সীতাকুণ্ডে নিহত তিন জঙ্গির বাড়ি বান্দরবানে

Bandarban pic-18.3

নিজস্ব প্রতিবেদক, বান্দরবান:

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার প্রেমতলা এলাকার জঙ্গি আস্তানা ছায়ানীড় নামের বাড়িতে নিহত পাঁচজনের মধ্যে তিনজন এবং সাধনকুটিরে গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তিসহ চারজনের বাড়ি বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায়।

নিহতরা হলেন নাইক্ষ্যংছড়ির বাইশারী এলাকার বাসিন্দা কামাল হোসেন, তার স্ত্রী জুবাইরা ইয়াসমিন ও তাদের শিশু সন্তান। আর আরামবাগে সাধনকুটির থেকে গ্রেফতার জুবাইরা ইয়াসমিনের ভাই জহিরুল হক (জসিম)।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, জুবাইরা ইয়াসমিন ও তার ভাই জহিরুল হক (জসিম)’র বাড়ি নাইক্ষ্যংছড়ির বাইশারী ইউনিয়নের ৯নম্বর ওয়ার্ডের যৌথ খামার পাড়ায়। তারা সেখানে বসবাসকারী নুরুল আলম ও জান্নাত আরার সন্তান। জুবাইরা ইয়াসমিনের স্বামী কামাল হোসেনের বাড়িও বাইশারীর যৌথ খামারপাড়ায়। নুরুল আলম মহেশখালী থেকে গত ২০বছর আগে এ এলাকায় বসতি গড়ে তোলেন।

জুবাইরা ইয়াসমিনের মা জান্নাত আরা জানায়, স্বামী কামাল হোসেন বেড়াতে যাওয়ার কথা বলে স্ত্রী জুবাইরা ইয়াসমিনকে চট্টগ্রামে নিয়ে যায়। কিছুদিন পর ছেলে জহিরুল হকও তাদের কাছে চলে যায়। সেখানে জুবাইরার সন্তানকে দেখাশুনা করার জন্য  আরেক মেয়ে মনজি বেগমকে (১৬) ও চট্টগ্রামে নিয়ে যায়। গত আট মাসে মাঝে মধ্যে মুঠোফোনে জানাত যে, তারা খুব সুখে আছেন। ভালো টাকা পয়সা পাচ্ছেন। এখন জানতে পেরেছে যে জুবাইরা ইয়াসমিন এবং শিশু বোমা বিস্ফারণে মারা গেছে। মনজিরও কোন খবর নেই। তার ৮ ছেলে এবং ৪মেয়ের মধ্যে ৩জন হারিয়ে গেছে। কামাল ও জুবাইরা ধার্মিক ছিল বলে তিনি জানান।

সূত্র জানায়, জঙ্গিরা গত ডিসেম্বর থেকে চট্টগ্রামের পটিয়া পৌর সদরের ৩নং ওয়ার্ডের আমির ভাণ্ডার রেলগেট এলাকার  নুরুল আমিন মুন্সির পাকা ভবনের তৃতীয় তলায় ভাড়া থাকতেন। ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে বাসা ছেড়ে চলে যান।

বাইশারীর ইউপি সদস্য আবু তাহের বলেন, যৌথ খামার পাড়ায় কিছু রোহিঙ্গা এবং নোয়াখালিসহ দেশের নানা প্রান্তের লোকজন বসতি গড়েছেন। হয়তো এ জন্যে অনেকে বিপদগামী হচ্ছেন। আমরা এলাকার নিখোঁজ ব্যক্তিদের তালিকা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

বাইশারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলম বলেন, বিষয়টি খুবই উদ্বেগের। বাইশারী প্রবেশ মুখে পুলিশের তল্লাসি চৌকি বসানো উচিত। এ ব্যাপারে আমরা সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলবো।

৭মার্চ টঙ্গীতে জঙ্গি নেতা মুফতি হান্নানকে প্রিজন ভ্যান থেকে ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টার পরের দিন কুমিল্লায় পুলিশের ওপর বোমা হামলা করে দুই জঙ্গি। স্থানীয়দের সহায়তায় গুলিবিদ্ধ অবস্থায় জঙ্গি জহির ওরফে জসিম (২৫) এবং হাসানকে (২৪) আটক করা হয়। আটক হাসানের বাড়ি বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির বাইশারীর করলিয়া মোড়া এলাকায়, তার বাবার নাম নুর হোসেন।

এ ব্যাপারে বাইশারী পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক (এসআই) আবু মুসা বলেন, সীতাকুণ্ডে নিহত বাইশারীর জুবাইরা ইয়াসমিন তার স্বামী ও ভাইদের সঙ্গে কুমিল্লায় বাসে জঙ্গি হামলার ঘটনায় গ্রেফতার হাসানের পারিবারিক সম্পর্ক ছিল বলেও আমরা তথ্য পেয়েছি। এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।

নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক তসলিম ইকবাল চৌধুরী বলেন, বাইশারীতে কিছু মৌলভি ধর্মের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে সন্ত্রাসী কাজে স্থানীয়দের উদ্বুদ্ধ করছে। এটা নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। বাইশারীর লোক যে জঙ্গি কাজে জড়িত এ ঘটনায় আমরা বেশ লজ্জিত।

বান্দরবান পুলিশ সুপার সঞ্জিত রায় বলেন, আমরা এ বিষয়ে কাজ করছি এবং হারিয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের নতুন করে তালিকার কাজ করা হবে। নাইক্ষ্যংছড়ির বিভিন্ন এলাকায় জঙ্গিবিরোধী অভিযানের প্রস্তুতি নিচ্ছি।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন