অপকর্ম ঢাকতে উপজাতি সন্ত্রাসীদের অপকৌশল

সন্তোষ বড়ুয়া:

“যা কিছু হারায় গিন্নী বলেন, কেষ্টা বেটাই চোর”…. পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রেক্ষিতে এটি একটি প্রতিষ্ঠিত সত্য। এখানে যে কোন ঘটনা ঘটলেই তার দায়ভার সরকার, পার্বত্য চট্টগ্রামে নিয়োজিত সেনাবাহিনী আর সেখানে বসবাসরত বাংগালীদের ঘাড়ে চাপানোর স্বভাবটা যেন উপজাতি সন্ত্রাসীদের রক্তে মিশে গেছে। এমনকি তারা গোপনে নিজেরা অপকর্ম করেও তার দায়ভার এদের উপর চাপানোর অপচেষ্টায় সর্বদাই মত্ত। দেশে-বিদেশে মিছিল, মিটিং, সমাবেশ আর মায়াকান্না করে একাকার করে ফেলে। পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম বিশেষ করে ফেসবুকের মাধ্যমে তারা মিথ্যা, বানোয়াট আর বিভ্রান্তিকর তথ্য পোস্ট করে শান্তির পাহাড়ে অশান্তি সৃষ্টির পাঁয়তারা করে আর নিজেদের অপকর্মগুলো ঢাকার ব্যর্থ অপচেষ্টা করে।

১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর তৎকালীন সরকার এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (পিসিজেএসএস) এর মধ্যে শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে দীর্ঘ ২১ বছরের সংঘাত এবং রক্তক্ষরণের অবসান ঘটে। শান্তিচুক্তির পর পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তিপূর্ণ স্বাভাবিক পরিবেশ আশা করা হলেও পিসিজেএসএস’র (বর্তমানে জেএসএস সন্তু গ্রুপ নামে পরিচিত) কতিপয় সদস্য প্রকাশ্যে শান্তিচুক্তির বিরোধীতা করে ১৯৯৮ সালের ২৬ ডিসেম্বর পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) এর প্রাক্তন সভাপতি প্রসীত বিকাশ খীসার নেতৃত্বে ইউপিডিএফ নামে নতুন একটি আঞ্চলিক দলের আত্নপ্রকাশ ঘটায়। তারা পার্বত্য চট্টগ্রামে পূর্ণ স্বায়ত্বশাসন দাবী করে এবং দাবী আদায়ের লক্ষ্যে সশস্ত্র আন্দোলনসহ সন্ত্রাসের পথ বেছে নেয়।

জন্মলগ্ন থেকেই ইউপিডিএফ তাদের শক্তি প্রদর্শন ও প্রভাব বিস্তার করার প্রচেষ্টায় নিয়োজিত থাকে। ফলশ্রুতিতে, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে পিসিজেএসএস এবং ইউপিডিএফ’র মধ্যে পাল্টাপাল্টি প্রতিশোধমূলক কর্মকান্ড চলতে থাকে। একে অপরের সদস্যদেরকে অপহরণের মাধ্যমে মুক্তিপণ দাবী/আদায় অথবা হত্যা, গুম ইত্যাদি জিঘাংসামূলক কার্যক্রম শুরু করে।

মজার বিষয় হল, শান্তিচুক্তি বিরোধী এই ইউপিডিএফ যখন সৃষ্টি হয়েছিলো তখন জেএসএস এবং কতিপয় ভাড়াটে সুশীল সমাজের জ্ঞানপাপীরা বলতে লাগলো যে ইউপিডিএফ সরকার ও সেনাবাহিনীর সৃষ্টি। ২০০৭ সালে যখন দলীয় কোন্দলের ফলে জেএসএস ভেংগে জেএসএস(সন্তু) এবং জেএসএস(সংস্কার) নামে দুটি পৃথক দলে পরিণত হল তখনো এই সব ভাড়াটে জ্ঞানপাপীরা বলতে লাগলো যে সরকার ও সেনাবাহিনীই জেএসএসকে বিভক্ত করেছে। আবার ২০১৭ সালে ইউপিডিএফ যখন ভেঙ্গে ইউপিডিএফ(প্রসীত) এবং ইউপিডিএফ(গণতান্ত্রিক) নামে দুই ভাগে বিভক্ত হলো তার দায়ও এসে পড়েছে সরকার ও সেনাবাহিনীর উপর।

সন্তু লারমা যখন ঢাকায় বক্তৃতা করেন তখন সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বলেন। কিন্তু রাঙামাটিতে সেনাবাহিনীর বিভিন্ন অনুষ্ঠানে পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাবাহিনীর কর্মকাণ্ডের প্রশংসায় পঞ্চমুখ থাকেন। ইউপিডিএফের নেতাকর্মীরা দীর্ঘদিন সন্তু লারমাকে সরকার ও সেনাবাহিনীর দালাল বলে আখ্যা দিয়েছে। তাদের দাবী ছিলো, সরকার ও সেনাবাহিনীই সন্তু লারমার নেতৃত্বকে টিকিয়ে রেখেছে।

বর্তমানে পার্বত্য চট্টগ্রামে চারটি আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলের মধ্যে খুন, গুম, অপহরণ বেশ প্রকট আকার ধারণ করেছে। প্রতিটি ঘটনায় এক দল অন্য দলকে দায়ী করার পাশাপাশি সরকার এবং সেনাবাহিনীকে কলুষিত করার অপচেষ্টা চালয়ে যাচ্ছে।

চলতি বছর ৩ জানুয়ারী ইউপিডিএফের অন্তঃকলহে মিঠুন চাকমার প্রাণ গেলো!! ভাড়াটে জ্ঞানপাপীরা এর দায়ভারও সেনাবাহিনীর উপরে চাপানোর অপচেষ্টা করেছে। আমার প্রশ্ন হলো, এই সব উপজাতি সশস্ত্র আঞ্চলিক সংগঠন আর তাদের নেতাগণ যেমন, মিঠুন চাকমা, প্রসীত বিকাশ খীসা, রুপায়ন দেওয়ান, সুধাসিন্ধু খীসা, তপন জ্যোতি বর্মা… ইত্যাদি ইত্যাদি সবাই যদি সরকার আর সেনাবাহিনীরই সৃষ্টি হয়ে থাকে তবে উপজাতিরা সরকার আর সেনাবাহিনীর সৃষ্টি এইসব সংগঠন কেন করছে?

আসলে জেএসএস(সন্তু), জেএসএস(সংস্কার), ইউপিডিএফ(প্রসীত) এবং ইউপিডিএফ(গণতান্ত্রিক) নামক উগ্র এই ৪টা সংগঠন পুরো পাহাড়ি জেলাগুলোকে নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নিয়ে চাঁদাবাজির হরিলুট চালাচ্ছে। তাদের এই অপকর্মের পথে প্রধান বাঁধা পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি প্রতিষ্ঠায় নিয়োজিত “সেনাবাহিনী”। আর সে কারণেই এইসব উগ্র সন্ত্রাসী সংগঠণগুলোর প্রধান দাবি “পাহাড় থেকে সেনা প্রত্যাহার” করতে হবে যাতে করে তারা সমগ্র পাহাড়ি ৩ জেলাতে পুরো মাত্রায় অত্যাচার চালাতে পারে এবং পাহাড়ে নিজেদের “জুম্মল্যান্ডের পতাকা” ওড়াতে পারে।

লেখক: রাঙামাটি থেকে

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন