সু চির ভাষণের পরই বেশি পুড়েছে রোহিঙ্গাদের গ্রাম

পার্বত্যনিউজ ডেস্ক:

২৫ অগাস্ট থেকে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সহিংসতার শুরুর পর এখন পর্যন্ত প্রায় ছয় লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে। বলা হচ্ছে, এটা এ পর্যন্ত বিশ্বে সবচেয়ে দ্রুত বেড়ে ওঠা শরণার্থী সঙ্কট।

রাখাইনে সেনাবাহিনীর যে দমনপীড়নের কারণে রোহিঙ্গারা তাদের ঘরবাড়ি ছাড়তে বাধ্য হয়েছে জাতিসঙ্ঘ তাকে “পাঠ্যবই-এ জাতিগত নিধনের উদাহরণের” সাথে তুলনা করেছে। মিয়ানমারের সেনাবাহিনী দাবি করেছে বেসামরিক জনগণ তাদের লক্ষ্যবস্তু নয়।

হিউম্যান রাউটস ওয়াচ স্যাটেলাইটের মাধ্যমে রাখইনের যে ছবি তুলেছে তা বিশ্লেষণ করে তারা বলছে ২০১৭’র অগাস্টের পর উত্তর রাখাইনে আগুনে সম্পূর্ণ অথবা আংশিক পুড়ে গেছে অন্তত ২৮৮টি গ্রাম। ছবিতে দেখা যাচ্ছে, বহু এলাকা যেখানে রোহিঙ্গাদের গ্রাম ছিল সেসব এলাকা পুড়ে ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে, কিন্তু কাছেই রাখাইনের স্থানীয় বৌদ্ধদের গ্রামগুলো অক্ষত রয়েছে।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলছে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে ২৫ অগাস্ট থেকে ২৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে মংডুর শহরতলীতে। এর মধ্যে তাদের হিসাবে সবচেয়ে বেশি গ্রাম ধ্বংস হয়েছে ৫ সেপ্টেম্বরের পর যখন দেশটির নেত্রী অং সান সুচি বলেছিলেন, সেখানে নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযান শেষ হেয় গেছে।

বাংলাদেশে পালিয়ে আসা প্রায় ছয় লাখ শরণার্থী এখন বাস করছেন কক্সবাজার এলাকার বিভিন্ন শিবিরে।
এর মধ্যে সবচেয়ে বড় শিবির কুতুপালং-এর পরিধি অগাস্ট মাসের পর বাড়ানো হলেও আশপাশে অস্থায়ী শিবিরগুলোতে এখন রয়েছেন প্রায় তিন লাখ ১২ হাজার শরণার্থী।

মিয়ানমারের বাহিনী রাখাইনে ‘মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ’ করছে – বলছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ
সর্বশেষ এ সপ্তাহে যে ১৫ হাজার শরণার্থী বাংলাদেশে ঢুকেছেন তারা বলছেন রাখাইনে তাদের ঘরবাড়ি জ্বালানো এখন বন্ধ হলেও তাদের ওপর নির্যাতন ও ধর্ষণ এখনো অব্যাহত আছে। তারা বিবিসি বাংলার সাংবাদিককে বলেছেন রুজি রোজগারের সব পথ বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা ছাড়া তাদের আর কোনো গতি নেই।

রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানের আশ্বাসে মিয়ানমারে গঠিত হচ্ছে নতুন দল

মিয়ানমারের রোহিঙ্গা সঙ্কটসহ অন্যসব সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়ে নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের ঘোষণা দিয়েছেন মিয়ানমারের সাবেক ছাত্রনেতা ও সু চির সহযোদ্ধা কো কো জি। চলতি বছরের শেষ নাগাদ তার নেতৃত্বে একটি রাজনৈতিক দল আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছে বলে জাপানি সংবাদমাধ্যম এনএইচকে দেয়া সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন তিনি।

দল গঠনে তিনি এখনো প্রচারণা না নামলেও এ বিষয়ে জাপানে বসবাসকারী মিয়ানমারের নাগরিকদের সমর্থন পাওয়ার চেষ্টা করছেন। তিনি বলেন, ‘আমি আমার দেশে জনবান্ধব একটি দল গঠন করতে চাই।’

মিয়ানমারে গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী অং সান সু চি’র পরই সম্ভবত কো কো জি হয়ে উঠবেন সবচেয়ে সম্ভাবনাময়ী গণতান্ত্রিক নেতা। তিনি গণতান্ত্রিক আন্দোলন গ্রুপ ‘৮৮ জেনারেশন স্টুডেন্টস’-এর নেতা হিসেবে প্রথম আলোচনায় আসেন। তার গ্রুপটি সু চি’র পক্ষ হয়ে আন্দোলন করে সেনা শাসনামলের অবসানের লক্ষ্যে ব্যাপক কাজ করে যায়। তাদের সংগ্রাম সফল হওয়ার পর গত ৫ বছর আগে দুই দশকের জেলজীবন থেকে মুক্তি পান জি।

২০১৫ সালের নির্বাচনে বিপুল বিজয় নিয়ে সরকার গঠন করে অং সান সু চি’র দল। আর এ জয়ের ফলে মিয়ানমার গণতান্ত্রিক ধারায় ফিরে যায়। কিন্তু জি বলেন, তার কাজ এখনো শেষ হয়নি। তিনি এনএইচকে’কে বলেন, তিনি নতুন একটি দল গঠন করতে চান, যা জনগণের জন্য একটি বিকল্প ধারা হবে।

সামরিক সরকারের পতনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারী এই নেতা মনে করেন, সু চি একা রোহিঙ্গা সঙ্কটের সমাধান করতে সক্ষম নন। সঙ্কট নিরসনে মিয়ানমারে ‘জবাবদিহিতামূলক বহুদলীয় গণতন্ত্র’ প্রতিষ্ঠার গুরুত্ব তুলে ধরেন তিনি।

চলতি সপ্তাহে নিপ্পন ফাউন্ডেশনের আমন্ত্রণে জাপান গিয়েছিলেন কো কো জি। এসময় বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে মায়ানমারের সংকট নিয়ে কথা বলেন তিনি।

তার একজন সমর্থক মনে করেন, ‘আমি নিশ্চিত কো কো জি মিয়ানমারের ভবিষ্যত নিয়ে কাজ করবে।’
রাখাইন পরিস্থিতিতে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম ও আন্তর্জাতিক সংস্থা নিধনযজ্ঞ বললেও মিয়ানমারের সেনাবাহিনী বারবারই তা অস্বীকার করে এসেছে। দেশটির ডি ফ্যাক্টো সরকারের রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা অং সান সু চিও বিষয়টি নিয়ে কোনো বক্তব্য দেননি। রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দিতে বরাবরই অস্বীকৃতি জানিয়েছে মায়ানমার সরকার। অং সান সু চি রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার কথা বললেও এই ব্যাপারেও স্পষ্ট করে কিছু বলেননি।

তবে কো কো জি কথা বলেছেন নির্দিষ্ট করেই। তিনি বলেন, ‘তারা নাগরিকত্বের আবেদন করতে পারে। এটা পাওয়ার পর তারা রাষ্ট্র থেকে সকল সুযোগ সুবিধা পাবে। সব নাগরিকই ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে রাষ্ট্রের কাছে সমান সুবিধা উপভোগ করবে।’

শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে যারা আইন লঙ্ঘন করবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।

এনএইচকে’র প্রতিবেদনে বলা হয়, কো কো জির নতুন দল কেমন করবে তা এখনই বলা যাচ্ছে না। তবে নতুন এই গণতান্ত্রিক দেশে সু চিকে নিশ্চিতভাবেই চ্যালেঞ্জ জানাবে এই দল।

 

সূত্র: নয়াদিগন্ত

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন