অন্ধকার থেকে আলোর পথে ঝুঁকিপুর্ণ শিশুরা

kjhhgg
ওমর ফারুক হিরু:
শিশু মেয়েটির বয়স ১৪ বছর। তার জন্ম কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলায়। ৭ বছর বয়সে শিশুটি বাবা-মাকে হারিয়ে কক্সবাজার শহরে এসে এক বাড়িতে গৃহকর্মীর কাজ করতো। পরে গৃহকর্তার অত্যাচার ও নির্যাতন সহ্য করতে না পরে ওখান থেকে পালায়। এ অবস্থায় অসহায় মেয়ে শিশুটি ক্ষুধার জ্বালা মিঠাতে শুরু করে টোকাইয়ের কাজ। পরিণত হয় পথশিশুতে। অন্য ১০ জন পথশিশুর মত বড় হতে থাকে রাস্তায়। রাস্তায় বেড়ে উঠা মেয়েটি যতই বড় হতে থাকে ততই যৌন নির্যাতনের শিকার হতে থাকে মানুষরূপী পশুদের হাতে। পরে বাচাঁর তাগিয়ে অনেকটা বাধ্য হয়ে জড়িয়ে পড়ে পতিতাবৃত্তিতে। অমানবিক জীবন কাটে শিশু মেয়েটির।

এই দূ:সময়ে পথশিশুদের সহযোগিতায় একদল সংবাদকর্মী দ্বারা পরিচালিত ‘আমরা পথশিশু’ সংগঠনের সহযোগিতায় তার আশ্রয় মিলে ‘শেখ রাসেল ঝুঁকিপুর্ন শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে’। শহরের খুরুশকুল সড়কস্থ আনাস ভিলায় অবস্থিত বালিকা পুর্নবাসন কেন্দ্রে আশ্রয় পেয়ে মেয়েটি যেন নতুন জীবনের সন্ধান পেয়েছে। ওখানে আরাম আয়েশে থাকা ছাড়াও সেলাই প্রশিক্ষণ নিচ্ছে স্বনির্ভর জীবন গড়ছে মেয়েটি। অন্ধকার জগত থেকে আলোর জগতে ফিরে আসায় মেয়েটি খুবই আনন্দিত (সঙ্গত কারনে তার নাম প্রকাশ করা হলো না)।

উখিয়া উপজেলার আরেক মেয়ে শিশুকে জোরপূর্বক বাল্য বিয়ে দেওয়া হয় সাড়ে ১৩ বছর বয়সে। পিতৃহীন মেয়ে শিশুটির বিয়ের ১ বছর পরে তার স্বামী মালয়েশিয়া চলে যান। পরে তাকে নির্যাতনের মাধ্যেমে শশুর বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয়। দরিদ্র বিধবা মাও তাকে খাওয়াতে-পরাতে পারছে না। এ অবস্থায় মেয়েটি শেখ রাসেল পুর্নবাসন কেন্দ্রের সন্ধান পায়। স্বেচ্চায় চলে আসে ওখানে। সেই মেয়েটিও সেলাই কাজ শিখছে। আর স্বপ্ন দেখছে নতুন জীবনের।

কক্সবাজার শহরে ‘শেখ রাসেল ঝুঁকিপুর্ণ শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্র কক্সবাজার’ এর বালক-বালিকা দুই ভবনের মধ্যে খুরুশকুল সড়কস্থ আনাস ভিলায় অবস্থিত বালিকা পুর্নবাসন কেন্দ্রে গিয়ে এই তথ্য পাওয়া যায়। এই বালিকা পুর্নবাসন কেন্দ্রে শুধু ওই ২ মেয়ে নয় পুর্নবাসন কেন্দ্রে আশ্রয় নেওয়া ৬ থেকে ১৭ বছর বয়সী ১শ ঝুকিপূর্ন মেয়ে শিশুর জীবনে রয়েছে করুন ইতিহাস। যারা এখন ঝুঁকিমুক্ত হয়ে স্বাভাবিক জীবনের ফিরে আসতে অবস্থান করছে পুর্নবাসন কেন্দ্রে।

বালিকা পুর্নবাসন কেন্দ্রে গিয়ে জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা শুভ্রত বিশ্বাসের সাথে কথা বলে জানা যায়, বালিকা পুর্নবাসন কেন্দ্রে ১শ শিশুর মধ্যে ২০ জন মেয়ে শিশুকে সেলাই প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। তাদের বসয় ১৩ থেকে ১৭ বছরের মধ্যে। সেলাই প্রশিক্ষণ ছাড়াও তাদের দেওয়া হচ্ছে বাটিক-বুটিক, মোবাইল সাভিসিং, ফুড এন্ড বেভারাইসহ বিভিন্ন আত্মনির্ভরশীল প্রশিক্ষণ। বর্তমানে সেলাই প্রশিক্ষক দিচ্ছেন সাবিনা ইয়াছমিন সাথী।

শেখ রাসেল ঝুঁকিপূর্ণ শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রর উপ-প্রকল্প পরিচালক জেসমিন আক্তার বলেন, সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ সমাজসেবা অধিদফতরের ‘সার্ভিসেস ফর চিলড্রেন এট রিস্ক (স্কার)’ প্রকল্পের আওতায় ‘শেখ রাসেল ঝুঁকিপুর্ণ শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্র কক্সবাজার’ এর দুইটি ভবনে সদরসহ বিভিন্ন উপজেলার ঝুঁকিপুর্ন ২শ জন মেয়ে ও ছেলে শিশু রয়েছে। শহরের খুরুশকুল সড়কস্থ আনাস ভিলায় রয়েছে ঝুকিপূর্ন ১শ মেয়ে শিশু আর শহরের ঝিলংজাস্থ নতুন জেল গেইট সংলগ্ন বাইপাস সড়কের পাল্স ভবনে রয়েছে ঝুকিপুর্ণ ১শ ছেলে শিশু। এদের বয়স ৬ থেকে ১৭ বছর পর্যন্ত। এই দুই পুর্নবাসন কেন্দ্রে মনোসামাজিক সেবা, প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা, শিক্ষা ও কর্মমূখী প্রশিক্ষণ সুবিধা প্রাপ্তির পাশাপাশি সুন্দর পরিবেশে আশ্রয় পেয়ে এই শিশুরা খুবই খুশি। দুই পুর্নবাসন কেন্দ্রে ঝুঁকিপুর্ন শিশুদের মধ্যে রয়েছে, পথ শিশু, শ্রমজীবী শিশু, পাচার থেকে উদ্ধারকৃত শিশু, পূর্ণ সময় গৃহকর্মে নিয়োজিত শিশু, হারিয়ে যাওয়া শিশু, বাবা-মায়ের স্নেহবঞ্চিত শিশু, এতিম শিশু, একা বাস করা শিশু, অন্য সম্প্রদায়ের সাথে বাস করা শিশু, নির্যাতিত শিশু, প্রতিবন্ধী শিশু, আইনী দ্বন্দ্বে জড়িত শিশুসহ অন্যান্য শিশুরা।

তিনি আরো জানান, সার্ভিসেস ফর চিলড্রেন এট রিস্ক (স্কার) প্রকল্পের আওতাধীন শেখ রাসেল ঝুঁকিপূর্ণ শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কক্সবাজার কেন্দ্রের কার্যক্রম শুরু হয়েছে ২০১৫ সাল থেকে। পুর্নবাসন কেন্দ্রের কার্যক্রম গুলো হল, ঝুঁকিপূর্ন শিশুদের সার্বিক সেবা প্রদান করা, ২৪ ঘন্টা হেল্প লাইনের মাধ্যমে সেবা প্রদান করা।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন