অতিরিক্ত ওজন ডেকে আনছে ঘুমের সমস্যা

পার্বত্যনিউজ ডেস্ক:

ঠিক সময়েই ঘুমোতে যাচ্ছেন। কিন্তু কিছুতেই যেন ভাল ঘুম হচ্ছে না। দিনের বেলা রয়েই যাচ্ছে একটা ঘুমঘুম ভাব, ক্লান্তি। বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, এ সবই হতে পারে অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়ার লক্ষণ।

সম্প্রতি ২৫টি শহরের ৫৬০০ জনকে নিয়ে করা এক সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, ৯৩ শতাংশ মানুষ কম ঘুম হওয়ার সমস্যায় ভুগছেন। ১১ শতাংশ কাজের জায়গায় ঘুমিয়ে পড়ছেন। আর ঘুমের অভাবে ৮৭ শতাংশের স্বাস্থ্যের ক্ষতি হচ্ছে। বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, স্লিপ ডিসঅর্ডারের ঘটনা বাড়ছে। এর মধ্যে অন্যতম হল অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া (ওএসএ)।

অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া কী?

বক্ষরোগ চিকিৎসক জানিয়েছেন, ঘুমালে দেহের পেশি শিথিল হয়ে যায়। গলা ও ঘাড়ের পেশি শিথিল হলে চাপ বাড়ে শ্বাসনালীতে। ফলে অনেকের শ্বাসনালী আংশিক বা সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। মস্তিষ্কে অক্সিজেনের মাত্রা কমতে থাকে। তখনই ঘটে ঘুমের ব্যাঘাত। এই সময়ে রোগী সচেতন হয়ে যাওয়ায় পেশি আগের অবস্থায় ফিরে যায়। কিছু ক্ষণ শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক ভাবে চলার পরে ফের একই জিনিস ঘটে। বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, এক রাতে ১০০ বার পর্যন্ত এমন ঘটতে পারে। বারবার ঘুম বিঘ্নিত হওয়ায় শরীর প্রয়োজনীয় বিশ্রাম পায় না।

স্লিপ অ্যাপনিয়া থাকলে তা বোঝা যাবে কী ভাবে? এর অন্যতম উপসর্গ নাক ডাকা। তবে যার নাক ডাকছে, তিনি নিজে বেশির ভাগ সময়েই তা বুঝতে পারেন না। রোগী নিজে সারা দিনই একটা ক্লান্তি বা ঝিমুনি অনুভব করেন। কাজের জায়গায় ঘুমিয়ে পড়া, কাজে গোলমাল হওয়া, ভুলে যাওয়া, মাথা ধরা, মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাওয়াও স্লিপ অ্যাপনিয়ার উপসর্গ।

বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, কেউ এমন উপসর্গ নিয়ে এলে ঘুমোনোর সময়ে একটি মনিটর লাগিয়ে দেখা হয়, কী ভাবে তার শ্বাস-প্রশ্বাস চলছে, কখন শ্বাসনালী বন্ধ হচ্ছে, অক্সিজেনের মাত্রা কমে যাচ্ছে। সেই তথ্য বিশ্লেষণ করে চিকিৎসা হয়। এর জন্য প্রচলিত চিকিৎসা হল সি-প্যাপ বা ‘কন্টিনিউয়াস পজিটিভ এয়ারওয়ে প্রেসার’ যন্ত্রের ব্যবহার। এর সাহায্যে অক্সিজেনবিহীন বাতাস প্রয়োগ করে রোগীর শ্বাসনালী খুলে রাখতে সাহায্য করা হয়। প্রয়োজন মতো বাতাসের চাপ নিয়ন্ত্রণ করে স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রটি। এই রোগের ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচারও করা যায়। কিন্তু তাতে নানা ঝুকি রয়েছে। অস্ত্রোপচার সব সময়ে সফল হয় না বলেও জানাচ্ছেন চিকিৎসকেরা। তা ছাড়া, শ্বাসনালীর একটি অংশে অস্ত্রোপচার হলেও পরে অন্য অংশ বন্ধ হয়ে ফের সমস্যা হতে পারে।

কেন হয় স্লিপ অ্যাপনিয়া? বক্ষরোগ চিকিৎসক তনভীর রেজা জানালেন, বিদেশের মতো ভারতেও বাড়ছে স্থূলতা। যারা অতিরিক্ত ওজনের সমস্যায় ভোগেন, তাদের ঘুমের সময়ে শ্বাসনালীর উপর চাপ বেশি হয়। ফলে ওএসএ হওয়ার ঝুকিও বেশি। মদ্যপান ও ধূমপানের মতো জীবনযাত্রাগত কিছু কারণও এই অসুখের আশঙ্কা বাড়ায়। আবার অনেকেই ঘুম ভাল হচ্ছে না ভেবে ঘুমের ওষুধ খান। তাতে হিতে বিপরীত হয়। এ ছাড়া উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিসের মতো রোগ থাকলেও ওএসএ-র ঝুঁকি বেড়ে যায়। তবে চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, আগের থেকে সচেতনতা বেড়েছে।

বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, টনসিল ও অ্যাডেনয়েড গ্ল্যান্ড বড় থাকলে শিশুদেরও ওএসএ হতে পারে। সে ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান সহজেই সম্ভব।

জীবনযাত্রা পরিবর্তন করলে কি সেরে যায় স্লিপ অ্যাপনিয়া? বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, মদ্যপান ও ধূমপান ছেড়ে দিলে সুবিধা হয়। ওজন কমিয়ে অনেকে সুফল পেলেও স্লিপ অ্যাপনিয়া একেবারে সেরে যায় না।

চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, কারও স্লিপ অ্যাপনিয়া থাকলে তা গুরুত্ব দিয়ে চিকিৎসা করানো উচিত। তা না হলে শারীরবৃত্তীয় ও বৌদ্ধিক কাজে ব্যাঘাত ঘটে। অনেকের ক্ষেত্রে রোজকার কাজকর্ম সামলানোই মুশকিল হয়ে পড়ে। ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ এবং হৃদ্‌রোগের মতো সমস্যাও ডেকে আনে স্লিপ অ্যাপনিয়া। শিশুদের ক্ষেত্রে চিকিৎসা না হলে ব্যাহত হয় তাদের স্বাভাবিক বিকাশ।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন