আঘাত হানতে শুরু করেছে ঘূর্ণিঝড় কোমেন
স্টাফ রিপোর্টার:
বুধবার মধ্যেরাতের পর ঘূর্ণিঝড় কোমেনের অগ্রভাগ কক্সবাজার ও সেন্টমার্টিন উপকূলে আঘাত হানতে শুরু করেছে। উত্তর-পূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় অবস্থানরত গভীর নিম্নচাপটি সামান্য উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর এবং ঘনীভূত হয়ে একই এলাকায় ঘূর্ণিঝড় ‘কোমেন’এ পরিণত হয়েছে। তবে বৃহস্পতিবার দুপুর বা বিকেল নাগাদ এ ঘূর্ণিঝড়ের মূল অংশ কক্সবাজার উপকূল অতিক্রম করবে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সেন্টমার্টিনে এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি ঘরবাড়ি লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে। নিম্নচাপের কারণে সাগর উত্তাল থাকায় কক্সবাজার ও চট্টগ্রামে ৭ নম্বর বিপদসংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। এছাড়া মংলা ও পায়রা বন্দরকে ৫ নম্বর সতর্কতা সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
স্থানীয় প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড় কোমেনের কারণে উপকূলীয় এলাকা থেকে জনসাধারণকে নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার কক্সবাজারে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। রাত আটটায় কক্সবাজার জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে এক জরুরি বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়। বন্ধ ঘোষিত স্কুলকলেজকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। উপদ্রুত এলাকায় খোলা হয়েছে ৯৬টি আশ্রয়কেন্দ্র। ট্যুরিষ্ট পুলিশ এরই মধ্যে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত এলাকা থেকে সকল পর্যটককে সরিয়ে নিয়েছে।
এদিকে বরিশালে সব উপজেলা প্রশাসনকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছে জেলা প্রশাসন। এছাড়া ছোট লঞ্চ চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে বিআইডব্লিউটি। পটুয়াখালীতে সন্ধ্যা থেকে থেমে থেমে ঝড়ো হাওয়ার সঙ্গে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। এখনও বিভিন্ন এলাকায় বিচ্ছিন্ন রয়েছে বিদ্যুৎ সংযোগ। খুলনায় দুর্যোগ মোকাবেলায় প্রতিটি উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা ও চেয়ারম্যানদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। প্রস্তুত করা হয়েছে সাইক্লোন সেন্টারগুলো।
এছাড়া মংলায় সন্ধা থেকে ঝড়ো হাওয়ার সঙ্গে বৃষ্টি হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় কোমেন মোকাবেলা লক্ষ্মীপুর সদর, রামগতি, কমলনগর ও রায়পুরের মেঘনা নদী এলাকার লোকজনকে নিরাপদে সরিয়ে যাওয়ার নিদের্শ দেয়া হয়েছে। মেঘনা নদীর জেলে নৌকা ও ইঞ্জিন চালিত ট্রলারসহ সকল নৌ-যান নিরাপদে স্থানে সরিয়ে নিতে বলা হয়েছে। নোয়াখালীর উপকূলীয় হাতিয়া, সুবর্ণচর, কবিরহাট ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করা হয়েছে। দুর্গম চর ও দ্বীপ এলাকার লোকজনকে নিকটস্থ আশ্রয়কেন্দ্র সরিয়ে আনা হচ্ছে। বাতাসের তীব্রতা বাড়ছে, সেই সাথে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হচ্ছে।
আবহাওয়া অফিস জানায়, নিম্নচাপটি বুধবার সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১৮০ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার থেকে ১৩৫ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে, মংলা থেকে ১৯০ কিলোমিটার দক্ষিণপূর্বে এবং পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে ১২৫ কিলোমিটার দক্ষিণপূর্বে অবস্থান করছিল। নিম্নচাপ কেন্দ্রের ৪৮ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৫০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়োহাওয়ার আকারে ৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়ছে।
ঝড়ের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, ভোলা, বরিশাল, পটুয়াখালী, বরগুনা, খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা এবং জেলাগুলোর অদূরবর্তী দ্বীপ ও চর স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৩-৪ ফুট বেশি উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারগুলোকে অবিলম্বে নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যেতে বলা হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, খুলনা, ঢাকা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের অধিকাংশ এলাকা এবং রাজশাহী, রংপুর ও সিলেট বিভাগের অনেক স্থানে অস্থায়ী দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারি থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে।