Notice: Trying to get property 'post_excerpt' of non-object in /home/parbatta/public_html/wp-content/themes/artheme-parbattanews/single.php on line 53

Notice: Trying to get property 'guid' of non-object in /home/parbatta/public_html/wp-content/themes/artheme-parbattanews/single.php on line 55

আদিবাসী বিতর্ক

১।। সমাধানহীন জাতীয় বিতর্কে আরেকটা নতুন পালক

মাহবুব মিঠু

মাহবুব মিঠু

আদিবাসী বিতর্কটা বাংলাদেশে আর পাঁচটা সমাধানহীন বিতর্কের মতোই ধীরে ধীরে জনপ্রিয়তা লাভ করছে। সেই সাথে বিভিন্ন পক্ষ থেকে বিতর্কের সমাধানের চেয়ে বরং এটিকে রাজনীতিকরণ করা শুরু হয়েছে। ফলে আদিবাসী ইস্যুটা সমাধানের চেয়ে দিনকে দিন জটিলতার দিকেই এগুচ্ছে বলে মনে হয়। এই পরিস্থিতিতে শুধু বাংলাদেশে নয়, বরং সমগ্র এশিয়ায় ক্রমশঃ এটা একাধারে এক পক্ষের ধারণায় অবহেলিত এবং অন্য পক্ষের ধারণায় একটা বিতর্কিত চাপিয়ে দেয়া ইস্যু হয়ে পড়েছে।

মূলতঃ অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, কানাডা, আমেরিকা কিংবা অন্যান্য ইউরোপীয় উপনিবেশবাদী রাষ্ট্রগুলোর মতো এশিয়ার বিতর্কটা সাদা কালোর মতো পরিস্কার নয়। এই সুযোগটাকে ব্যবহার করে এক পক্ষের মতে কিছু ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠী এখান থেকে ফায়দা নেবার চেষ্টায় ব্যস্ত। কোন জাতি আদিবাসী হিসেবে স্বীকৃতি পেলে আন্তর্জাতিক আইনের আওতায় তারা কিছু বাড়তি সুযোগ সুবিধা পায়। যেমন জমির উপর কিছু বাড়তি অধিকার এবং অন্যান্য আরো কিছু সুযোগ সুবিধা।

বাঙ্গালীদের বড় অংশ মনে করে, পাহাড়ীদের এই দাবী অন্যায্য এবং এটা মানা হলে যে সুযোগ সুবিধাগুলো তারা ভোগ করবেন সেটা একদিকে অন্যায় এবং আমাদের রাষ্ট্রিয় অখণ্ডতা ভবিষ্যতে হুমকীর মুখে পড়বে। অন্যদিকে, আদিবাসী দাবীদাররা মনে করছেন, অস্পষ্টতার সুযোগে রাষ্ট্রের ডোমিনেন্ট গ্রুপ তাদেরকে ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করছে।

প্রায় ৪/৫ বছর আগে গুরুত্বসহকারে বিতর্কের বিষয়টা আমার মাথায় ভর করে বসে। তখন থেকে ব্যক্তিগত উদ্যোগে এক ধরনের তথ্যানুসন্ধানে নেমে পড়ি। এটা করতে গিয়ে  একটা অদ্ভুদ সত্য উপলব্ধি করি যেটা বেশ লজ্জার। তথ্য প্রমাণ সংগ্রহের জন্য আমি বিভিন্ন ব্যক্তিকে ফোনে এবং মেইলে যোগাযোগ করি। এদের বেশীরভাগ লোকই ইতিমধ্যে আদিবাসী বিতর্কের পক্ষে এবং বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে ফেলেছেন। বিভিন্ন পত্রিকায় অপর্যাপ্ত তথ্যসহ লেখাসহ ব্লগ এবং ফেইসবুকেও ভারি ভারি প্রচারণা চালিয়েছেন। অথচ এদের অনেকের কাছেই পর্যাপ্ত তথ্যই নেই। অবশ্য কিছু শুভাকাঙ্খীর কাছ থেকে সত্যিকার অর্থে যথেষ্ট রেফারেন্স পেয়েছি। কৃতজ্ঞতা তাদের প্রতি।

এর বাইরে অস্ট্রেলিয়ার একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নের সুযোগে সেখানকার লাইব্রেরিসহ বিশ্বের বিভিন্ন অনলাইন লাইব্রেরিতে বিনে পয়সায় ঢুঁ মারার সৌভাগ্য হয়েছিল। এমনকি অস্ট্রেলিয়াতে আদিবাসী নিয়ে বর্তমানে যারা কাজ করছেন তাদের সঙ্গে ব্যাক্তিগত যোগাযোগের মাধ্যমে আদিবাসী ধারণার উপরে একটা ধারণা লাভের চেষ্টা করি। তার বাইরেও পরিচিত বিভিন্ন বন্ধু বান্ধবের সাথে আলাপচারিতায় বাংলাদেশে আদিবাসী প্রসঙ্গে তাদের নিজস্ব ধারণাগুলো জানার মাধ্যমে আমাদের দেশে আদিবাসী বিতর্কের বহুমাত্রিক রূপটা উপলব্ধি করার চেষ্টা করি। এর বাইরে বিভিন্ন জনের ফেইসবুক, ব্লগে ঘুরে এসে সকলের প্রতিক্রিয়া দেখার চেষ্টা করেছি।

এভাবে একদম সাধারণের ব্যাক্তিগত মতামত থেকে শুরু করে একাডেমিক আলোচনা এবং বিভিন্ন আদিবাসী সংগঠন, আদিবাসী বিষয়টা নিয়ে ভাবছেন এমন বু্দ্ধিজীবী সবোর্পরি আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর রচিত আদিবাসী বিষয়ক বিভিন্ন প্রকাশনাগুলোকে আলোচনার ভিত্তি হিসেবে ধরা হয়েছে। আমার দীর্ঘদিনের প্রচেষ্টার সম্মিলিত তথ্যের ভিত্তিতে লেখাগুলো সাজান। আমি বলব না যে, এটা একটা তথাকথিত ‘নিরপেক্ষ’ লেখা। নিরপেক্ষ বলতে কোন শব্দ থাকলেও ব্যবহারিক ক্ষেত্রে কোন কোন পক্ষের স্বীকৃতি নাও থাকতে পারে। ‘নিরপেক্ষ’ শব্দটাও মাঝে মাঝে ‘আদিবাসী’ সংজ্ঞার চেয়েও বেশী অস্পষ্ট এবং ক্ষেত্র বিশেষে বিতর্কিত হয়ে পড়ে।

তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে লিখতে গেলে কখনো কখনো সেটা এক পক্ষের সম্পূর্ণ বিপরীতে যেতেই পারে। তার কাছ থেকে নিরপেক্ষ খেতাব আশা করা যায় না। যার যার স্বার্থ অনুযায়ী এক এক যুক্তি একেক জনের কাছে নিরপেক্ষ আবার কখনো পক্ষপাতদুষ্ট। আসলে আমরা মুখে ‘নিরপেক্ষ’ শব্দটা ব্যবহার করলেও চিন্তায় থাকে ‘ভারসাম্যের’ ধারনা। ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থান সব সময় সত্যের পক্ষে যায় না। এভাবে নিরপেক্ষ শব্দটা মাঝে মধ্যেই আপেক্ষিক হয়ে পড়ে। তাই সচেতনভাবে আমার উদ্যোগকে ’নিরপেক্ষ’ না বলে আমি ‘যুক্তি নির্ভর’ বলতে বেশী স্বাচ্ছন্দবোধ করি। যুক্তিগুলো দাঁড় করানোর চেষ্টা হয়েছে তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে। লেখাগুলো ছাপা হলে অনেকেই হয়তো অনেকভাবে তাদের প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করবেন। আমি তাদের অনুরোধ জানাব, আমিব্যাক্তিগতভাবে ভারত নাকি পাকিস্তানের দালাল নাকি হোপলেস সে প্রসংগে না গিয়ে বিষয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ থেকে লেখার সবল এবং দুর্বল দিকগুলো তুলে ধরবেন। সকলের সম্মিলিত উদ্যোগে বিতর্কের অবসান হোক। বিদ্যমান বিভিন্ন রাজনৈতিক বিতর্কের সাথে নতুন কোন সমাধানহীন বিতর্কের সূচনা করা আমাদের কাম্য নয়।

২।। বারডেন অব প্রুফ

(একটা সময়ে সর্বসম্মতভাবে পাহাড়ে বসবাসকারীদের বলা হতো, প্রান্তিক জনগোষ্ঠী, জুম্ম জনগণ, পাহাড়ী, উপজাতি, ট্রাইবাল পিপল, ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠী। হঠাৎ করে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে এবং পাহাড়ী অল্প কিছু বিচ্ছিন্নতাবাদীদের স্বাধীনতার আন্দোলনকে যৌক্তিকতা দেবার অভিপ্রায়ে সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার অংশ হিসেবে আদিবাসী বিতর্কটাকে সামনে নিয়ে আসা হয়েছে।)

বারডেন অব প্রুফ হচ্ছে সিভিল ষ্ট্যান্ডার্ড প্রুফ। ক্রিমিনাল ষ্টান্ডার্ডে যেখানে ‘Beyond reasonable doubt’প্রমাণ হতে হবে আলোচিত ক্রিমিনাল অভিযোগ কিম্বা অমিমাংসিত কোন ঘটনা সত্য অথবা মিথ্যা। সংজ্ঞা অনুযায়ী,

A duty placed upon a civil or criminal defendant to prove or disprove a disputed fact.

বাংলাদেশ অভ্যুদয়ের সেই আদিপর্ব থেকে বিভিন্নভাবে পাহাড়ীদের পরিচয় সম্পর্কিত বিতর্ক লেগেই আছে। এক সময় শেখ মুজিব বলেছিলেন, তোমরা সবাই বাঙালী হয়ে যাও। যেটা ছিল সম্পূর্ণ বর্ণবাদী বক্তব্য। পাহাড়ীরা এখন জোরেশোরে দাবী করছে যে তারা এই এলাকার আদিবাসী। সমতলের অধিবাসী এবং সরকার বলছে, না, তারা সেটা নয়। এই পটভূমিতে মূলতঃ সরকারের দায়িত্ব ‘বারডেন অব প্রুফের’ আওতায় তাদের অবস্থান প্রমাণ করার। এবং অবশ্যই দাবীদার পাহাড়ী গোষ্ঠীকেও তাদের দাবীর প্রতি যথেষ্ট প্রমাণ হাজির করতে হবে। বাস্তবতা হচ্ছে, উভয় পক্ষের বিতর্কটা প্রায়শই যুক্তি কিম্বা তথ্য প্রমাণ নির্ভর না হয়ে হয়ে পড়ছে তর্ক নির্ভর কিংবা প্রচ্ছন্ন হুমকি নির্ভর। পাহাড়ীদের একটা অংশ থেমে থেমে পুণরায় যুদ্ধ শুরুর হুমকি দিচ্ছে। প্রকারান্তরে এর মাধ্যমে তারা পার্বত্য অঞ্চলে সেনাবাহিনী স্থায়ীভাবে রাখার পক্ষেই গ্রাউন্ড তৈরী করে দিয়েছে। তাদের দাবীকে আইনগতভাবে প্রমাণের চেষ্টা না করে কিছু সন্ত্রাসী পাহাড়ীর যুদ্ধ শুরুর হুমকি প্রমাণ করে যে, ঐ অঞ্চলে সেনাবাহিনীর উপস্থিতি কতোটা জরুরী। অতএব, বিষয়টা যতোক্ষণ ‘বারডেন অব প্রুফের’ মধ্যে থাকবে ততোক্ষণ সেটাকে কেন্দ্র করে অব্যাহত বিতর্ক লেগেই থাকবে। সৃষ্টি হবে নানা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার। সেই সুযোগে দেশের ভিতর এবং বাহির থেকে নানা পক্ষ নানাভাবে স্বার্থ হাসিলের চেষ্টা চালাবে।

