শান্তিচুক্তিকে গলা টিপে হত্যা করেছেন শেখ হাসিনা- সন্তু লারমা

আল-আমীন আনাম:

পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি পুরোপুরি বাস্তবায়ন না হওয়ার জন্য চুক্তিকালীন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগকেও দায়ী করেছেন জনসংহতি সমিতির সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা (সন্তু লারমা)। সন্তু লারমার দাবি, কেবল ভূমি কমিশনের বিতর্কিত কিছু ধারার পরিবর্তন ছাড়া এই আট বছরে শেখ হাসিনার সরকার কিছু করেনি। চুক্তিটিকে গলাটিপে হত্যা করার জন্য শেখ হাসিনার সরকার কোন কাজটি করে নাই? এখনও ওখানে সেনা শাসন চলছে। নিরাপত্তাহীন অন্ধকার জীবন সেখানে।

কাপেং ফাউন্ডেশন আয়োজিত ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ২০ বছর এবং নতুন প্রজন্মের ভাবনা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তব্যে সন্তু লারমা এ কথা বলেন।

চুক্তিকারী আওয়ামী লীগ সরকার বলার চেষ্টা করে, তারা যখন বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিচ্ছিলেন, তখন চুক্তিবিরোধী সরকার বিএনপি এবং এরপর ক্ষমতায় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় ছিল। ৭ বছরের ব্যবধানে তারা এগিয়ে নিয়ে পারেনি, বলার পর আওয়ামী লীগকে ওই প্রশ্ন করেন সন্তু লারমা ।

পার্বত্য চুক্তির দুই দশক পূর্তি উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুদিন আগেই বলেছিলেন, চুক্তির অধিকাংশ শর্ত বাস্তবায়িত হয়েছে। বাকিগুলোও বাস্তবায়িত হবে।

চুক্তির আওতায় গঠিত পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান সন্তু লারমার দাবি, কেবল ভূমি কমিশনের বিতর্কিত কিছু ধারার পরিবর্তন ছাড়া এই আট বছরে শেখ হাসিনার সরকার কিছু করেনি। চুক্তিটিকে গলাটিপে হত্যা করার জন্য শেখ হাসিনার সরকার কোন কাজটি করে নাই? এখনও ওখানে সেনা শাসন চলছে। নিরাপত্তাহীন অন্ধকার জীবন সেখানে।

শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সে যে বক্তব্য দিয়েছেন, তার সঙ্গে বাস্তবতার মিল নেই। তাকে অনুরোধ করি, আত্মজিজ্ঞাসা করুন- আপনি সততার আশ্রয় নিয়ে সেটা বলেছেন।

সন্তু লারমা বলেন, চুক্তির বলে নিজে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান হলেও তার কোনো ক্ষমতা নেই। আমি তো ঠুঁটো জগন্নাথ। যদিও আঞ্চলিক পরিষদ পার্বত্য চট্টগ্রামের সর্বোচ্চ প্রতিষ্ঠান। পার্বত্য চট্টগ্রামের তত্ত্বাবধায়ক, আইনশৃঙ্খলা ও প্রশাসন সবক্ষেত্রে। কিন্তু আমি সন্তু লারমা চেয়ারম্যান হলেও পুলিশের কনস্টেবল ও সেনাবাহিনীর সিপাহীর চেয়ে কম ক্ষমতাবান।

সন্তু লারমা বলেন, সরকার, শাসক গোষ্ঠী, নীতি-নির্ধারকরা যেসব পদক্ষেপ নিয়েছেন, তাতে পরিস্থিতি জটিল থেকে জটিলতর পর্যায়ে চলে গেছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিস্থিতি অত্যন্ত নাজুক ও অস্থিতিশীল। পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে, এখন পেছনে ফেরার সুযোগ নেই। যদি কিছু করতে হয়, সামনের দিকেই এগিয়ে যেতে হবে।

আমরা এমন পর্যায়ে এসেছি, হয়ত অন্য দেশে চলে যেতে হবে, না হয় এখানে থেকে অস্তিত্ব বিলীন হতে হবে। কিন্তু জুম্ম জনগণ সেটা হতে দেবে না। অন্ধকার, অনিশ্চিত ভবিষ্যত ও দমন-পীড়ন বন্ধের জন্য লড়াই সংগ্রাম করে যাবে।

প্রগতিশীল রাজনৈতিক দলগুলোর ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন জনসংহতি সমিতির সভাপতি সন্তু লারমা।

বাংলাদেশের কোনো রাজনৈতিক দল, কেউ তো সরকারকে চাপ সৃষ্টি করার জন্য, পাহাড়িদের মুক্তির জন্য কোনো কর্মসূচি নিয়ে এগিয়ে আসেন না। যখন দেখা হয় অনেক কথাই বলি, আলোচনায় অংশ নেন। কিন্তু দলগতভাবে তো কেউ এগিয়ে আসেন না।

আলোচনা সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং।

-আমাদের সময়

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন