অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে পিছিয়ে রয়েছে লক্ষীছড়ি

laxichari

মোবারক হোসেন:
অনুন্নত, অবহেলিত, পশ্চাৎপদ এক উপজেলার নাম লক্ষীছড়ি। অনুন্নত সড়ক যোগাযোগ ও সহজ যাতায়াতের ব্যবস্থা না থাকাই পিছিয়ে পড়ার অন্যতম কারণ খাগড়াছড়ির এ উপজেলার। এখনো পর্যন্ত খাগড়াছড়ি জেলা সদরের সাথে বিকল্প সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। লক্ষীছড়ি উপজেলার সাথে সংযোগ সড়ক মহালছড়ি-সিন্দুকছড়ি এবং ফটিকছড়ি বাইন্যাছোলা এলাকায় ধুরুং নদীর উপড় গুরুত্বপূর্ণ দু’টি ব্রিজ নির্মিত হয়েছে। এতে করে মহালছড়ি হয়ে খাগড়াছড়ি জেলা সদর এবং ফটিকছড়ি কাঞ্চননগর হয়ে চট্টগ্রাম বিভাগীয় শহরে যাতায়াতের মাইলফলক উম্মোচিত হয়েছে।

ব্রিজ নির্মাণ করলেও রাস্তা মেরামত ও সম্প্রসরাণ না করায় এ দুটি সড়কেই মটরসাইকেল ছাড়া বড় কোনো যানবাহন চলাচল করতে পারছে না। বিভাগীয় শহর চট্টগ্রাম, পর্যটন নগরী রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি জেলা শহরের সাথে এ উপজেলা সবচেয়ে নিকটবর্তী হলেও সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে না ওঠায় একমাত্র মানিকছড়ি মহামুনি ভায়া হয়ে যাতায়াত করতে হয় এখানকার মানুষের। রাঙামাটি জেলার সাথে খাগড়াছড়ির লক্ষীছড়ি উপজেলার লক্ষীছড়ি-বর্মাছড়ি সড়কে ব্রিজ নির্মাণ কাজ বন্ধ রয়েছে প্রায় ৫ বছর ধরে। পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড এ ব্রিজ নির্মাণ কাজ বাস্তবায়ন করছে। ৩টি বড় ব্রিজ ছাড়াও এ সড়কে অন্তত ১০টি কার্লভাট এর মধ্যে বর্মাছড়ি খাল, মুক্তাছড়ি খাল, জয়পতি ছড়া, গুইছড়ি ছড়া, শুকনাছড়ি খাল এবং মরাচেঙ্গী ব্রিজের কাজ অসমাপ্ত অবস্থায় পড়ে আছে।

এদিকে রাঙামাটির কাউখালী সীমান্ত লক্ষীছড়ির নিকটবর্তী হলেও অনুন্নত সড়ক যোগাযোগের কারণে যাতায়াত করতে হয় চট্টগ্রামের হাটহাজারি হয়ে প্রায় ১১০ কি:মি: পথ পাড়ি দিয়ে। এদিকে লক্ষীছড়ি-বর্মাছড়ি কাউখালী উপজেলা হয়ে রাঙামাটির এ সড়কটি চালু হলে দূরত্ব কমবে প্রায় অর্ধেক। এতে করে সহজ যোগাযোগ ও সময় বাঁচার পাশাপাশি যাতায়াত খরচ কমে আসবে অনেকটা। লক্ষীছড়ির বর্মাছড়ি ইউনিয়নের সাথে সহজ সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায় যাতায়াতে চরম দূর্ভোগ পোহাতে হয় এখানকার মানুষের। এখানে উৎপাদিত কৃষি পণ্য বিশেষ করে কলা, হলুদ, আদাসহ বিভিন্ন শাকশব্জি পরিবহনের অভাবে জমিতেই নষ্ট হয়ে যায়।

লক্ষীছড়ি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সুপার জ্যোতি চাকমা এ প্রসঙ্গে বলেন, আমার জন্মস্থান বর্মাছড়ি পেক্কুয়া পাড়া এলাকায়। আমি নির্বাচিত হয়েই প্রথম অগ্রাধীকার প্রকল্প হাতে নিয়েছি যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করা। বিশেষ করে প্রত্যন্ত বর্মাছড়ি সড়কটি চালু করতে সাধ্যমত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। তিনি অভিযোগ করে বলেন, এ ক্ষেত্রে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড কথা দিয়েও কথা রাখেনি। চলতি অর্থ বছর যতিন্দ্র কার্বারী পাড়া প্রথম ব্রিজটির অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করতে ১০লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়ার ঘোষণা দিয়েও শেষ পর্যন্ত বরাদ্দ ছাড় না দেয়ায় এ বছরও কাজটি শেষ করা যায় নি।

লক্ষীছড়ি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান রাজেন্দ্র চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের গাফেলতির কারণে যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু হচ্ছে না। তাদের তত্ত্বাবোধানে থাকার কারণে অন্য কোনো বিভাগও এ কাজটি করতে পারছে না।

লক্ষীছড়ি-বর্মাছড়ি সড়ক যোগাযোগ নিয়ে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল, স্থানীয় অনেক পত্র পত্রিকায় ব্যাপক লেখালেখি হলেও এখনো পর্যন্ত কর্তৃপক্ষের টনক নড়েনি। ভৌগলিক দিক দিয়ে লক্ষীছড়ি উপজেলা অনেক গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা হলেও অনুন্নত সড়ক যোগাযোগের অভাবে আধুনিক বিশ্ব থেকে পিছিয়ে রয়েছে। পিছিয়ে পরা লক্ষীছড়ি উপজেলাকে এগিয়ে নিতে দ্রুত গতিতে উক্ত সড়কের চলমান ব্রিজ, কার্লভাট বাস্তবায়নসহ রাস্তা সংস্কার করার দাবী জানিয়েছেন এলাকাবাসী।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন