সমঝোতা চুক্তিতে রোহিঙ্গাদের চেয়ে বেশি খুশি স্থানীয়রা
পার্বত্যনিউজ ডেস্ক:
শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশে অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারের অংসান সু চি সরকার বাংলাদেশের সঙ্গে সমঝোতা চুক্তিতে সই করায় রোহিঙ্গা শিবিরের সাধারণ রোহিঙ্গারা বেশ খুশি। তারা চান আজ হোক কাল হোক স্বদেশে ফিরে যেতে।
তবে মিয়ানমারের রাজধানী নেপোডিতে (ইয়াঙ্গুন) গতকাল বৃহস্পতিবার সম্পাদিত বহুল আলোচিত দুই দেশের সমঝোতা চুক্তির খবরে সবচেয়ে বেশি খুশি হয়েছেন কক্সবাজারের বাসিন্দারা। সেই সঙ্গে অবশ্য মিয়ানমারের এরকম সমঝোতা চুক্তির প্রতি কি স্থানীয় এলাকাবাসী এবং কি রোহিঙ্গা কেউই পূর্ণ আস্থা আনতে পারছে না।
কক্সবাজারের রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকার বাসিন্দারা গত বুধবারের মিয়ানমারের নেপোডিতে দুই দেশের বৈঠক শুরু থেকেই মূলত অধীর অপেক্ষায় রয়েছেন-চুক্তি সম্পর্কিত খবরের জন্য। আজ বৃহস্পতিবার চুক্তির খবরে এলাকায় মানুষ খুশিতে মেতে উঠে।
বিশেষ করে মিয়ানমার-বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী এলাকা উখিয়া-টেকনাফ ও নাইক্ষ্যংছড়ির বাসিন্দাদের ঘরে ঘরে মানুষ সমঝোতা চুক্তি সাক্ষরের খবরে আনন্দ-উত্সবে মেতেছে। অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে অং সান সু চির সম্মতির কথা জানাজানির পর সীমান্তের লোকজন আনন্দ মিছিল বের করার ঘোষণাও দিয়েছে।
উখিয়ার কুতুপালং শিবিরে বসবাসকারি মিয়ানমারের মংডুর ফকিরাবাজার থেকে আসা রোহিঙ্গা খাইরম্নল আমিন (৪০) মিয়ানমার-বাংলাদেশ সমঝোতা চুক্তির কথা শুনেই প্রতিক্রিয়ায় বললেন, বাজিরে চুক্তির কথা ফুনিয়েরে গা হালকা হইয়্যে। আঁই আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় গরির। আজিয়া হউক কালিয়া হউক আঁরার দেশত ফিরি যাইয়্যুম।
‘ অর্থাৎ বাবারে চুক্তির কথাটি শুনে শরীরটা হালকা অনুভব করছি। আমি আল্লাহর নিকট শুকরিয়া আদায় করছি। আজ হোক কাল হোক আমরা আমাদের দেশে ফিরে যাব।
কুতুপালং শিবিরের লম্বাশিয়া এলাকার বাসিন্দা রোহিঙ্গা সাবের আহমদ (৪৫) জানান, বাংলাদেশ আমাদের জন্য অত্যন্ত আন্তরিক ছিল বিধায় এত দ্রুত এরকম একটি চুক্তি সাক্ষর করতে পেরেছে। তাই আমরা বাংলাদেশ সরকারকে ধন্যবাদ জানাই। ‘ তিনি বলেন, রাখাইনে তাদের ঘরবাড়ি, জায়গা-জমি ফেরৎসহ তাদের নাগরিকত্ব দেওয়ার বিষয়টি গুরুত্বের সাথে সবাইকে দেখা দরকার।
উখিয়ার বালুখালী রোহিঙ্গা শিবিরের সি ব্লকের মাঝি (রোহিঙ্গা সর্দার) আইউব আলী মোবাইলে জানান, ‘মিয়ানমার সরকার এতদিন ধরে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন-নিপীড়ন ও ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া সহ যাবতীয় কিছু অস্বীকার করে আসছিল। আর বাংলাদেশসহ আন্তর্জাতিক বিশ্বেও চাপের মুখে মিয়ানমার শেষ পর্যন্ত আজ বৃহস্পতিবার সমঝোতা চুক্তি সাক্ষরের মানেই হচ্ছে রোহিঙ্গাদের অস্তিত্ব স্বীকার করে নেওয়া। ‘
এ কারণেই এমন সমঝোতা চুক্তিকে রোহিঙ্গা সর্দার আইউব অত্যন্ত গুরুত্বেও সঙ্গে বিবেচনা করছেন। তিনি বলেন, এই চুক্তি মানেই হচ্ছে রাখাইনে অত্যাচার-নিপীড়নকে স্বীকার করে নেওয়া। সেই সঙ্গে রোহিঙ্গাদেরও স্বীকার করা। সুতরাং চুক্তিতে কি আছে আর কি নেই বড় কথা নয়। এতটুকুতে রাজি করানোও বড় অর্জন বলে মনে করেন এই রোহিঙ্গা।
উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়নের মেম্বার এবং নাফনদ তীরবর্তী আঞ্জুমানপাড়া গ্রামের বাসিন্দা সুলতান আহমদ জানান, ‘চুক্তি হয়েছে তাতেই আমরা খুশি। এ জন্য আমরা আনন্দ মিছিলও বের করব। অনেকেই মনে করেছিলেন মিয়ানমার চুক্তিতে আসবে না। আজ আন্তর্জাতিক চাপের মুখে মিয়ানমার চুক্তিতে আসতে বাধ্য হয়েছে। এটা বাংলাদেশের সরকারের জন্য ইতিবাচক দিক। ‘
বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি ইউনিয়নের সংরক্ষিত নারী মেম্বার এবং ঘুংধুম সীমান্তের বাসিন্দা খালেদা বেগম জানান, ‘এরকম চুক্তিতে এলাকার বাসিন্দারা খুশি হলেও মিয়ানমারের প্রতি কারও আস্থা নেই। যেমনি রোহিঙ্গাদের আস্থা নেই তেমনি স্থানীয় গ্রামবাসীরাও মিয়ানমারকে বিশ্বাস করতে পারছে না। মিয়ানমার চুক্তি করলেও চুক্তির বরখেলাপ করবে না এমন ভাবার কোনো কারণ নেই। ‘
তবে মিয়ানমারের সঙ্গে এরকম সমঝোতা চুক্তিতে নাখোশ হয়েছেন উখিয়ার কুতপালং এলাকার বাসিন্দা এবং বিএনপি নেতা বাদশাহ মিয়া চৌধুরী। তিনি প্রতিক্রিয়ায় বলেন, এটা কোন সমঝোতা চুক্তি হয়নি। রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার জন্য এ চুক্তিতে এমন কিছুই নেই। তাই এটা কোন চুক্তিই হয়নি। বরং এরকম চুক্তি না হওয়াটাই ভাল ছিল। তবে এ রকম চুক্তি না হলে রোহিঙ্গারা কি এদেশে স্থায়ীভাবে থেকে যাওয়াটা ভালো হতো-এ ব্যাপারে এই বিএনপি নেতার জবাব নেই।
সূত্র: কালের কন্ঠ