আওয়ামী লীগ কি জেএসএসের টার্গেটে পরিণত হয়েছে?

Bandarban pic-4.2.2017 (1)

নিজস্ব প্রতিবেদক, বান্দরবান:
আওয়ামীলীগ নেতা মংপু অপহরণের আট মাসের মাথায় আবারো আওয়ামীলীগ নেতা অপহরণের অভিযোগ পাওয়া গেছে জেএসএস এর সামরিক শাখার (সাবেক শান্তি বাহিনী) বিরুদ্ধে।

শুক্রবার রাত সাড়ে নয়টার দিকে রোয়াংছড়ি উপজেলায় নোয়াপতং ইউনিয়নে ৭নং ওয়ার্ড আ’লীগের সহ-সভাপতি ও বাঘমারা ভিতর পাড়ার কারবারী মংশৈথুই মারমাকে অস্ত্রের মুখে অপহরণ করে জেএসএস’র সামরিক শাখা। এঘটনার জড়িত সন্দেহে তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ। যৌথ বাহিনী সারাদিন অভিযান চালিয়েও মংশৈথুই মারমাকে উদ্ধার করতে পারেনি।

এদিকে পুলিশ ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে স্থানীয় ইউপি সদস্য জনসংহতি সমিতির সমর্থক কেনু প্রু মারমা ও দৈনিক মুক্তবাণী পত্রিকার রোয়াংছড়ি উপজেলা প্রতিনিধি থোয়াইচা উ মারমাসহ তিনজনকে আটক করেছে। তবে এ ঘটনায় এখনো কোন মামলা দায়ের করা হয়নি।

আওয়ামী লীগের নেতা মংশৈথুই মারমার অপহরণের প্রতিবাদে আগামী সোমবার রোয়াংছড়িতে সকাল-সন্ধ্যা অবরোধের ডাক দিয়েছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ। শনিবার বিকেলে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সদর ইউপির চেয়ারম্যান চহ্লামং মারমার সভাপতিত্বে বিক্ষোভ সমাবেশ শেষে অবরোধের এ ঘোষণা দেওয়া হয়।

একই সঙ্গে অপহৃত আওয়ামী লীগ নেতাকে উদ্ধারে প্রশাসনকে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছেন নেতৃবৃন্দ। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অপহৃত নেতা উদ্ধার না হলে ৬ ফেব্রুয়ারি উপজেলায় সকাল-সন্ধ্যা সড়ক ও নৌপথ অবরোধ করা হবে বলে জানানো হয়।

awami-meeting

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, জেলার রোয়াংছড়ি উপজেলার নোয়পতং ইউনিয়নের বাঘমারা ভিতর পাড়ায় অস্ত্রধারী ৪ সন্ত্রাসী অস্ত্রের মুখে বাঘমারা ভিতরপাড়া কার্বারী (পাড়া প্রধান) মংশৈথুই মারমাকে (৪২) অপহরণ করে নিয়ে গেছে। খবর পেয়ে পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও আশপাশের এলাকাগুলোতে অভিযান চালানো করেন।

প্রত্যক্ষদর্শী বাথোয়াই মার্মা বলেন, রাত নয়টার দিকে অস্ত্রধারী সন্ত্রসীরা কারবারীকে ডেকে আনতে আমাকে পাঠায়। তারা এসময় নিজেদেরকে শান্তি বাহিনীর (জেএসএস) লোক পরিচয় দেয়।

অপহৃত কারবারী মংশৈথুই’র ছোট বোন মা চ থুই বলেন, অস্ত্রধারী সন্ত্রসীরা আমার ভাইকে হাত ও চোখ বেঁধে পাহাড়ি পথ ধরে জঙ্গলের দিকে মারতে মারতে নিয়ে যায়। কিন্তু আমরা কোন প্রতিবাদ করতে পারিনি। এসময় তারা নিরাপত্তা বাহিনীকে ঘটনা সম্পর্কে না জানাতেও নির্দেশ দেয়। তবে ঘটনার পর আমরা পাশ্ববর্তী সেনাক্যাম্পে বিষয়টি অবহিত করি।

জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক হ্লাথোয়হ্রী মারমা জানান, ইউপি নির্বাচনের পর থেকে জনসংহতি সমিতির সঙ্গে দ্বন্দ্ব চলে আসছে আওয়ামী লীগের। এ ঘটনার জের ধরে জনসংহতি সমিতির লোকজন পাড়া কারবারিকে অপহরণ করেছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, গত ইউপি নির্বাচনে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বাঘমারা ভেতর পাড়ায় জনসংহতি সমিতি ও আওয়ামী লীগ নেতা কর্মীদের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় রোয়াংছড়ি থানায় পাল্টাপাল্টি মামলা হয়। জনসংহতি সমিতির দায়ের করা মামলায় অপহৃত পাড়া কারবারী আসামী ছিলেন। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের দায়ের করা মামলায় জনসংহতি সমিতির সমর্থক ও নেতা কর্মীদের আসামী করা হয়। মামলায় জনসংহতি সমর্থক পাড়ার বাসিন্দা নুশৈ মারমা পরিবারসহ ভয়ে ওই পাড়া ছেড়ে পালিয়ে যায়। স্থানীয়রা ধারণা করছেন, এ ঘটনার জের ধরে পাড়া কারবারীকে অপহরণ করা হয়েছে।

জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক হ্লাথুরী মারমা জানান, ইউপি নির্বাচনের পর থেকে জনসংহতি সমিতির সঙ্গে দ্বন্দ্ব চলে আসছে আওয়ামী লীগের। এ ঘটনার জের ধরে জনসংহতি সমিতির লোকজন পাড়া কারবারীকে অপহরণ করেছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।

এর আগে গত বছরের ১৩ জুন সন্ত্রাসীরা বান্দরবান সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা মংপু মারমাকে অপহরণ করে। এখনো তার খোঁজ পাওয়া যায়নি।

গোয়েন্দা সূত্র জানায়, বাঘমারা ও নোয়াপতং এলাকা জেএসএস’র ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। জেএসএস’র সামরিক শাখা এই এলাকা থেকেই পরিচালিত হয়। কখন কার কাছ থেকে চাঁদা আদায় ও কখন কাকে অপহরণ করা হবে ওই এলাকায় বসে ঠিক করা হয়।

আওয়ামীলীগ নেতা মংপু অপহরণের পর থেকে বান্দরবান জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ক্য শৈহ্লা রাজনৈতিক কর্মকান্ডের গতি বাড়ান ঐ এলাকায়। এতে বেকাদায় পড়ে জেএসএস। রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় জেএসএস অপহরণ পথ বেছে নিয়েছে বলে মনে করেন আওয়ামীলীগ নেতৃবৃন্দ।

অপর একটি সূত্র জানায়, দৈনিক মুক্তবাণী পত্রিকার রোয়াংছড়ি উপজেলা প্রতিনিধি থোয়াইচা উ জেএসএস এর সদস্য। তার জামাতাও জেএসএস’র স্বতস্ত্র শাখার সদস্য। কয়েকদিন আগে থোয়াইচা উ’র বাসায় বৈঠক করে তার জামাতা। বৈঠকে ঠিক হয় কাকে অপহরণ করা হবে।

এদিকে জেএসএস বান্দরবান শাখার বিবৃতিতে জানানো হয়, রোয়াংছড়ি থানা কমিটির সদস্য কেনু প্রু মারমা ও দৈনিক মুক্তবাণী পত্রিকার রোয়াংছড়ি উপজেলা প্রতিনিধি থোয়াইচা উ মারমার মুক্তি দাবী করা হয়। তারা আরো বলেছেন, বাথুয়াই মার্মাকে আটক না করে, কোন তথ্য না নিয়ে উদ্দেশ্যভাবে মূলক জেএসএস সদস্যদের আটক করা হয়েছে।

রোয়াংছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দু সাত্তার জানান, শুক্রবার রাতে ৪/৫ জনের একটি সন্ত্রাসী দল পাড়া কারবারী ও আওয়ামী লীগ নেতা মংশৈথুই মারমাকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। ওই পাড়ার বাসিন্দা বাথুই মং মারমা প্রথমে কারবারীকে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে যায়। সন্ত্রাসীরা দুজনকে অপহরণ করলেও পরে বাথুই মারমাকে ছেড়ে দিয়ে কারবারীকে নিয়ে যায়।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন