অবৈধভাবে বালি উত্তোলনে ভাঙ্গনের কবলে মাতামুহুরী পাড়ের বসতি,  বন্ধ উন্নয়ন কাজ 

chakaria-picture-29-10

চকরিয়া প্রতিনিধি:

কক্সবাজারের চকরিয়ায় বালি দস্যুদের চলমান উৎপাত বন্ধ করা যাচ্ছেনা। মাতামুহুরী নদীর চকরিয়া অংশের অন্তত ২০টি পয়েন্ট থেকে শ্যালো মেশিন বসিয়ে দেদারচে বালি উত্তোলনে হুমকির মুখে পড়েছে তীরের বসতিও। এমনকি বালি উত্তোলনের কারণে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিয়েছে দেড় কোটি টাকা ব্যয়ের পানি উন্নয়ন বোর্ডের তীর সংরক্ষণ প্রকল্পের কাজ।

অভিযোগ উঠেছে, মাতামুহুরী নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে দীর্ঘদিন ধরে চলছে শ্যালো মেশিন বসিয়ে অবৈধভাবে বালি উত্তোলনের প্রতিযোগিতা। নদী থেকে বালি উত্তোলন বন্ধে সরকারি নীতিমালা থাকলেও জড়িত বালিদস্যুরা তা অমান্য করে বহাল তবিয়তে তাদের কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে।

সরেজমিন দেখা গেছে, নদীর চকরিয়া অংশের অন্তত ২০টি পয়েন্ট থেকে বালি উত্তোলন করে যাচ্ছে প্রভাবশালীরা। একইভাবে উপজেলার সাহারবিল ইউনিয়ন পরিষদের সামনে নদী থেকে শ্যালো মেশিন বসিয়ে পাইপের মাধ্যমে বালি উত্তোলন করে ব্যবসা করছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য (মেম্বার) সাকের উল্লাহ’র নেতৃত্বে প্রভাবশালী চক্র। এভাবে বালি উত্তোলনের কারণে বর্তমানে ওই এলাকার অন্তত দুই শতাধিক বসতবাড়ি নদী ভাঙনের কবলে পড়েছে। বালি উত্তোলনের কারণে হুমকির মুখে পড়ায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রায় দেড় কোটি টাকার প্রতিরক্ষা বাঁধের কাজ বন্ধ রেখেছেন সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। বিষয়টি প্রশাসনের সংশ্লিষ্টদের জানানো হলেও অদ্যাবদি কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, প্রতিরক্ষা উন্নয়ন কাজের প্রকল্প এলাকা ঘেঁষে মাতামুহুরী নদী থেকে অবৈধভাবে বালি উত্তোলনের কারণে গেল বর্ষা মৌসুমে প্রকল্প এলাকায় নদী তীরে ব্যাপক ভাঙন দেখা দেয়। এই অবস্থার কারণে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান বিপুল টাকা ব্যয় করেও কাজটি গেল জুনমাসে সমাপ্ত করতে পারেনি বালি উত্তোলন অব্যাহত রাখায়।

তারা জানান, নদী থেকে বালি উত্তোলন বন্ধ করা না গেলে চলতি বছরও পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রতিরক্ষার এই কাজটি সম্পন্ন করতে পারবে না ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স মিজান কনস্ট্রাকশন। এতে করে এলাকার অসংখ্য বসতি নতুন করে ভাঙনের কবলে পড়বে।

উপজেলার একাধিক বালি ইজারাদার জানান, বিপুল টাকা রাজস্ব দিয়ে জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে বালি মহাল ইজারা নেন। কিন্তু মাতামুহুরী নদীর চকরিয়া অংশের অন্তত ২০টি পয়েন্ট থেকে ইঞ্জিন চালিত শ্যালো মেশিন বসিয়ে পাইপের মাধ্যমে অবৈধভাবে বালি উত্তোলন করে যাচ্ছে। এ কারণে বৈধ ইজারাদাররা আর্থিকভাবে ক্ষতির শিকার হচ্ছেন। বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসনকে জানানো হলেও এখনো পর্যন্ত কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

নদীর সাহারবিল পয়েন্টে শ্যালো মেশিন বসিয়ে বালি উত্তোলনকারী চক্রের প্রধান আওয়ামী লীগ নেতা সাকের উল্লাহ বলেন, `মাতামুহুরী থেকে বালি উত্তোলনে প্রশাসনের অনুমতি নিতে হবে কেন? তাছাড়া সরকারী উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করার জন্য এই বালি ব্যবহার করা হচ্ছে। এর বাইরে বালি বিক্রি করছি না।’

পানি উন্নয়ন বোর্ড চকরিয়ার চিরিঙ্গা শাখা কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘প্রায় দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে সাহারবিল এলাকায় নদীর তীর সংরক্ষণ প্রকল্পের কাজ আপাতত বন্ধ রয়েছে এটা ঠিক। তবে বালি উত্তোলনের কারণে বন্ধ রয়েছে কী-না তা আমি বলতে পারব না। আমি যতটুকু জানি, ওই স্থানে কয়েক হাজার বালির বস্তা ফেলতে হবে। ইতিমধ্যে বালিভর্তি করে এসব বস্তাও প্রস্তুত করা হয়েছে। শুধুমাত্র ঢাকা থেকে টাষ্কফোর্সের টিম এসে বস্তাভর্তি করা বালি এফ এম পয়েন্ট নাইন পর্যন্ত রয়েছে কী-না তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা কার্যক্রম শেষ হলেই এরপর পুরোপুরি এই কাজ বাস্তবায়ন করতে পারবে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান।’

এ ব্যাপারে চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাহেদুল ইসলাম বলেন, ‘সাহারবিল ইউনিয়ন পরিষদের সামনে মাতামুহুরী নদী থেকে অবৈধভাবে বালি উত্তোলনের খবর পেয়ে ইতিপূর্বে লোক পাঠিয়ে তা বন্ধ করে দেওয়া হয়। এছাড়া নদীর যেসব পয়েন্ট থেকে অবৈধভাবে বালি উত্তোলনে যারা জড়িত রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন