parbattanews

লামায় কথিত দুই ত্রিপুরা কিশোরী ধর্ষণের ঘটনায় আইনশৃংঙ্খলা বাহিনীকে বিতর্কিত করার ষড়যন্ত্র হচ্ছে

 

লামা প্রতিনিধি
বান্দরবান জেলার লামা উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের রামগতি ত্রিপুরা পাড়ার কথিত দুই ত্রিপুরা কিশোরী ধর্ষণের ঘটনায় আইনশৃংঙ্খলা বাহিনীকে বিতর্কিত ও বিব্রত করতে ঢাকাস্থ কয়েকটি তথাকথিত মানবাধিকার সংগঠন কাজ করছে বলে অভিযোগ করেছে পার্বত্য নাগরিক পরিষদ নেতৃবৃন্দ। সংগঠনটির বান্দরবান জেলা শাখার সভাপতি আতিকুর রহমান অভিযোগ করে জানান, কিছু বাম বুদ্ধিজীবী বাঙ্গালী বিদ্বেষী চক্র পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ষড়যন্ত্র করে আসছে। তারই ধারাবাহিকতায় প্রশাসনকে না জানিয়ে তারা লামা সফর করে কিছু চিহ্নিত ব্যক্তির সাথে একাধিক গোপন বৈঠক করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বিতর্কিত করতে ষড়যন্ত্র করছে।

জানা যায়, গত ৫ সেপ্টেম্বর বুধবার বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘের মো. শরীফ চেীহান, অ্যাসোসিয়েড কোর্ডিনেটর (আইইডি)’র পক্ষে মো. তারিক হোসেন, মানবাধিকারকর্মী চঞ্চনা চাকমা, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন প্রতিনিধি নিখিল চাকমা, বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড এন্ড সার্ভিস ট্রাস্টের অ্যাডভোকেট অটুট, আইন ও শালিশ কেন্দের কর্মী মো. হাসিবুর রহমান স্থানীয় প্রশাসনকে না জানিয়ে লামায় আসেন। লামায় তারা দিনভর নির্ধারিত কিছু ব্যক্তির সাথে একান্ত বৈঠকেও মিলিত হন। পরে তারা উপজেলা চেয়ারম্যান থোয়াইনু অং চৌধুরী, উপজেলা নির্বাহী অফিসার নূর-এ-জান্নাত রুমি ও অফিসার ইনচার্জ অপ্পেলা রাজু নাহার সাথেও দপ্তরে গিয়ে দেখা করেছেন।

এ প্রসঙ্গে ত্রিপুরা কল্যাণ সংসদ লামা উপজেলা শাখার সভাপতি ইলিশা ত্রিপুরা জানান, ঢাকা থেকে যারা এসেছেন তারা আমাদেরকে জানিয়ে আসেননি। তবে ত্রিপুরা কল্যাণ সংসদের পক্ষ থেকে আমরা কয়েকজন তাদের সাথে দেখা করে কথা বলেছি। আমরা দুই ত্রিপুরা কিশোরীর ধর্ষণ মামলার আসামীদের গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছি।

ঢাকা থেকে আগত প্রতিনিধি দলে থাকা অ্যাসোসিয়েড কোর্ডিনেটর মো. তারিক হোসেন জানান, আমরা লামায় গিয়েছি। এই বিষয়ে বিস্তারিত একটি ব্রিফিং আগামী ১১ সেপ্টেম্বর ঢাকা রিপোর্টাস ইউনিটে সকাল ১০টায় দেওয়া হবে।

