parbattanews

২ লাখ ৭ হাজার পিস ইয়াবাসহ রাজধানী থেকে ৬ জনকে আটক করেছে র‌্যাব


ডেস্ক রিপোর্ট: টেকনাফ ও কক্সবাজার থেকে সড়কপথে বাহকের মাধ্যমে বা কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে বড় বড় ইয়াবার চালান পাঠানো হয় ঢাকায়। পরে নির্ধারিত সিন্ডিকেটের মাধ্যমে সেসব ইয়াবা অভিজাত এলাকার ভাড়া বাসায় নিয়ে মজুদ করা হয়। আর সেই ইয়াবাবাণিজ্য সম্পন্ন করতে ব্যবসায়ীরা আকাশপথে ঢাকা-কক্সবাজার রুটে নিয়মিত যাতায়াত করছেন।

বুধবার (১৫ আগস্ট) এমন তথ্যের ভিত্তিতে রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোড এলাকায় অভিযান চালিয়ে টেকনাফ এলাকার অন্যতম মাদক ব্যবসায়ী জহির আহমেদ ওরফে মৌলভী জহিরসহ (৬০) ছয়জনকে আটক করেছে র‌্যাব-২।

আটক অন্যরা হলেন- মমিনুল আলম (৩০), ফয়সাল আহম্মেদ (৩১), মিরাজ উদ্দিন নিশান (২১), তৌফিকুল ইসলাম ওরফে সানি (২১) ও সঞ্জয় চন্দ্র হালদার (২০)।

এসময় তাদের কাছ থেকে ২ লাখ ৭ হাজার ১০০ পিস ইয়াবা এবং মাদক বিক্রির ৭ কোটি ২৪ লাখ ৮৫ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১৬ আগস্ট) দুপুরে কারওয়ানবাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান।

তিনি বলেন, এলিফ্যান্ট রোডের একটি বিলাসবহুল বাসার নিচ থেকে ফয়সাল, মিরাজ, সানি ও সঞ্জয়কে ৩৫ হাজার পিস ইয়াবাসহ আটক করা হয়। এরপর তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ওই বাসায় অভিযান চালিয়ে জহির ও তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী মমিনুলকে আটক করা হয়। ওই বাসা ও তাদের তথ্য দেওয়া অপর একটি বাসা থেকে উদ্ধার করা হয় বাকি ইয়াবা ও নগদ অর্থ।

আটকদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে তিনি বলেন, জহিরের পুরো পরিবার ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। জহির ও তার বড় ছেলে বাবু (২৮) বিগত ৫-৬ বছর ধরে ঢাকার বিভিন্ন অভিজাত এলাকায় বাসা ভাড়া করে ইয়াবা ব্যবসা চালিয়ে আসছেন। গত এপ্রিলে ধানমন্ডির একটি বাসা থেকে বাবুকে গ্রেফতার করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর। এছাড়া জহিরের স্ত্রী, মেয়ে, বড় জামাতা আব্দুল আমিন, জামাতার ভাই নুরুল আমিনসহ টেকনাফের আরো কয়েকজনসহ মোট ২০-৩০ জন এ সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত।

মুফতি মাহমুদ বলেন, এ সিন্ডিকেটে আলম ওরফে বার্মাইয়া আলম নামে একজনের তথ্য পেয়েছি। যিনি রাখাইনে বসবাস করছেন এবং টেকনাফেও তার একটি বাড়ি রয়েছে। মূলত তার মাধ্যমেই নৌপথে মিয়ানমার থেকে টেকনাফের বিভিন্ন ল্যান্ডিং স্টেশনে ইয়াবাগুলো আনা হতো। আর মমিন ও আমিন সেসব ইয়াবাগুলো রিসিভ করতেন।

তারপর তারা টেকনাফ থেকে বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক্স সামগ্রী যেমন- ফ্যান, এসি, ওয়াশিং মেশিনের ভেতরে ইয়াবা লুকিয়ে কুরিয়ারের মাধ্যমে ঢাকায় পাঠাতেন। এছাড়া, নির্দিষ্ট দুই ব্যক্তি এবং বিভিন্ন পরিবহনের ড্রাইভার ও সহকারীদের মাধ্যমেও ইয়াবার চালান পাঠাতেন। আর তারা আকাশপথে ঢাকা-কক্সবাজার নিয়মিত যাতায়াত করতেন।

এদিকে, নির্ধারিত বাস স্টেশন বা কুরিয়ার থেকে মমিন ও আমিন ইয়াবা সংগ্রহ করে জহিরের ভাড়া বাসায় পৌঁছে দিতেন। জহির ঢাকার ৫ ব্যবসায়ীকে নিয়মিত ইয়াবা সরবরাহ করতেন বলেও জানা যায়। ইয়াবা বিক্রির অর্থ ইলেক্ট্রনিক্স মানি ট্রান্সফার, মোবাইল ব্যাংকিং ও হুন্ডির মাধ্যমে টেকনাফে পাঠানো হতো।

জহিরকে জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে মুফতি মাহমুদ খান আরো বলেন, বিগত ১০-১৫ বছর আগে রোজিনা এন্টারপ্রাইজ নামে একটি সিঅ্যান্ডএফ ব্যবসা চালু করেন জহির। তখন সাইফুল নামে এক ব্যক্তির মাধ্যমে তিনি ইয়াবা ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন। টেকনাফ এলাকার ইয়াবা ব্যবসার সব যোগাযোগ রক্ষা করতেন জহিরের স্ত্রী। গতকাল রাতে জহিরের স্ত্রীকে ধরতে টেকনাফে অভিযান চালানো হয়েছে, কিন্তু তাকে পাওয়া যায়নি।

আমিন ও নুরুল আমিন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ী বলেও জানান তিনি।

এদিকে ফয়সাল আহাম্মেদ একটি বেসরকারি ব্যাংকের অফিসার হিসেবে কর্মরত, নিশান একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্সের ছাত্র, সানি একটি কলেজে ম্যানেজমেন্ট বিষয়ে প্রথম বর্ষের ছাত্র এবং সঞ্জয় পারিবারিক ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। তারা সবাই ইয়াবাসেবী থেকে ক্রমান্বয়ে ইয়াবা ব্যবসার সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িয়ে যান।

সূত্র: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

Exit mobile version