আদিবাসীর পক্ষে যারা আছেন, তাদের প্রধান হাতিয়ার হচ্ছে কিছু আন্তর্জাতিক সংস্থা কর্তৃক প্রণীত কিছু ধোঁয়াশাচ্ছন্ন, অপরিস্কার ধারণাপত্র এবং বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর (বাঙ্গালী) কিছু ঐতিহাসিক আন্দোলন। ঘুরিয়ে ফিরিয়ে তারা বলতে চাইছেন, যে জাতি ৫২, ৬৯ এবং ৭১ এর আন্দোলন করেছে, সেই জাতি কেন পাহাড়ীদের দাবী মেনে নেবে না? এটা কি মামার বাড়ীর আবদার? উল্লেখিত আন্দোলনগুলোর একটা যৌক্তিক প্রেক্ষাপট ছিল। যতোদিন পাহাড়ীরা ‘আদিবাসী’ হিসেবে প্রমাণিত না হবেন, ততোদিন এই সব আবেগের স্থানে সুঁড়সুড়ি দিয়ে সেটা মেনে নিতে প্ররোচিত করা ইমোশনাল ব্লাকমেইল ছাড়া আর কি কিছু নয়। দু’দিন পরে কেউ স্বাধীনতা চেয়ে বসলে একই যুক্তিতে সেটাও দিয়ে দিতে হবে। তাই নয় কি? প্রথমেই তাদের দাবীর প্রতি প্রশ্নহীন প্রমাণ হাজির করতে হবে। কেবল তারপরেই তাদের আদিবাসী স্বীকৃতির দাবী যৌক্তিকতা পাবে। তার বাইরে এই দাবীকে কেন্দ্র করে যে কোন অরাজকতা আদতে নৈরাজ্য সৃষ্টির মতো চরম আইন বিরোধী কাজ হিসেবেই বিবেচিত হওয়া উচিত। সেই সাথে এই গুরুত্বপূর্ণ অমিমাংসিত ইস্যু মিমাংসা না হওয়া পর্যন্ত যে সমস্ত পত্রিকা এবং তথাকথিত সুশীল সমাজ তাদেরকে ‘আদিবাসী’ হিসেবে তুলে ধরে রাষ্ট্রের অবস্থানের বাইরে গিয়ে দেশের মধ্যে নৈরাজ্য সৃষ্টির পরোক্ষ ইন্ধন দেবে, তাদেরকে রাষ্ট্র বিরোধী আইনের আওতায় এনে বিচার করা উচিত।

আদিবাসী বিতর্কে প্রভাবশালী রাষ্ট্রগুলো এবং তাদের চালিত বিশ্ব সংস্থাগুলোর তৎপরতা যতোটা না প্রশংসনীয় তারচেয়ে বেশী তাদের সেই সব দেশের সত্যিকার আদিবাসীদের উপরে তাদের চালিত ‘অপরাধের’ প্রায়শ্চিত্য করার চেষ্টা। পশ্চিমারা তাদের মজ্জাগত আগ্রাসী, ঔপনিবেশিক চরিত্র থেকে অতীতকাল থেকে সারা বিশ্বে যখনই যেখানে সুযোগ পেয়েছে হামলে পড়েছে। একটা সময়ে তারা অষ্ট্রেলিয়া, আমেরিকা, কানাডায় বসবাসকারী আদিবাসীদের নির্মূলের উদ্দেশ্যে নির্বিচারে হত্যা করেছে। তাদের চালিত গণহত্যা এবং অত্যাচারের ফলে আদিবাসীদের সাথে তাদের যে মানসিক দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে তা আজো যায়নি। এই অবিশ্বাসের ফলে সেখানকার আদিবাসীরা এখনো মূলধারা থেকে বিচ্ছিন্ন থাকতে ভালবাসে। বিলুপ্তপ্রায় কিংবা কোনঠাসা সেই জাতিগোষ্ঠীকে কিছুটা সুবিধা দিয়ে পশ্চিমা শক্তি তাদের পূর্ব পুরুষের করা অপরাধকে কিছুটা লঘু করতে চায়। তাদের নিয়ন্ত্রিত আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো কর্তৃক প্রণীত আদিবাসী সম্পর্কিত ধারণাপত্রে সেই দায় মোচনের ছাপ সুস্পষ্ট। তারা সেখানে কবে এসেছিল, কিভাবে সেখানকার জনগোষ্ঠীকে মেরেছিল সেগুলো খুব পুরাতন ঘটনা নয়। তাদের পরিস্থিতির সাথে আমাদের দেশের পরিস্থিতির বিস্তর ফারাকে আছে।

আদিবাসী ধারণার বিকাশ

‘আদিবাসী’ প্রত্যয়টি মূলত: প্রথমদিকে পরিব্রাজক এবং একাডেমিক্যালি নৃবিজ্ঞানীদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু ছিল। একটা সময়ে ইবনে বতুতা কিংবা কলম্বাসের মতো পরিব্রাজকরা বিশ্ব চষে বেড়িয়েছিলেন। মর্গান, ম্যালিনোস্কিসহ আরো অনেক নৃবিজ্ঞানীদের আগ্রহ ছিল এই সব জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রার উপরে। মর্গানের ‘আদিম সমাজ’ বইটি এখনো আদিবাসী কেন্দ্রিক ধারণায়নে একটা মূলধারার বই হিসেবে মেনে নিতে হবে। তবে আদিবাসী বিষয়ক অধিকার সম্বলিত আলোচনার বিকাশ এবং বিস্তৃতি লাভ করে মূলত: অষ্ট্রেলিয়া, আমেরিকা এবং কানাডার আদিবাসী আলোচনাকে ঘিরে।

বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার অপরিস্কার ধারণাপত্রের উপর ভিত্তি করে ইউরোপের কোন কোন বসতি স্থাপনকারীরাও এখন নিজেদের আদিবাসী দাবী করছেন। এমনকি ইরাকের কুর্দি কিংবা কোথাও কোথাও ধর্মীয় পরিচয়ের সংখ্যালঘুরাও ইচ্ছে করলে নিজেদের আদিবাসী দাবী করতে পারেন। এই সংস্থাগুলোর অপরিস্কার ব্যাখ্যার কারণে বর্তমানে ‘আদিবাসী’ এবং ‘এথনিক মাইনরিটির’ মধ্যকার পার্থক্যগুলো ক্রমশ: সংকুচিত হয়ে পড়েছে। যে কোন এথনিক মাইনরিটিও মন চাইলেই নিজেদের আদিবাসী হিসেবে দাবী করে বসতে পারে।

আরেকটি পক্ষ দাবী করছে, সারা দেশের বিবেচনায় জুম্মরা আদিবাসী না হলেও পাহাড়ী অঞ্চলে কারা আগে বসতি গড়ে? অর্থাৎ অষ্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, আমেরিকা, কানাডায় আদিবাসীরা জাতীয় ভিত্তিতে। কিন্তু বাংলাদেশ ভারতে কিছুটা আঞ্চলিক ভিত্তিতে স্বীকৃতি দেবার চেষ্টা করা হচ্ছে। তাহলে ময়মনসিংহ কিংবা উত্তর বঙ্গের সমতলে বাস করা ক্ষুদ্র জাতিসত্ত্বাগুলোর পরিচয় কি হবে? তারা কি দাবী পরিহার করবে? তাছাড়া আঞ্চলিক ভিত্তিতে আদিবাসী নির্ধারণ করা কি হাস্যকর নয়? একটা দেশের ক্ষুদ্র একটা অঞ্চলে বাইরে থেকে এসে নতুন বসতি গড়লে সেকি আদিতে বাস শুরু করেছে সেটা বলা যায়? তাহলে বরিশাল কিংবা অন্য অঞ্চলে নতুন চর জেগে উঠলে সেখানে কোন ক্ষুদ্র জাতিসত্ত্বা বাস করা শুরু করলে আজ থেকে ৫০ কি ১০০ বছর পরে তারাও কি দাবী করবে যে, আমরা আদিবাসী? কিম্বা এমন কোন অকাট্য প্রমাণ কি আছে যে, পার্বত্য অঞ্চলে এখনকার আদিবাসী দাবীদাররাই প্রথম ঘাঁটি গাড়ে?

♦ চলবে

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: আদিবাসী, আদিবাসী দিবস
Facebook Comment

One Reply to “আদিবাসী বিতর্ক”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন