অপপ্রচারে ব্যাহত হচ্ছে পার্বত্য পর্যটনের বিকাশ

সম্ভাবনার পাহাড়- ৩

সাজেক১

জাহিদুল ইসলাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে ফিরে:
পার্বত্য অঞ্চলের তিন জেলা ঘিরে ফুটে উঠছে পর্যটনের অপার সম্ভাবনা। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, দৃষ্টিনন্দন পাহাড় আর সবুজের সমারোহে প্রাণ জুড়াতে রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানে বাড়ছে ভ্রমণপিপাসুদের ভিড়। পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেয়া হলে পার্বত্য অঞ্চল রাজস্ব আয়ের অন্যতম উৎস হতে পারে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা। এ লক্ষ্যে যোগাযোগ অবকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেয়ার তাগিদ দিয়েছেন তারা।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পাহাড়ি সন্ত্রাসীদের কারণে বতর্মানে পার্বত্য অঞ্চলে পর্যটক আসতে ভয় পাচ্ছেন। এছাড়া পাহাড়ি সংগঠন জেএসএস এবং ইউপিডিএফ পর্যটনবিরোধী লিফলেটও বিতরণ করছে।

স্থানীয় নিরাপত্তা বাহিনীর সহায়তা ছাড়া পর্যটন কেন্দ্রে যাওয়ার সাহস পাচ্ছেন না ভ্রমণপিপাসুরা। পর্যটনের সম্ভাবনা কাজে লাগলে স্থানীয়দের কর্মসংস্থান ও আয় বৃদ্ধির পাশাপাশি পার্বত্য অঞ্চলে জীবনমানের উন্নতি হবে বলে মনে করেন তারা।

আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী দীপংকর তালুকদার বলেন, পর্যটন খাতকে ভালোভাবে বিকশিত করে পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে কয়েক হাজার কোটি টাকা আয় করতে পারে সরকার। পর্যটক বাড়াতে হলে এখানে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। এক্ষেত্রে সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজি বন্ধ করা জরুরি। তিনি আরও বলেন, কিছু সন্ত্রাসী পর্যটকদের টাকা-পয়সা নিয়ে নেয়। চুরি, সন্ত্রাসীর কারণে পাহাড়ের পর্যটন বিকশিত হচ্ছে না বলে মনে করেন এই রাজনীতিক।

পার্বত্য জেলার সংরক্ষিত আসনের মহিলা সংসদ সদস্য ফিরোজা বেগম চিনু বলেন, এ এলাকায় পর্যটনের বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে। দেশের বিশাল সম্পদ এ তিন জেলা। উপজাতিদের সংগঠন জেএসএস এবং ইউপিডিএফ এখানে চাঁদাবাজি করছে। এ কারণে পর্যটকরা পাহাড়ে যাওয়ার সাহস করছেন না। তিনি বলেন, পার্বত্য অঞ্চলের প্রতিটি অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীকে চাঁদা দিতে হয়। পাহাড়িরাও সন্ত্রাসীদের চাঁদা দিতে বাধ্য হচ্ছেন।

পাহাড়িদের কাছে বিভিন্ন ধরনের ভারি অস্ত্র আছে দাবি করে তিনি বলেন, পুলিশও অস্ত্রবাজ সন্ত্রাসীদের ভয়ে থাকে। একমাত্র সেনাবাহিনী ছাড়া পাহাড়ের কাউকে ভয় পায় না এসব সন্ত্রাসী। সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন।

জানা গেছে, দেশের এক-দশমাংশ ভূখণ্ড নিয়ে গঠিত পার্বত্য তিন জেলা রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান। পাহাড়-পর্বত, নদী-নালা ও গাছপালা বেষ্টিত মনোরম দৃশ্যের এ ভূমিতে রয়েছে বাঙালি ও ১৩টি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী। পর্যটনের জন্য রয়েছে পাহাড়ে বিশাল সম্ভাবনা। কিন্তু কিছু সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর জন্য তা আজ ভূলুণ্ঠিত বলে অনেকেই আক্ষেপ করেন। পর্যটকদের আগমন ঠেকাতে বিভিন্ন সময় সন্ত্রাসীরা হামলা চালাচ্ছে, আর চুরি-ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে অহরহ। পর্যটন নিয়ে চালানো হচ্ছে নানা অপপ্রচার।

বাংলাদেশ অর্থনৈতিক জোন কর্তৃপক্ষ (বেজা) সূত্র জানায়, পর্যটন খাতের উন্নয়নে সম্প্রতি খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসন জেলার সদর ও মাটিরাঙ্গা উপজেলার তিন মৌজায় ৭০০ একর জমি নিয়ে বিশেষ প্রকল্প হাতে নেয়। পর্যটন এলাকা থেকে পাহাড়িদের উচ্ছেদ করা হবে মর্মে আতঙ্ক ছড়িয়ে এ উদ্যোগের বিরোধিতা করছেন পাহাড়িরা। পাহাড়ি আঞ্চলিক সংগঠনগুলো এ নিয়ে প্রতিবাদ ও আন্দোলন চালিয়ে আসছে। প্রতিবাদের মুখে এ প্রকল্পের কাজ বর্তমানে বন্ধ রয়েছে।

খাগড়াছড়ি জেলা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এস এম শফি বলেন, আলুটিলা থেকে বাসিন্দাদের উচ্ছেদ ছাড়াই সেখানে ইকো-ট্যুরিজম পার্ক তৈরির উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। একটি মহল পর্যটনের এ উদ্যোগের বিরোধিতা করছে। পর্যটন বিকাশে এ উদ্যোগ চালু রাখা প্রয়োজন।

জানা গেছে, সাজেক, কাপ্তাই ও পার্বত্য এলাকায় যাতে পর্যটকরা না আসেন এজন্য পাহাড়ি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলো নানা ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। জায়গায় জায়গায় পর্যটনবিরোধী পোস্টার লাগানো হয়েছে। পর্যটকদের ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। বিভিন্ন হোটেল ও রিসোর্টের মালিকদের কাছ থেকে উচ্চ হারে চাঁদা আদায় করা হয়। এমনকি বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রে নিষেধাজ্ঞাও জারি করা হয়।

সাজেক পর্যটন কেন্দ্রে দর্শনার্থীদের ভিড় চোখে পড়ার মতো। বিশেষ করে ছুটির দিনগুলোতে এখানে থাকার জন্য কক্ষ পাওয়া যায় না। আগে থেকেই বুকিং হয়ে যায়। প্রতিটি কক্ষের ভাড়া ১ হাজার থেকে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত। সরকারি রিসোর্টের পাশাপাশি গড়ে উঠেছে অনেক বেসরকারি রিসোর্ট ও হোটেল। এ পর্যটন কেন্দ্রটি ব্যাপকভাবে বদলিয়ে দিয়েছে স্থানীয় পিছিয়েপড়া পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর জীবনযাপন পদ্ধতি।

এসব পর্যটন কেন্দ্র ঘিরে গড়ে ওঠা হোটেল, মোটেল, রেস্টুরেন্ট, দোকান ও যানবাহন ব্যবস্থাপনায় শত শত মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে; যাদের বেশিরভাগই পাহাড়ি। পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর ও অনগ্রসর কৃষি পদ্ধতির জুম চাষ ছিল যাদের একমাত্র আয়ের উৎস। পর্যটনের প্রভাবে স্থানীয়দের আয় বেড়ে যাওয়ায় পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর জুম চাষ থেকে অনেকেই ফিরে এসেছেন।

সূত্র: আলোকিত বাংলাদেশ

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন