শেখ হাসিনার ঐতিহাসিক বিজয়

পার্বত্যনিউজ রিপোর্ট:
রেকর্ড জয়ের পথে আওয়ামী লীগ। ফলে টানা তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠন করে নতুন ইতিহাস গড়তে যাচ্ছে দলটি। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে হ্যাটট্রিক করবেন শেখ হাসিনা। ঘটনাবহুল এক ভোট। নতুন এক ইতিহাস। পর্বত উচ্চ ফল। মহাজোটের মহাবিজয়। অভূতপূর্ব এ ফল ভেঙে ফেলেছে সব হিসাবনিকাশ। মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে সব জরিপ আর পূর্বাভাস। এমন এক বিজয় নিয়ে টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতার মসনদে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জোট। আওয়ামী লীগ বলছে, নির্বাচনে ভোটের মাধ্যমে উন্নয়ন ও অগ্রগতির পক্ষে রায় দিয়েছে দেশের মানুষ। একই সঙ্গে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ জোটকে ভোটের মাধ্যমে প্রত্যাখ্যান করেছে। অন্যদিকে ভোটের মাঠে কোণঠাসা থাকা বিরোধী জোট শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে থেকেও ফল প্রত্যাখ্যান করেছে। দাবি করা হয়েছে নতুন নির্বাচনের।

রাত তিনটা পর্যন্ত পাওয়া ২৯৯ আসনের বেসরকারী ফলাফলে দেখা গেছে শাসক দল আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট ২৮৯ আসন, ঐক্যফ্রন্ট ৭ আসন এবং স্বতন্ত্র ৩ আসনে জয় লাভ করেছে। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ-২৫৮, জাতীয় পার্টি ২২, বিএনপি-৫, গণফোরাম-২, বিকল্পধারা-২, ওয়ার্কার্স পার্টি ২, জাসদ-২, তরিকত-২, জেপি-১, স্বতন্ত্র-৩ আসনে জয়লাভ করেছে। একটি আসনে ভোট গ্রহণ স্থগিত রয়েছে। এ রায়ের মধ্য দিয়ে দেশে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখার ম্যান্ডেট পেল আওয়ামী লীগ।

রোববার দেশের ২৯৯টি আসনের ভোট গ্রহণ শেষে সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তারা বেসরকারি এ ফল ঘোষণা করেন। তাদের ওই ফলাফল নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয় থেকেও প্রকাশ করা হয়। ইসি সচিবালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ধারাবাহিক জয়ের সূচনা করেছিল আওয়ামী লীগ। ওই নির্বাচনে ২৬৪ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে আওয়ামী ২৩০ আসনে জয় পেয়েছিল। প্রতিপক্ষ বিএনপি ২৬০ আসনে লড়াই করে ৩০টিতে জয় পায়।

তত্ত্বাবধায়ক ইস্যুতে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করেছিল বিএনপি। ওই নির্বাচনে ২৪৭ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে আওয়ামী লীগ ২৩৪টিতেই জয় পেয়েছিল।

এবার নিবন্ধিত ৩৯টি রাজনৈতিক দলের সবার অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হল একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। রোববার ভোট গ্রহণ শেষে বিকালে রিটার্নিং কর্মকর্তারা বেসরকারি ফল ঘোষণা শুরু করেন।

তাদের ওই ফলাফল নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয় থেকেও প্রকাশ করা হয়। নির্বাচন শেষে রোববার সন্ধ্যায় সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে ব্রিফিং করেন ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ। তিনি বলেন, ভোট উৎসব হয়ে গেল। ৪০ হাজার কেন্দ্রের মধ্যে ২২টি বাদে বাকি সব কেন্দ্রে শান্তিপূর্ণ ও ভোটারদের ব্যাপক অংশগ্রহণের মধ্য ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে।

মহাজোটের বিজয়ী প্রার্থীদের মধ্যে আছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। তিনি গোপালগঞ্জ-৩ আসনে বিজয়ী হয়েছেন। স্পিকার শিরিন শারমিন চৌধুরী রংপুর-৬ আসন থেকে জয়লাভ করেন।

সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের নোয়াখালী-৫, শেখ ফজলুল করিম সেলিম গোপালগঞ্জ-২, হাসানুল হক ইনু কুষ্টিয়া-২, নুরুল ইসলাম নাহিদ সিলেট-৬, মীর্জা আজম জামালপুর-৩, মোজাফফর হোসেন জামালপুর-৫, মো. শফিকুর রহমান চাঁদপুর-৪ আসনে বিজয়ী হন।

ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন নির্বাচন করেননি। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বগুড়া-৬ আসনে জয়লাভ করেন। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদ রংপুর-৩,রওশন এরশাদ ময়মনসিংহ-৪ আসনে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন।

জেপি প্রার্থী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু পিরোজপুর-২ আসনে জয় লাভ করেন। আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট প্রার্থীদের মধ্যে আমির হোসেন আমু ঝালকাঠি-২, তোফায়েল আহমেদ ভোলা-১ মতিয়া চৌধুরী শেরপুর-২ আসনে জয়লাভ করেন।

রাতে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত বেশির ভাগ আসনেই মহাজোটের প্রার্থীরা এগিয়ে আছেন। একদিকে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের প্রার্থীদের বিপুল বিজয়, অন্যদিকে বিএনপিসহ ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলীয় জোটের বাঘা বাঘা নেতা ও সাবেক মন্ত্রীদের একে একে ধরাশায়ী হওয়ার খবর আসছিল।

মহাজোটের এই রেকর্ড বিজয়ের পরও জনগণকে শান্ত থাকতে বলেছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা?

এক বিবৃতিতে তিনি বলেছেন এখন আনন্দ মিছিল করার সময় নয়,দেশ গঠনের সময়। কাজেই কোনো স্থানে কেউ আনন্দ মিছিল করবেন না।

এদিকে ড.কামাল হোসেন সন্ধ্যান সাংবাদ সম্মেলন করে নির্বচনের ফল প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করেন।

এর আগে রোববার সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত টানা ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। এতে সহিংসতা, কেন্দ্র দখল, প্রতিপক্ষের পোলিং এজেন্টদের ঢুকতে না দেয়াসহ নানা বিষয়ে অভিযোগ করেন প্রতিপক্ষের কর্মী-সমর্থকরা। নির্বাচনী সহিংসতায় সারা দেশে ২১ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।

অনিয়মের কারণে নির্বাচনে প্রায় ৪০ হাজার ভোট কেন্দ্রের মধ্যে মাত্র ২২টি কেন্দ্রের ভোট গ্রহণ স্থগিত করা হয়েছে। তবে কোনো সংসদীয় আসনের ফল স্থগিত হয়নি। যদিও এ নির্বাচনে অনিয়ম নিয়ে সকাল থেকে বিএনপি ও কয়েকজন প্রার্থী ইসিতে অভিযোগ করেন। বিএনপি নেতারা বলেছেন, প্রমাণিত হয়েছে দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না।

ইসির নিয়ম অনুযায়ী, রোববার সকাল ৮টায় ভোট গ্রহণ শুরু হয়। শেষ হয় বিকাল ৪টায়। ৩০০ সংসদীয় এলাকার মধ্যে রোববার ২৯৯ আসনে ভোট হয়। গাইবান্ধা-৩ আসনে একজন প্রার্থী মারা যাওয়ায় আগেই ভোট স্থগিত করা হয়। সেখানে ভোট হবে ২৭ জানুয়ারি। নির্বাচন সামনে রেখে রাজধানীসহ বিভিন্ন শহর থেকে সাধারণ মানুষ নিজ নিজ এলাকায় চলে যান। এতে গ্রামসহ সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলোতে উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়ে। রাজধানীতেও বিপুলসংখ্যক নারী-পুরুষ ভোটারের উপস্থিতি দেখা গেছে বিভিন্ন কেন্দ্রে।

আওয়ামী লীগ ও মহাজোট নেতারা বলেছেন, কিছু আসনে বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ছাড়া সারা দেশে শান্তিপূর্ণ ভোট গ্রহণ হয়েছে। তারা বলেছেন, অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, স্বচ্ছ ও উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে নির্বাচন। প্রতিটি ভোট কেন্দ্রে ভোটারদের দীর্ঘ লাইন, জটলা ও নারীদের বিশাল উপস্থিতিই প্রমাণ করে এ নির্বাচনকে ঘিরে মানুষের ব্যাপক উদ্দীপনা ছিল।

বিএনপিসহ ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, প্রায় সব আসনের অধিকাংশ কেন্দ্রে ধানের শীষ প্রতীকের পোলিং এজেন্ট ছিল না। কোথাও পোলিং এজেন্টদের কেন্দ্রে ঢুকতেই দেয়া হয়নি। আবার কোথাও পোলিং এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়া হয়। এমন পরিস্থিতিতে ভোট কারচুপি ও জালিয়াতির অভিযোগ তুলে বেলা পৌনে ২টার মধ্যেই ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে শতাধিক প্রার্থী নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন।

সকালে ভোট দেয়ার পর রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল ও কলেজে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন ড. কামাল হোসেন। এজেন্ট নিয়ে প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এখানে এজেন্ট আছে। তবে বাইরে অনেক জায়গায় আমরা এজেন্ট দিতে পারিনি। অনেক জায়গা থেকে খবর পাচ্ছি আমাদের এজেন্টদের বের করে দেয়া হয়েছে। আমি দাবি করব এর তদন্ত হোক।’

ভোট দিতে গিয়ে বিএনপি এজেন্টের দেখা না পাওয়ার বিষয়ে কথা বলেছেন ২ নির্বাচন কমিশনার। সকাল ৯টায় মগবাজারের ইস্পাহানী গার্লস হাইস্কুল কেন্দ্রে ভোটদান শেষে নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার এবং লেকসার্কাস স্কুল ভোট কেন্দ্রে ভোট দেয়ার পর নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম এ বিষয়ে কথা বলেন।

এ সময় মাহবুব তালুকদার বলেন, এই কেন্দ্রে বিরোধী দলের কোনো নির্বাচনী এজেন্ট ছিল না। সারা দেশ থেকেও আমার কাছে অনিয়মের অভিযোগ আসছে।

আর রফিকুল ইসলাম বলেন, এটি ছাড়া আরেকটি কেন্দ্র পরিদর্শন করেছি আমি। দুই কেন্দ্রে বিএনপি জোটের কোনো এজেন্টের দেখা পাইনি। তবে নির্বাচনের সার্বিক পরিবেশ নিয়ে সন্তুষ্টির কথা জানান তিনি।

তবে বেলা পৌনে ১১টার দিকে উত্তরার ৫ নম্বর সেক্টরের আইইএস স্কুল কেন্দ্রে ভোট দিতে এলে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নুরুল হুদা বলেন, তারা (ধানের শীষের এজেন্ট) কেন আসতে পারেননি, তা তিনি জানেন না। তারা কেন্দ্রে কেন আসেননি বা কেন কোনো এজেন্ট নেই, সেটা প্রার্থীর নির্ধারিত এজেন্টরাই বলতে পারবেন। তবে পোলিং এজেন্টদের কেউ আসতে পারছেন না বা তাদের আসতে বাধা দেয়া হচ্ছে- এমন কোনো অভিযোগ তাদের কাছে কেউ করেননি।

রোববার সকাল ১০টার দিকে রাজধানীর বেইলি রোডে ভিকারুননিসা নূন স্কুল কেন্দ্র পরিদর্শনে যান পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত কোনো কেন্দ্র থেকে পোলিং এজেন্ট বের করে দেয়ার মতো অভিযোগ পায়নি পুলিশ। কেন্দ্রে পোলিং এজেন্টদের নিরাপত্তার দায়িত্ব পুলিশের। তখন তিনি আরও বলেন, বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হচ্ছে।

নির্বাচন চলাকালে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন করা হয়। সকাল ১০টা ও দুপুর ১২টার দিকে দুই দফা সংবাদ সম্মেলন করেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

তিনি দেশের বিভিন্ন এলাকায় ভোট কেন্দ্র দখলসহ সহিংসতার নানা অভিযোগ তোলেন। তিনি দাবি করেন, সরকার একতরফা নির্বাচন করছে। এটা একটা সহিংস নির্বাচন। এ সময় তিনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দিকেও অভিযোগের তীর ছোড়েন।

অপরদিকে বেলা ১১টার দিকে সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের কোনো নির্বাচনী এলাকায় বিএনপি বা ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী অথবা তাদের এজেন্টদের ওপর জোরজবরদস্তি করা হয়েছে- এমন কথা কেউ বলতে পারবেন না। বরং বিএনপি-জামায়াত সন্ত্রাসীদের হামলায় রাঙ্গামাটির কাউখালী উপজেলার ঘাগড়া ইউনিয়নে যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক বাছিরউদ্দীন নিহত এবং ১১ জন আহত হয়েছেন। বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসীরা চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে পুলিশের রাইফেল ছিনতাই করেছে। তিন পুলিশ সদস্যকে আহত করেছে।

এভাবে তিনি বিএনপি-জামায়াত কর্তৃক বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যকলাপের তথ্য তুলে ধরে বলেন, ধ্বংসাত্মক রাজনীতির কারণে জনগণ বিএনপি-জামায়াত-ঐক্যফ্রন্টকে বর্জন করেছে। জনগণ বিএনপির ডাকে কোনো সাড়া দেয়নি।

রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে গতকাল জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফল প্রকাশে বিশেষ আয়োজন করা হয়। এতে আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দল, দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষক, সাংবাদিক ও বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। ফল ঘোষণার সময় বিএনপির কোনো প্রতিনিধি দল ছিল না। তবে দলটির যুগ্ম-মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলালের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি সকালে ইসিতে এলেও দুপুরের আগেই তারা চলে যান।

৮ নভেম্বর এ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। বিএনপি, যুক্তফ্রন্টসহ কয়েকটি দলের দাবির মুখে পুনঃতফসিল ঘোষণা করে ৩০ ডিসেম্বর ভোট গ্রহণের দিন নির্ধারণ করা হয়।

ইসির সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, ঘোষিত পুনঃতফসিল অনুযায়ী গতকাল ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। প্রায় এক দশক পর জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা ও ধানের শীষ প্রতীকের মধ্যে মূল প্রতিযোগিতা হল।

এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রতীক নৌকা নিয়ে ২৭২ জন ও বিএনপির ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে ২৮২ জন লড়েছেন। এর মধ্যে সরাসরি আওয়ামী লীগ দলীয় ২৬০ জন ও বিএনপির ২৫৭ জন (জামায়াতের ২২ জনসহ) প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।

দলীয় প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করা বাকিরা জোটভুক্ত শরিক দলের। এ নির্বাচনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলে থাকা ৮টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল ধানের শীষ প্রতীকে লড়েছেন। পক্ষান্তরে মহাজোট ও ১৪ দলীয় জোটে থাকা ৪টি দল আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করেছেন।

ইসিতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের অভিযোগ: ভোট গ্রহণ চলাবস্থায় রোববার দুপুরে নির্বাচন কমিশনে ২২১টি আসনে নানা অনিয়মের অভিযোগ নিয়ে আসে বিএনপির প্রতিনিধি দলের নেতারা।

পরে প্রতিনিধি দলের প্রধান বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেছেন, আমাদের কথাই প্রমাণিত হল, দলীয় সরকারের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হতে পারে না। তারা অভিযোগ করেন, শনিবার রাতেই বেশ কিছু ভোট কেন্দ্রের ব্যালট বাক্স ভর্তি করা হয়। কিছু কেন্দ্র্রে ধানের শীষ প্রতীকের এজেন্টদের ঢুকতে বাধা দেয়া হয়েছে। এছাড়া কিছু কেন্দ্রে ঢুকতেই দেয়া হয়নি।

অপরদিকে ভোট গ্রহণ শেষ ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব ইউনুস আহম্মদ কমিশন সচিবালয়ে অভিযোগ করে বলেন, নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ। তিনি বলেন, ২৯৮ আসনের কোথাও হাতপাখা প্রতীকের এজেন্টদের ভোট কেন্দ্রে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি।

একনজরে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন:

  • ভোটকেন্দ্র: ৪০ হাজার ১৮৩টি
    ভোটকক্ষ: ২ লাখ ৭ হাজার ৩১২টি
    মোট ভোটার: ১০ কোটি ৪২ লাখ ৩৮ হাজার ৬৭৭ জন
    পুরুষ ভোটার: ৫ কোটি ২৫ লাখ ৭২ হাজার ৩৬৫ জন
    মহিলা ভোটার: ৫ কোটি ১৬ লাখ ৬৬ হাজার ৩১২ জন
    অংশগ্রহণকারী দলের সংখ্যা: ৩৯টি
    মোট প্রার্থী: ১ হাজার ৮৬১ জন
    রাজনৈতিক দলের প্রার্থী: ১ হাজার ৭৩৩ জন
    স্বতন্ত্র প্রার্থী: ১২৮ জন

আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ৬ লাখ ৮ হাজার

  • ভোটকেন্দ্র ও নির্বাচনী এলাকায় সেনাবাহিনী ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স ভোটকেন্দ্রে নিয়োজিত ফোর্স সংখ্যা প্রায় ৬ লাখ ৮ হাজার। এর মধ্যে পুলিশ প্রায় ১ লাখ ২১ হাজার, আনসার প্রায় ৪ লাখ ৪৬ হাজার, গ্রাম পুলিশ প্রায় ৪১ হাজার। সেনাবাহিনী (প্রতি প্লাটুনে ৩০ জন) ৩৮৯টি উপজেলায় ৪১৪ প্লাটুন, নৌবাহিনী ১৮টি উপজেলায় ৪৮ প্লাটুন, কোস্টগার্ড (প্রতি প্লাটুনে ৩০ জন) ১২টি উপজেলায় ৪২ প্লাটুন, বিজিবি (প্রতি প্লাটুনে ৩০ জন) ৯৮৩ প্লাটুন, র‌্যাব (প্রতি প্লাটুনে ৩০ জন) প্রায় ৬০০ প্লাটুন ভোটের মাঠে নিয়োজিত আছে।
  • এ ছাড়া মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্সের সংখ্যা (র‌্যাবসহ) প্রায় ২ হাজার প্লাটুন (প্রায় ৬৫ হাজার)। এ ছাড়া সারা দেশে জেলা ও মেট্রোপলিটনে পুলিশের টহল দল নিয়োজিত রয়েছে।
  • নির্বাচনে নিয়োজিত ১ হাজার ৩২৮ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের মধ্যে আচরণবিধি প্রতিপালনের জন্য ৬৫২ জন, অবশিষ্ট ৬৭৬ জন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মোবাইল বা স্ট্রাইকিং ফোর্সের সঙ্গে নিয়োজিত রয়েছেন। জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ৬৪০ জন, ১২২টি ইলেকট্রোরাল ইনকোয়ারি কমিটিতে ২৪৪ জন।

ভোট গ্রহণ কর্মকর্তা

  • এবার ভোটে রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে ৬৬ জন দায়িত্ব পালন করছেন। এর মধ্যে দুজন বিভাগীয় কমিশনার এবং ৬৪ জন জেলা প্রশাসক।
    নির্বাচনে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ৪০ হাজার ১৮৩ জন, সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ২ লাখ ৭ হাজার ৩১২ জন এবং পোলিং অফিসার ৪ লাখ ১৪ হাজার ৬২৪ জন।

পর্যবেক্ষক

  • নির্বাচনে দেশি ৮১টি পর্যবেক্ষক সংস্থার ২৫ হাজার ৯০০ জন এবং ওআইসি ও কমনওয়েলথ থেকে আমন্ত্রিত ও অন্যান্য বিদেশি পর্যবেক্ষক ৩৮ জন, কূটনৈতিক বা বিদেশি মিশনের কর্মকর্তা ৬৪ জন এবং বাংলাদেশে দূতাবাস বা হাইকমিশন বা বিদেশি সংস্থায় কর্মরত বাংলাদেশি ৬১ জন নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করছেন।
Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: শেখ হাসিনার ঐতিহাসিক বিজয়
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন