অাগুনে জ্বলছে মিয়ানমারের ঢেকিবুনিয়া ও ফকিরা বাজার: রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ বাড়ছে
ঘুমধুম প্রতিনিধি:
২ সেপ্টেম্বর শনিবার বিকালে ঘুমধুম সীমান্তের এই পাড় থেকে মিয়ানমার ঢেকিবনিয়ায় আগুনের লেলিহান শিখা ও ব্যাপক পরিসরে ধোঁয়া দেখা যায়। ধারণা করা হচ্ছে, সেখানে সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের ওপর ফের হত্যাযজ্ঞ এবং জ্বালাও-পোড়াও শুরু করেছে।
মিয়ানমারে সেনা ও বিজিপি’র নির্যাতনের ফলে রাখাইন থেকে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের জিরো পয়েন্টে জড়ো হয়েছে মুসলিম রোহিঙ্গারা। এপারে আসতে না পেরে নারী-শিশুসহ অসংখ্য রোহিঙ্গা জিরো পয়েন্টে তাবু স্থাপন করে গত ১সপ্তাহ থেকে অবস্থান করছে।
বিজিবি বিভিন্ন সময় এপারে অবস্থানকারী প্রায় সহস্রাধিক রোহিঙ্গাকে পুশব্যাক করলেও তাদের ওপর চড়াও হয়ে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও সীমান্ত পুলিশ বিজিপি উপর্যুপুরী গুলিবর্ষণ করে।
মিয়ানমারে ওপারে বেশ সংখ্যক সেনা মহড়া দিলে ভীতি সঞ্চার হয় রোহিঙ্গাদের মাঝে। এসব দেখে জিরো পয়েন্টে অবস্থান নেওয়া রোহিঙ্গাদের মাঝে মুহুর্তের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে অন্তত ৫০হাজারের অধিক রোহিঙ্গা পালিয়ে এসেছে বাংলাদেশে।
বিজিবি শত চেষ্টা করেও তাঁদের বার বার আটকাতে ব্যর্থ হয়েছে। পরে অতিরিক্ত বিজিবি ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে টহল জোরদার করে। ওই সময় মিয়ানমার সীমান্তের ভেতরে ব্যাপক গোলাগুলির শব্দ শোনা যায়।
বিগত কয়েক দশক ধরেই রক্তাক্ত মিয়ানমারের উত্তরাঞ্চলের রাখাইন(আরাকান রাজ্য)। রাজ্যের সংখ্যালঘু মুসলিমদের দেশটির নাগরিক হিসেবে স্বীকার করেনি জান্তা সরকার। মাঝে মাঝেই তাদের ওপর নেমে আসে নির্মম নির্যাতন। নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে উগ্রপন্থী রাখাইনেরা চালায় হত্যাযজ্ঞ।
চলতি মাসের মাঝামাঝি সময়ে রাখাইন রাজ্যে সেনা মোতায়েন করে মিয়ানমার সরকার। ঘোষণা দেয় অভিযানের। এরই মধ্যে গ্রামের পর গ্রাম রোহিঙ্গাদের অবরুদ্ধ করে রাখা হয়।
গত বছরের অক্টোবরে রোহিঙ্গাদের ওপর চালানো মিয়ানমার সেনাদের এমনই এক হত্যাযজ্ঞের ঘটনায় জাতিসংঘের সাবেক প্রধান কফি আনানের নেতৃত্বে গঠিত কমিশন গত বৃহস্পতিবার তাদের প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
কমিশন রোহিঙ্গাদের ওপর থেকে বিধিনিষেধ প্রত্যাহার এবং তাদের নাগরিকত্ব প্রদানের আহ্বান জানায়। প্রতিবেদন প্রকাশের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই নতুন করে হামলা ও হত্যাযজ্ঞ শুরু করে মিয়ানমার।
এই সংঘর্ষে সোমবার সকাল পর্যন্ত সরকারি হিসাবে নিহতের সংখ্যা ৫০০ ছাড়িয়েছে। যার মধ্যে নিরাপত্তা বাহিনীর ২০ জন সদস্যও রয়েছেন। তবে রোহিঙ্গাদের মতে, মৃতের সংখ্যা ৩ হাজারের উপরে হবে।