Notice: Trying to get property 'post_excerpt' of non-object in /home/parbatta/public_html/wp-content/themes/artheme-parbattanews/single.php on line 53

Notice: Trying to get property 'guid' of non-object in /home/parbatta/public_html/wp-content/themes/artheme-parbattanews/single.php on line 55

সাগরের ঢেঁউয়ের ধাক্কায় বিলিন হচ্ছে বেড়িবাঁধ, অাতংকে মাতারবাড়ী দ্বীপবাসী

মহেশখালী প্রতিনিধি:

কক্সবাজারের মহেশখালীতে একের পর এক মেগা মেগা উন্নয়ন প্রকল্পে পাল্টে যাচ্ছে এ উপজেলার চিত্র। বিশেষকরে, মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ীতে ১৪’শ ও ১২’শ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন দু’টি কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে।

ইতিমধ্যে মাতারবাড়ীর দক্ষিণে ১৪’শ মেঘাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ প্রায় ৩০% সমাপ্ত হয়েছে। অার মাতারবাড়ীর পশ্চিমে নৌ-বন্দর নির্মাণেরর জন্যও চলছে জরিপ কাজ। সব মিলিয়ে মাতারবাড়ী হতে যাচ্ছে মিনি সিঙ্গাপুর।

তারপরেও মাতারবাড়ী সাগর পাড়ের মানুষের অার্তনাদে যেন অাকাশ বাতাশ ভারি হয়ে উঠছে। মাতারবাড়ীর প্রতিটি ঘরে চলছে নিরব কান্নার রোল। মাতারবাড়ীতে এত উন্নয়ন, তারপরও সুখে নেই এ ইউনিয়নের মানুষ গুলো।

এবারের ঈদে কয়েক’শ পরিবারের ঈদ অানন্দ কেটেছে পানির সাথে যুদ্ধ করে। জোয়ারের পানি অার বৃষ্টির পানিতে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে তলিয়ে গেছে মাতারবাড়ীর দক্ষিণ রাজঘাট, বিল পাড়া, উত্তর সিকদার পাড়া, দক্ষিণ সাইরার ডেইল সহ অনেক নিম্নাঞ্চল।

এদিকে মাতারবাড়ী ইউনিয়টি বঙ্গোপসাগরের মোহনায় হওয়ায় ঘূর্ণিঝড় ও দূর্যোগের তোপের মুখে থাকে প্রতিনিয়ত। বিভিন্ন প্রাকৃতিক দূর্যোগে মাতারবাড়ী মানুষগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে। স্থায়ীভাবে ব্লক দিয়ে বেড়িবাঁধ সংস্কার না করার কারণে বার বার ক্ষতির সম্মুখীন হয় উপকূলের এই গুরুত্বপূর্ণ ইউনিয়ন।

ক্ষতিগ্রস্ত মাতারবাড়ীবাসীর বেড়িবাঁধ সংস্কারের দাবি দীর্ঘদিনের হলেও নানা অজুহাত দেখিয়ে কাজের কোন প্রকার অগ্রগতি হয়নি এখনও। ফলে অতীতেও উপকূলের লাখো মানুষ অকালেই প্রাণ হারায় সর্বনাশা বঙ্গোপসাগারে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় অার সাগরের বড় জলরাশিতে।

বেঁড়িবাধের পাশে বসবাসকারী লোকজন জানান, গেল ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছিল মাতারবাড়ীতে। যা থেকে এখনও পর্যন্ত ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি অনেক অসহায় পরিবার। ঘুমানোর জন্য ছিলনা কোনো নিরাপদ বাসস্থান। কিন্তু তারপরও এ নিয়ে খুব বেশি আক্ষেপ নেই তাঁদের। সবার আগে স্থায়ী বেড়িবাঁধ চান তারা।

অপরদিকে মাতারবাড়ী ইউনিয়নের ষাইটপাড়া এলাকায় বেড়িবাঁধের প্রায় আধাঁ কিলোমিটার এলাকা নতুন করে সাগরের বড় বড় ঢেউয়ের ধাক্কায় বিলিন হতে চলেছে। পাকা বেড়িবাঁধের বড় অংশ ধসে যাওয়ায় আতঙ্কে দিন কাটছে মাতারবাড়ীর প্রায় ৮০ হাজার মানুষের। বেড়িবাঁধের বাকি এক কিলোমিটার অংশও যে কোনও সময় বিলিন হতে পারে বলে আশঙ্কা মাতারবাড়ীবাসির। তেমনটা হলে পুরো মাতারবাড়ী ইউনিয়ন সাগরের পানিতে তলিয়ে যাবে।

চলতি বর্ষা মৌসুমে উপজেলার মাতারবাড়ী ইউনিয়নের অনেক নিম্নাঞ্চল পানিতে তলিয়ে গেছে অার সামনের ভারি বর্ষণে পুরো মাতারবাড়ীই পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ার আশংকা করছেন স্থানীয় লোকজন।

অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, মাতারবাড়ীতে জলাবদ্ধতার জন্য সাগরের পানির প্রয়োজন হবে না, বৃষ্টির পানি বের হতে না পারলে এমনিতেই পুরো মাতারবাড়ী পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ার অাশংকা স্থানীয় সচেতন মহলের।

মাতারবাড়ীর লোকজন বার-বার পানি নিষ্কাশনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য দাবী জানিয়ে অাসলেও কোল পাওয়ার জেনারেশন কর্তৃপক্ষ এতে কোন ধরনের কর্ণপাত না করে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা বন্ধ করে দেওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে জানালেন ভুক্তভোগীরা।

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মাস্টার মোহাম্মদ উল্লাহ মাতারবাড়ীর চারপাশে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের জন্য প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে একাধিকবার আবেদন করলেও এখনো কোন ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করেনি সংশ্লিষ্ট প্রশাসন। শুধু তাই নয়, মাতারবাড়ীতে বাস্তবায়নাধীন কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের কারণে ক্ষতিগ্রস্তদের কোন দাবীই এখনো পর্যন্ত পূরণ হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা।

এ ছাড়াও কোল পাওয়ার জেনারেশন মাতারবাড়ী ইউনিয়নে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা বন্ধ করে দিয়ে পুরো ইউনিয়নে জলাবদ্ধতা সৃষ্টির ষড়যন্ত্র করছে এমন অভিযোগও রয়েছে অহরহ। এরই মধ্যে দুইটি কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের বাউন্ডারী ওয়াল নির্মাণের ফলে অাগে যে সমস্ত পানি চলাচলের জন্য পলবোট ও স্লুুইচগেইট ছিল তা সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিয়েছে প্রকল্পে বেড়িবাঁধ নির্মাণকারী কর্মকর্তারা।

এটিই এখন মাতারবাড়ী বাসির জন্য বিষ ফোঁড়া হয়ে নতুন করে আতংকের বিষয়ে দাড়িয়েছে। যার ফলে স্থানীয় লোকজন এখন ধীরে-ধীরে ফুঁসে উঠতে শুরু করেছে। যা এক দিন বড় ধরনের বিষ্ফোরিত হয়ে কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প এলাকার শ্রমিকদের সাথে সংঘর্ষে রুপ নিতে পারে এমন অাশংকাও রয়েছে অত্র এলাকার সচেতন মহলের।

এ বিষয়টি অবহিত করতে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক, কোল পাওয়ার জেনারেশন ও মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে আবেদন করেছেন মাতারবাড়ীর ইউপি চেয়ারম্যান মাষ্টার মোহাম্মদ উল্লাহ। তিনি বলেন, অবিলম্বে মাতারবাড়ীতে পানি নিষ্কাশনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিলে চলতি বর্ষা মৌসুমে ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রীসহ সকলেই এ সব কাজ দ্রুতগতিতে বাস্তবায়ন করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। তারপরও কেন পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা নিচ্ছে না তা মাতারবাড়ীর মানুষের কাছে অজানা প্রশ্ন থেকে যায়।

ইতোমধ্যে উত্তর রাজঘাট ও পশ্চিম পাশের সাইড পাড়া বেড়ীবাঁধের ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে, যা স্ব-চোখে না দেখলে বুঝা যাবে না। অাবার কিছু কিছু জায়গা দিয়ে জোয়ারের পানি প্রবেশ করার সুযোগ থাকলেও তা অার বের হওয়ার কোন সুযোগই নেই।

এব্যাপারে কোল-পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানীর নির্বাহী প্রকৌশলী বেলাল হোছাইন এর কাছে মোবাইল ফোনে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ইতিমধ্যে মাতারবাড়ীতে পানি নিষ্কাশনের জন্য স্লুুইচগেইট নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে এবং তা স্থানীয় চেয়ারম্যানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তিনি বর্তমানে ছুটিতে থাকায় এ ব্যাপারে চেয়ারম্যানের কাছ থেকে বিস্তারিত জানার জন্যও এ প্রতিবেদক কে বলেন।

মাতারবাড়ীর ইউপি চেয়ারম্যান মাষ্টার মোহাম্মদ উল্লাহ তিনি জানান, পানি নিষ্কাশনের জন্য কোল পাওয়ার জেনারেশন কর্তৃক একটি স্লুুইচগেট নির্মাণের বরাদ্দ দিলেও তা এ বর্ষায় কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই অাপাতত পলবোটের মত ব্যবস্থা করে চলতি বর্ষার পানি বের করা হচ্ছে। অাগামী গ্রীষ্ম মৌসুমে উক্ত স্লুুইচগেট নির্মাণ কাজ শুরু হবে বলে জানান তিনি।

মাতারবাড়ীতে প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার ভিত্তিক ২টি বড় কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে জাপানের নির্মাণ সংস্থা জাইকা ও সিঙ্গাপুরের অর্থায়নে।

ইতোপূর্বে মাতারবাড়ীর প্রায় ৯০ হাজার জনগন তাদের ন্যায্য কিছু দাবী নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বরাবরে বহুবার উপস্থাপন করার পরও নুন্যতম দাবীও এখনো বাস্তবায়িত হয়নি। গেল বর্ষার পানিতে মাতারবাড়ীর নিচু এলাকায় স্থায়ী জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছিল। লবণ পানি প্রবেশের সুযোগ না থাকায় দুই প্রকল্পের বাইরে প্রায় হাজারের অধিক একর লবণ মাঠে চাষ করতে পারে নি চাষিরা।

একই ভাবে চলতি বর্ষা মৌসুমে পানি বের হতে না পারলে জলাবদ্ধতার কারণে বর্ষায়ও হবে না ধান চাষ। তাই এই মুহুর্তে ব্যবস্থা না নিলে চলতি বর্ষায় বৃষ্টির পানিতে বড় ধরণের বন্যায় রূপান্তরিত হয়ে দীর্ঘদিন জলাবদ্ধতার সৃষ্টি করে অতি কষ্টে জীবন যাপন করতে হবে মাতারবাড়ীবাসির।

কক্সবাজার জেলা পরিষদের সদস্য মাষ্টার রুহুল অামিন বলেন, মাতারবাড়ীর পশ্চিম পাশের বেড়িবাঁধের যে করুণ অবস্থা তা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। যে কোন মুহুর্তে সাগরে বিলিন হতে সময় লাগবে না। তার মধ্যে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় অারেক কষ্ট কর হয়ে দাড়িয়েছে মাতারবাড়ীবাসি।

তিনি রাঙ্গাখালীতে যে স্লুুইচগেট নির্মাণের ব্যবস্থা করা হয়েছে তা শীঘ্রই শুরু করার জন্য কোল-পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানীর কর্মকর্তাদের আহ্বান জানান।

কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ড এর প্রকৌশলী মো. শফিকুর রহমান বলেন, অামি এ বছর মাতারবাড়ী বেড়িবাঁধটি পরিদর্শন করে এসেছি। মাতারবাড়ী পশ্চিমের সাইড পাড়া বেড়িবাঁধটি অার সি সি ব্লক দিয়ে একটি টেঁকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের পরিকল্পনা অামাদের রয়েছে। তবে এটি অনুমোদনের জন্য ৫ থেকে ৬ মাস সময় লাগতে পারে। তাই এ বছর কোন রকম টিকিয়ে রাখতে অামরা সর্বাত্বক চেষ্টা করব।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন