অগ্নিকাণ্ডে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইননানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে

    IMG_20170605_123507 copy

লংগদু প্রতিনিধি:

রাঙ্গামাটির লংগদুতে যুবলীগ নেতা ও মোটরসাইকেল চালক নুরুল ইসলাম নয়ন এর হতাকাণ্ডের জের ধরে উপজেলার ৩টি পাহাড়ি জনপদে অগ্নিসংযোগ ও হামলার ঘটনায় উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে আয়োজিত মতবিনিময় সভা রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসক মানজারুল মান্নান এর সভাপতিতে অনুষ্ঠিত হয়।

চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার রুহুল আমিন, পুলিশের ডিআইজি এসএস মনিরুজ্জামান, খাগড়াছড়ি রিজিয়নের রিজিয়ন কমান্ডার ব্রি. জে. মীর মুশফিকুর রহমান, রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মানজারুল মান্নান, রাঙ্গামাটি জেলা পুলিশ সুপার সাইদ তারিক হাসান, লংগদু জোন কমান্ডার লে. কর্ণেল আ. আলী চৌধুরী, উপজেলা চেয়ারম্যান মো. তোফাজ্জল হোসেন, উপজেলা নির্বাহী অফিসার(অ. দা.) তাজুল ইসলাম, রাঙ্গামাটি জেলা পরিষদ সদস্য মো. জানে আলম, সকল ইউপি চেয়াম্যান ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এসময় উপস্থিত ছিলেন।

সূচনা বক্তব্যে জেলা প্রশাসক মানজারুল মান্নান বলেন, আমরা অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত পাহাড়ি এলাকা ঘুরে পরিদর্শন করেছি। যাদের ইন্ধনে এ ধরনের পৈশাচিক ঘটনা যারা ঘটিয়েছে তাদেরকে সষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে বের করে আইনের আওতায় এনে শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। ক্ষতিগ্রস্তদের সাধ্যমত পুর্নবাসনের ব্যবস্থা করা হবে। সম্প্রদায়িক সম্প্রীতি যাতে বজায় থাকে পাহাড়ি বাঙ্গালী সকলে মিলে মিশে এলকায় থাকতে হবে। সভায় একপর্যায়ে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ফোনালাপ ডিআইজির মাধ্যমে মতবিনিময় সভায় শুনানো হয়। নয়ন হত্যাকাণ্ডের সষ্ঠু বিচার করা এবং অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্তদেরকে সকল প্রকার সহযোগিতা করা হবে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন। অপরাধী যে হোক তাকে আইনের আওতায় আনা হবে।

পুলিশ বিভাগের ডিআইজি, এসএম মনিরুজ্জামান বলেন, লংগদুতে যাতে সম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখা হয় পারস্পরিক বিশ্বাস ও আস্থা পুনঃস্থাপনের ব্যাপারে পাহাড়ি বাঙ্গালীদেরকে পরস্পর সহযোগিতা করার জন্য আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, যে ঘটনা ঘটানো হয়েছে আমার নিন্দা জানানোর ভাষা নেই। এ দেশ এ মাটি আমাদের সকলের সকলকে মিলেমিশে আস্থার সাথে বসবাস করতে হবে। প্রধান মন্ত্রী ৯৭ সালে চুক্তি স্থাপনের মাধ্যমে যে শান্তি ফিরে এনেছে তা বজায় রাখতে হবে। কেউ আইনকে নিজ হাতে তুলে নিবেন না। সন্ত্রাসীদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনা হবে। দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে এবং নয়ন হত্যা কাণ্ডেরও সুষ্ঠ বিচারের ব্যবস্থ করা হবে। সকলে মিলে মিশে বসবাস করতে হবে। পাহাড়ি বাঙালি এবং বাঙালি পাহাড়িদের নিরাপত্তা দিতে হবে। পারস্পরিক সম্পর্ক ও আস্থা পুনঃ স্থাপন করতে হবে।

বিভাগীয় কমিশনার রুহুল আমীন বলেন, সরেজমিনে যা দেখেছি আমরা অত্যান্ত মর্মাহত হয়েছি। নয়ন হত্যা কাণ্ডের বিচার হবে এবং অগ্নিকাণ্ডে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইননানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিন্তু কেউ আইন হাতে তুলে নিবেন না। ভবিষ্যতে যাতে এধরনের ঘটনা না ঘটে  পাহাড়ি বাঙ্গালী প্রশাসন আইন শৃঙ্খলা বাহিনী সকলকে সজাগ থাকতে হবে।

তিনি বলেন, প্রধান মন্ত্রীর পাশে থেকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ফোন আলাপে যা বলেছেন মিলে মিশে সম্প্রীতির ভিত্তিতে পাহাড়ি বাঙালি বসবাস করতে হবে।

খাগড়াছড়ি রিজিয়নের রিজিয়ন কমান্ডার মীর মুশফিকুর রহমান বলেছেন, বাংলাদেশি  হিসেবে একজন মানুষ হিসেবে এ অগ্নিদূর্ঘটনা দেখে মর্মাহত হয়েছি। লংগদুতে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ধৈয্যের সাথে নিয়ন্ত্রণ করায় আমি নিরাপত্তাবাহিনী ও পুলিশ বাহিনীকে ধন্যবাদ জানাই। নয়ন হত্যকাণ্ড এবং অগ্নিদুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদেরকে সহ মর্মিতা জানানো ভাষা খুঁজে পাচ্ছিনা। ডি আই জি মহোদয় কথা দিয়েছে সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার করতে নিরাপত্তাবাহিনী সহযোগিতা করবে। তিনি আরও বলেন, অগ্নি দূর্গটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য সাত লাখ টাকা অনুদান হিসেবে জোন কমান্ডারের নিকট রেখে যাচ্ছি। পাহাড়ি বাঙালিদের মধ্যে আস্থা ফিরে আনতে হবে। সাদেকুল হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের কে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। সেখানে লংগদুর মত ঘটনা ঘটেছে। ধৈর্য ধরা উচিত ছিল।

পাহাড়িদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, আটারকছড়া ইউপি চেয়ারম্যান মঙ্গল কান্তি চাকমা, তাপস চাকমা, ভাগ্যলক্ষী চাকমা ও নির্পন চাকমা।

নির্পন চাকমা বলেন, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা পরিকল্পিত। নয়নের জানাজা নামাজের এতবেশি জনসমাগম হয়েছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণের  বাহিরে চলে যাওয়ায় আমাদের ঘরবাড়ি অগ্নিকাণ্ড থেকে রক্ষা করতে পারেনি। আমাদের পুনঃবাসনের দরকার নেই। ঘটনার সাথে জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে হবে।

অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, লংগদু প্রেস ক্লাবের সভাপতি এখলাস মিঞা খান, গুলশাখালী ইউপি চেয়ারম্যান আবু নাছির (প্রমুখ)।

এদিকে সকালে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার রুহুল আমিন, পুলিশের ডিআইজি এসএস মনিরুজ্জামান, রাঙ্গামাটি জেলা পুলিশ সুপার সাইদ তারিক হাসান, রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মানজারুল মান্নান অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন শেষে তিনটিলা বনবিহারে আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নেওয়া ক্ষতিগ্রস্ত পাহাড়ি লোকজনদের সাথে কথা বলেন  এবং ধৈয্যের সাথে তাদের কথা শুনেন। এরপর তারা সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন।

১৫ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ৪০০জনকে আসামী করে মামলা করেছে পুলিশ। লংগদু থানায় এ পর্যন্ত ১৫জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। উপজেলার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসলেও গ্রেফতার আতঙ্কে এলাকাগুলোতে পুরুষ শুণ্য হয়ে পড়েছে। মোটর সাইকেল চলাচল বন্ধ রয়েছে। ফলে সড়ক পথে চলাচলে খুবই সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। এদিকে  লংগদুর বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ স্থান সমূহে অতিরিক্ত পুলিশ ও নিরাপত্তাবাহিনী, বিজিবি মোতায়েন থাকবে এবং উপজেলায় পুলিশী টহল আরো জোরদার করা হয়েছে

এদিকে দুপুরে লংগদু উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে এক আইন শৃঙ্খলা সভায় অনুষ্ঠিত হয়। আইন শৃঙ্খলা সভায় প্রশাসন এ সিদ্ধান্ত নেয়।

রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসক মানজারুল মান্নানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত রাঙ্গামাটি পুলিশ সুপার সাঈদ তারিকুল হাসান, লংগদু জোন কামান্ডার লে. কর্ণেল আ. আলিম চৌধুরী, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান তোফাজ্জল হোসেন, উপজেলা নির্বাহী অফিসার (অতিঃ দায়িত্ব) মো. তাজুল ইসলাম, রাঙ্গামাটি জেলা পরিষদের সদন্য মো. জানে আলম, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নুরজাহান বেগম, বিভিন্ন কর্মকর্তা, ইউপি চেয়ারম্যান, মেম্বার ও অন্যান্য জনপ্রতিনিধিরা এসময় উপস্থিত ছিলেন।

অপরদিকে লংগদু উপজেলার ক্ষতিগ্রস্ত ৩টি এলাকার লোকজন বাড়ি ঘরে ফিরে আসতে শুরু করেছে। অনেকে স্থানীয় বৌদ্ধ বিহার ও আত্মীয় স্বজনের বাসা বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে।

ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদেরকে দূর্যোগকালীন সময়ে স্থানীয় সেনা প্রশাসন খাদ্য সহায়তা দিচ্ছে।

এছাড়া স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন ক্ষয়-ক্ষতি নিরুপন করে পরবর্তীতে সহায়তা প্রদান করবে বলে আশ্বাস প্রদান করছেন রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসক।

উল্লেখ্য রাঙ্গামাটির লংগদুতে যুবলীগ নেতা ও মোটর বাইক চালক নুরুল ইসলাম নয়ন এর হতাকাণ্ড ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিক্ষুব্ধ লোকজন লংগদু সদর, মানিকজোরছড়া ও তিনটিলাসহ বেশ কিছু গ্রামে অগ্নি সংযোগের ঘটনায় আগুনে পাহাড়ি গ্রামে প্রায় শতাধিক ঘড়বাড়ি ভষ্মিভূত হয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন