লিডারশীপ কলেজ মহেশখালী: বিলাসবহুল  ভবন আছে শিক্ষা কার্যক্রম নেই


মহেশখালী প্রতিনিধি:

কক্সবাজার জেলার সাগরকন্যা দ্বীপ উপজেলা মহেশখালীর প্রাণকেন্দ্র পৌর এলাকায় বিগত ২০০৩ সালে মুসলিম এইড অষ্ট্রেলিয়া, ইউকে এবং সৌদি প্রিন্স বিন তালালের অর্থায়নে প্রায় ২.৫ একর জমির উপর লিডারশিপ ইউনিভার্সিটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপিত হয় ৷

অষ্ট্রেলিয়ান আদলে আধুনিক ভবন নির্মাণ, ব্রন্ডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগ সংবলিত আধুনিক মানের কম্পিউটার ল্যাব, নিজস্ব ক্যাম্পাস, ফ্রি ওয়াইফাই জোন ও আবাসিক ছাত্রছাত্রী এবং শিক্ষকদের হোস্টেল সুবিধা নিয়ে ২০০৬ সালে এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে ইউনিভার্সিটির যাত্রা শুরু হয় ৷

তৎকালীন অষ্ট্রেলিয়ার হাই কমিশনার মিঃ ডগলেস ফসকেট এবং চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মুখলেছুর রহমান এই প্রতিষ্ঠানের শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করেন ৷ বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো সরাসরি অষ্ট্রেলিয়ার তত্বাবধানে তাদের নিজস্ব স্কলারশীপ প্রোগ্রাম (TAFE)  চালু করে ৷

প্রতিষ্ঠালগ্নের প্রিন্সিপাল অষ্ট্রেলিয়ান নাগরিক মিসেস বেলেন্ডা চাইন উক্ত শিক্ষাক্রমের (TAFE) সূচনা করেন ৷
সরাসরি অষ্ট্রেলিয়ার তত্বাবধানে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুমে শিক্ষা কার্যক্রম চালু হওয়ায় সারা দেশে কৌতুহল সৃষ্টি হয় এ প্রতিষ্ঠান নিয়ে ৷

ফলে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে প্রায় তিন শতাধিক শিক্ষার্থী কলেজে ভর্তি হয় ৷ ২০০৬-১২ সাল পর্যন্ত উক্ত কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম চলমান ছিল ৷

চলমান শিক্ষা কার্যক্রমের আওতায় ২০০৯ ও ২০১১ সালে দুই ব্যাচ করে ১০জন শিক্ষার্থী মেধা তালিকায় উত্তীর্ণ হয়ে স্কলারশিপ নিয়ে অষ্ট্রেলিয়ায় পাড়ি জমান ৷ এরপরে হঠাৎ করে ২০১২ সালের মাঝামাঝি সময়ে অষ্ট্রেলিয়ান কোর্স (TAFE) বন্ধ হয়ে যায় ৷ পরে কারিগরি  শিক্ষা কোর্স চালু করা হয় ৷ পরবর্তীতে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের অনাগ্রহের কারণে উক্ত কারগরি শিক্ষা কার্যক্রম ২০১৪ সালের পরে বন্ধ হয়ে যায় ৷

অনুসন্ধানে জানা যায়, উক্ত প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান মহেশখালীর বাসিন্দা ও অষ্ট্রেলিয়ান নাগরিক ড: রশিদ রাশেদ বিভিন্ন দাতা সংস্থার সাথে যোগাযোগ করে উক্ত কলেজ মহেশখালীর পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠির শিক্ষা কার্যক্রম এগিয়ে নিতে চালু করেন ৷

শুরু হতেই ওনার একগুঁয়েমিতা, প্রশাসনের সাথে বৈরি সম্পর্ক এবং অষ্ট্রেলিয়ার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে সুসম্পর্ক না রাখার কারনে শিক্ষা কার্যক্রম (TAFE) বন্ধ হয়ে যায় ৷

শিক্ষা কার্যক্রম কেন বন্ধ হলো এ বিষয়ে জানতে চাইলে উক্ত প্রতিষ্ঠানের প্রশাসনিক কর্মকর্তা(নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক)  জানান, শর্ত অনুযায়ী যে সকল শিক্ষার্থী স্কলারশিপ নিয়ে অষ্ট্রেলিয়ায় পড়তে যাবে তারা পাঁচ বছর পরে দেশে ফিরে আসবে ৷ কিন্তু তারা শর্ত ভংগ করে অষ্ট্রেলিয়ায় আত্মগোপন করে ৷

তাদের বিরুদ্ধে অষ্ট্রেলিয়ায় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করে প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান ড. রশিদকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন ৷ আইনি জটিলতা ও অষ্ট্রেলিয়ার সাথে সমন্বয়হীনতার কারণে অষ্ট্রেলিয়ার কোর্স (TAFE) বন্ধ হয়ে যায়, পাশাপাশি দাতা সংস্থার আর্থিক সহযোগিতাও স্থগিত করা হয় ৷

স্থানীয়রা বলেন, এক শ্রেণীর কুচক্রী মহল ঈর্ষান্বিত হয়ে উক্ত প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রপাগন্ডায় লিপ্ত থাকে ৷  যার দরুন, উক্ত প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে জঙ্গি কার্যক্রম পরিচালনা ও অর্থায়নের অভিযোগ তুলে প্রশাসনকে অবহিত করে ৷

সচেতন মহলের অভিমত, ড: রশিদের বাংলাদেশ জামাতে ইসলামীর সাথে সুসম্পর্ক থাকায় সরকার দলীয় উচ্চ পর্যায়ের কর্তারা উক্ত প্রতিষ্ঠানকে সুনজরে দেখেনি ৷

ফলে আধুনিক মানের এই ব্যয়বহল প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম স্বল্প সময়ে বন্ধ হয়ে যায় ৷ পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যানের একগুয়েমিতা ও স্বেচ্ছাচারিতার কারণেও বন্ধ হয় যায় বলে অনেকে অভিমত ব্যক্ত করেন ৷

বর্তমানে উক্ত প্রতিষ্ঠানের পাঁচতলা বিশিষ্ট ৩টি ভবনের মাঝে একটিতে গত ২০১৩ সালে লিডারশীপ হাইস্কুল নামে একটি মাধ্যমিক স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয় ৷ বর্তমান সময়ে এসেও  প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান প্রশাসনের সাথে সুসম্পর্ক না রাখায় মাধ্যমিক স্কুলটি সরকারিভাবে পাঠদানের অনুমতি পায়নি ৷

স্থানিয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন গুলশান সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক আ ন ম হাসান জানান, উক্ত প্রতিষ্ঠান
চালু হওয়ায় অনেকেই স্বপ্নের জাল বুনেছিল  অষ্ট্রেলিয়ায় পড়তে যাবে বলে ৷ কারণ,উক্ত প্রতিষ্ঠানের  শ্লোগান ছিল গরীব অথচ যারা মেধাবী তাদের স্বপ্ন পূরণ করার জন্য উক্ত প্রতিষ্ঠানের যাত্রা ৷ কিন্তু কলেজের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়ায় শত গরীব মেধাবী শিক্ষার্থীর স্বপ্নে আঘাত হেনেছে ৷

এবিষয়ে প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান ড. রশিদ অষ্ট্রেলিয়ায় থাকার কারনে তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি ৷

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন