শীতে কাবু রোহিঙ্গারা

fec-image

কক্সবাজার প্রতিনিধি:

কয়েক দিন ধরে হাড়কাঁপানো শীতে কাবু হয়ে পড়েছেন বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গারা। শিবিরগুলোতে প্রচণ্ড ঠান্ডায় বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে রোহিঙ্গা বৃদ্ধ, নারী ও শিশুরা। শীতের শুরুতে কিছুটা (ঠান্ডা) কম হলেও গত এক সপ্তাহ ধরে বয়ে যাচ্ছে শৈত্যপ্রবাহ। যার কারণে এনজিও পরিচালিত বিভিন্ন হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও জেলা সদর হাসপাতালে ভিড় বেড়েছে রোহিঙ্গা রোগী।

অপরদিকে ৩০ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে রোহিঙ্গাদের কোনোভাবেই বাহিরে বের হতে দিচ্ছে না প্রশাসন। নজরদারীতে রয়েছে পুরো রোহিঙ্গা এলাকা। মোতায়েন করা হয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ ও গোয়েন্দা।

বিশেষ করে তীব্র শীত পড়েছে পাহাড়ি জঙ্গল অধ্যুষিত অঞ্চলে আশ্রয় নেয়া এসব রোহিঙ্গাদের জীবনযাত্রা কাহিল হয়ে পড়েছে। শিশুরা শীতবস্ত্রের অভাবে ঠান্ডাজনিতে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। উখিয়া ও টেকনাফের নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত শিবির ও শিবিরের বাইরে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা বস্তি ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।

শুধু রোহিঙ্গারা নয় তীব্র হাড়কাঁপানো শীতে পুরো কক্সবাজারের জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। দুর্ভোগ-দুর্দশা বাড়ছে এ জেলার ছিন্নমূল মানুষের। কষ্টে পড়েছে বৃদ্ধ, শিশু, হতদরিদ্র মানুষ ও দিনমজুর।

কুতুপালং শরণার্থী শিবিরের পাহাড়ে আশ্রয় নেয়া আমিনা বেগম জানান, তাদের দুই মাস আগে জন্ম নেয়া শিশুর জন্য কোনো শিশুখাদ্য পাননি। সারাক্ষণ সর্দি-কাশি লেগেই আছে। শীতে গরম কাপড়ের অভাবে শুধু তিনিই নন, তাঁর মতো হাজারো শিশুর একই অবস্থা।

টেকনাফের জাদীমুড়ায় গড়ে উঠেছে নতুন করে রোহিঙ্গাদের ঝুপড়ি ঘর। সেখানে অনেকের ঘরে ছাউনি থাকলেও নিচে কাঁদা মাটিতে বসবাস করছে। এমন এক রোহিঙ্গা নারী তৈয়্যবা বেগমের সাথে কথা হয়। তাঁর বাড়ি মিয়ানমার মংডু এলাকায়।

তিনি জানান, শুরুতে তেমন শীত লাগেনি। কিন্তু গত এক সপ্তাহ ধরে ঠান্ডায় খুব কষ্ট হচ্ছে। কথা বলার সময় কোলে ছিল ৭ মাস বয়সের শিশু আব্দুল্লাহ। তার সর্দি-কাশির প্রভাবে নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। বিরামহীনভাবে কেঁদে চলেছে। সে অসুস্থ হলেও তাকে চিকিৎসা করাতে পারছেন না।

তিনি জানান, এক কাপড়ে তারা মিয়ানমার ছেড়েছেন। গরম কাপড় তো দূরের কথা প্রাণ নিয়ে আসাটাও ছিল দূরহ। এখন শীতে কষ্ট পাচ্ছে সন্তানেরা। গরম কম্বল তাই অত্যন্ত জরুরী।

উখিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সুত্রে জানা গেছে- বানের স্রোতের মত আসা রোহিঙ্গা এখনো ঠাই হচ্ছে না শিবিরগুলোতে। সেখানে আবার এখন শীতের প্রকোপ। হাসপাতালে ভিড় বেড়েছে রোগীর। প্রচণ্ড শীতের কারণে হাসপাতালে বেড়েছে শিশু রোগীর সংখ্যা।

টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডাক্তার টিটু চন্দ্র শীল বলেন, শীতকালে পাহাড় ও জঙ্গলে আশ্রয় নেওয়া বৃদ্ধ, নারী-শিশুরা ঠান্ডাজনিত নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে বেশি। প্রতিদিন ২৫০-৩০০ জন রোহিঙ্গাকে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়। তবে শীতকাল আসার পর থেকে রোগীর সংখ্যাটা বেড়েছে।

কক্সবাজার শরনার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ আবুল কালাম বলেন, ইতিমধ্যে উখিয়া রোহিঙ্গা শিবিরে ভারত থেকে আসা শীতবস্ত্র রোহিঙ্গাদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সব রোহিঙ্গা যেন শীতবস্ত্র পায় সেই চেষ্টা চালানো হচ্ছে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন