়িত্ব আমার। সকলের সহযোগিতায় তা মানুষের কল্যাণে বাস্তবায়ন করা হবে।
অনুষ্ঠানে কউক চেয়ারম্যান বলেন, দেশে এখনো মীর জাফরের উত্তরসুরীরা রয়েছে। যে কোন ভাল কাজ করলে অভিযোগ আসবে, এটা স্বাভাবিক। এসব মীর জাফরদের ভয় না করে প্রধানমন্ত্রীর হাতকে শক্তিশালী করতে এগিয়ে যেতে হবে।
বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সরকারের উন্নয়নের ধারাকে অব্যাহত রাখতে আমরা ইমাম মুসলিম থেকে সহযোগিতা করতে পারি। আর এ সযোগিতা হলো-এতিম অনাথ শিশুদের রাষ্ট্র পরিচালনার দক্ষ হাতিয়ার হিসেবে তৈরি করা।
লে. কর্ণেল ফোরকান আহমদ আরও বলেন, ভাল মানুষের বিরুদ্ধে প্রপাগাণ্ডা চালানোর লোকের অভাব নেই। কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব নেয়ার চার মাসে আমার বেশ অভিজ্ঞতা হয়েছে। এখানে চলা খুব কঠিন। তবে এখানের প্রতি ইঞ্চি মাটি, প্রত্যেক মানুষকে আমি চিনি। সুতরাং আমাকে ধাক্কা দেয়ার চেষ্টা করে ফায়দা হবেনা। আমি সততা ও ন্যায়ের পথ থেকে বিন্দু পরিমাণও নড়বোনা।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান বলেন, ইমাম মুসলিম প্রতিষ্ঠার শুরু থেকে যে ইতিহাস রয়েছে, তাতে একটি বই লিখা যাবে। প্রতিষ্ঠাতা পরিচালককে নিয়ে সাংবাদিকরা যা করেছেন তা ঠিক করেননি। আমরা দিনে ৫জন মানুষকে খাওয়াতে পারিনা। অথচ ইমাম মুসলিম প্রতিনিয়ত ৭/৮’শ এতিম-অনাথ, অসহায়কে খাওয়াচ্ছে। তাদের পড়াশোনার ভার বহন করছে। ১৭ বছরে পদার্পণ করে আলাদিনের চেরাগের মতো মাদ্রাসাটি দৃষ্টান্তমূলক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। যারা মাদ্রাসা ও মসজিদ নিয়ে ষড়যন্ত্র করেছিল তারাও মাদ্রাসার বর্তমান সুন্দর কার্যক্রম দেখে অবাক হয়ে যায়। এটা একদিন বিশ্ববিদ্যালয় হবে। এখানের এতিম শিশুরা একদিন বহিরবিশ্বে গিয়ে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হবে। সুতরাং মাদ্রাসা ও পরিচালকের বিরুদ্ধে কুচক্রী মহলের মিথ্যে সংবাদে কাউকে বিভ্রান্ত না হয়ে এতিমদের সহযোগিতায় এগিয়ে আসতে হবে।
অনুষ্ঠানে কক্সবাজার জেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি জহির আহমদ সিকদার বলেন, দক্ষিণ মুহুরী পাড়া এলাকাটি এক সময় সন্ত্রাসীদের আস্তানা ছিল। ২০০০ সালের দিকে মাদ্রাসাটি প্রতিষ্ঠা হওয়ার সন্ত্রাসীরা আতংকিত হয়ে পড়ে। তারা অপরাধ কার্যক্রম চালাতে না পেরে এক পর্যায়ে এখানকার মসজিদ তালাবদ্ধ করে দেয়। পরে তৎকালীন ঝিলংজা ইউপি চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান সহ স্থানীয়রা তালা ভেঙ্গে নামায আদায় করেন।
তিনি আরও বলেন, এ মাদ্রাসায় প্রতিনিয়ত কুরআনের চর্চা হয়। পবিত্র কুরআনের বদৌলতে আজ এলাকার জমির দাম বেড়েছে। ইমাম মুসলিমকে নিয়ে আমরা গর্ববোধ করি।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ইমাম মুসলিম (রহ:) ইসলামিক সেন্টারের নির্বাহী পরিচালক মাওলানা আসাদুজ্জামান। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, ঝিলংজা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান টিপু সুলতান, কক্সবাজার আদর্শ মহিলা কামিল (মাস্টার্স) মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা ফরিদ আহমদ চৌধুরী।
টিপু সুলতান কিছু সাংবাদিককে অভিযোগ করে বলেন, প্রতিষ্ঠানটি শুরু পর থেকেই কিছু সাংবাদিক এটার পেছনে লেগে আছে। এখানে শতভাগ দ্বীনের সুন্দর শিক্ষা দেয়া হচ্ছে-এটাতে কোন সন্দেহ নেই। আলেম ও এতিমদের জন্য আমরা যা করতে পারিনি-ইমাম মুসলিম তা করেছে। এ প্রতিষ্ঠানের কারণে আজ ঝিলংজা ইউনিয়ন আলোকিত হয়েছে।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব ইমাম মুসলিম (রহ:) ইসলামিক সেন্টারের সভাপতি কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি এডভোকেট একে আহমদ হোছাইন।
সভাপতি তার সমাপনী বক্তব্যে বলেন, ইমাম মুসলিমে কুরআন হাদিসের শিক্ষা দেয়া হচ্ছে। পাশাপাশি আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত হচ্ছে এখানের শিক্ষার্থীরা। এখানে এর বাইরে কিছু নেই। সত্যের পক্ষে, দ্বীনের পক্ষে কাজ করে বলেই আমরা বুক ফুলিয়ে ইমাম মুসলিমে আসি। কক্সবাজারের অতীতের জেলা প্রশাসক, সরকারী বিভিন্ন কর্মকর্তারা ইমাম মুসলিম পরিদর্শন করেছেন। তারা এখানের কার্যক্রম স্ব-চক্ষে দেখেছেন। সুতরাং উন্নত জাতি গঠনের জন্য এটাকে টিকিয়ে রাখতে হবে। আমি এ প্রতিষ্ঠান আপনাদের সকলের হাতে তুলে দিলাম।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মাঝে উপস্থিত ছিলেন-জামেয়া দারুল মা’আরিফ আল ইসলামিয়া চট্টগ্রাম’র উপ-পরিচালক ও উচ্চতর আরবী সাহিত্যের উস্তাদ আল্লামা ফুরকানুল্লাহ খলিল, ইমাম মুসলিম (রহ:) ইসলামিক সেন্টারের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক হাফেজ মাওলানা ছালাহুল ইসলাম, মক্কা নগরীতে প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক নিযুক্ত বিশেষ দা’য়ী মাওলানা ওয়ালী উল্লাহ শওকী, জামেয়া ইসলামিয়া দারুচ্ছুন্নাহ হ্নীলা’র পরিচালক মাওলানা আফসার উদ্দিন চৌধুরী, ঝিলংজা ইউনিয়ন পরিষদের ৪নং ওয়ার্ডের মেম্বার কুদরত উল্লাহ সিকদার, ইমাম মুসলিমের নির্বাহী পরিচালক ক্বারী মাওলানা ওসমান, মাদ্রাসার শাইখুল হাদিস হাফেজ মাওলানা আবদুর রহিম রাহী, কউক চেয়ারম্যানের ব্যক্তিগত সহকারী রাজিবুল হক রিকু ও রুস্তম উদ্দিন, বাংলাবাজারস্থ আইডিয়েল ইন্সটিটিউট’র সভাপতি এম, দেলোয়ার হোসেন সহ মাদ্রাসার শিক্ষক-শিক্ষিকা ও ছাত্র-ছাত্রীরা।
অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন মাদ্রাসার তাফসীর বিভাগের বিভাগীয় পরিচালক মাওলানা তাহের সাঈদ। অনুষ্ঠানে ছাত্র-ছাত্রীরা পবিত্র কুরআন তেলাওয়াত, ইসলামী সঙ্গীত ও বাংলা-ইংরেজীতে বক্তব্য প্রদান করেন।
অনুষ্ঠান শেষে প্রধান অতিথি ও বিশেষ অতিথির হাতে ইমাম মুসলিম (রহ:) ইসলামিক সেন্টার এবং ওমাইর এতিমখানা’র পক্ষ থেকে মানপত্র ও ক্রেস্ট তুলে দেয়া হয়। এরপর প্রধান অতিথি কউক চেয়ারম্যান লে. কর্ণেল (অব:) ফোরকান আহমদ ওমাইর এতিমখানার পরিদর্শন বইতে মতামত পেশ করে স্বাক্ষর করেন।