পার্বত্য নাগরিক পরিষদ বান্দরবান পার্বত্য জেলা শাখার সভাপতি মো. আতিকুর রহমান জানান, কিছু বাম বুদ্ধিজীবী নামধারী বাঙ্গালী বিদ্ধেষী চক্র পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে ষড়যন্ত্র করে আসছে। গত ৫ সেপ্টেম্বর লামায় বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের নাম দিয়ে যারা এসেছে তারা বরাবরই পার্বত্য চট্টগ্রামের আইনশৃংঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। ফাঁসিয়াখালীর রামগতি ত্রিপুরা পাড়ায় কথিত দুই কিশোরী ধর্ষণের ঘটনায় লামা থানায় নিয়মিত মামলা হয়েছে। পুলিশ নিয়ম মোতাবেক মামলার তদন্ত করছে। তথাপি কথিত বুদ্ধিজীবী ও মানবাধিকারকর্মী নামধারী এই চক্রটি এটাকে ইস্যু বানিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে নিয়োজিত আইনশৃংঙ্খলা বাহিনীকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করছে। বাঙ্গালী কোন নারী ধর্ষণের শিকার হলে এসকল মানবাধিকারকর্মী নামধারী ব্যক্তিগণ কখনো পার্বত্য চট্টগ্রামে তাদের সহায়তায় এগিয়ে আসেনি। এ সকল তথাকথিত মানবাধিকারকর্মী ব্যক্তি পার্বত্য চট্টগ্রামের বাঙ্গালী ও আইনশৃংঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে ঢাকায় বসে একের পর এক ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। পার্বত্য নাগরিক পরিষদের পক্ষ থেকে মানবাধিকার সংগঠনের নামে যারা লামায় এসেছে তাদের হীন উদ্দেশ্যমূলক কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। ভবিষ্যতে যাতে করে এ সকল ব্যক্তি লামাসহ পার্বত্য চট্টগ্রামের কোথাও আসতে না পারে সে ব্যাপারে স্থানীয় অধিবাসীদের সজাগ থাকার আহ্বান জানাচ্ছি।

তাদের আগমনের বিষয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান থোয়াইনু অং চৌধুরী জানান, এরা আমার দপ্তরে এসে আমার সাথে সাক্ষাত করেছে। এ সময় তারা আমাকে জিজ্ঞাসা করেন, দুই ত্রিপুরা কিশোরী ধর্ষণের বিষয়ে আমি কিছু জানি কিনা? আমি তাদের (দুই কিশোরীকে) সাহায্য করতে সরেজমিন গিয়েছি কিনা? আমি তাদের জবাবে জানাই, ত্রিপুরা কিশোরীদের পরিবারের পক্ষ থেকে আমার কাছে কোন সহায়তা চাওয়া হয়নি। তাই আমি তাদের সেখানে যায়নি। ঢাকা থেকে আগত দলটির সদস্যরা তখন আমাকে বলে, আপনার সেখানে যাওয়া উচিৎ ছিল।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার নূর-এ-জান্নাত রুমি জানান, ঢাকা থেকে কয়েকটি মানবাধিকার সংগঠনের ব্যানারে একটি টিম আমার দপ্তরে আসে। তাদের আগমনের বিষয়টি আমি পূর্বে জানতাম না। প্রশাসন বা আইনশৃংঙ্খলা বাহিনীর নিকট তারা লামায় আগমনের তথ্য পূর্বে দেয়নি।

লামা থানার অফিসার ইনচার্জ অপ্পেলা রাজু নাহা জানান, দুই ত্রিপুরা কিশোরী ধর্ষণের ঘটনার পর লামা থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ৪ জনকে আসামী করে মামলা রুজু করা হয়েছে। ত্রিপুরা কিশোরীদের পরিবার পক্ষের দাবি আসামীদের মধ্যে ৩ জন বিজিবি সদস্য ও ১ জন ত্রিপুরা নারী। ৪নং আসামী জনেরুং ত্রিপুরাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। দুই কিশোরীর ডাক্তারী পরীক্ষা সম্পন্ন করা হয়েছে এবং তাদের ২২ ধারায় জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়েছে। অন্য ৩ আসামীকে গ্রেফতার করার জন্য অভিযান অব্যাহত আছে। ঢাকা থেকে কয়েকটি মানবাধিকার সংগঠনের নামে একটি টিম থানায় এসে এ বিষয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন করেছে। তবে তারা আগমনের বিষয়টি পূর্বে আমাদেরকে অবহিত করেনি।

 

Exit mobile version