রোহিঙ্গা ইস্যূতে মিয়ানমারের ভুমিকা অগ্রহণযোগ্য: অ্যান্তোনি গুতেরেস

উখিয়া প্রতিনিধি:

রোহিঙ্গা ইস্যূ নিয়ে মিয়ানমারের ভুমিকা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। একইসঙ্গে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ভুমিকাও যথেষ্ট নয় বলে মন্তব্য করেছেন জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনি গুতেরেস।

তিনি বলেন, রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে আন্তর্জাতিক ফোরামকে আরও সোচ্চার হতে হবে। রোহিঙ্গারা যাতে স্বদেশে নাগরিক অধিকার নিয়ে সম্মানের সংগে ফিরে যেতে পারে সে লক্ষ্যে সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে।

সোমবার (২ জুলাই) কক্সবাজারের উখিয়ার বালুখালী ও কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনকালে এসব কথা বলেন অ্যান্তোনি গুতেরেস।

রাখাইনে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতনের মুখে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গারা নাগরিক অধিকার ছাড়া স্বদেশে ফিরতে রাজি নয়। জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনি গুতেরেস ও বিশ্ব ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিমের নেতৃত্বে আসা শীর্ষ টিমকে এসব কথা জানিয়েছেন উখিয়া-টেকনাফে আশ্রয় নেওয়া নির্যাতিত রোহিঙ্গারা।

সোমবার বেলা ১১টায় কক্সবাজারের উখিয়ার বালুখালী রোহিঙ্গার ট্রানজিট পয়েন্ট হিসেবে পরিচিত টিভি রিলে কেন্দ্র এলাকায় পৌঁছেন জাতিসংঘের মহাসচিব ও বিশ্ব ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট। এ সময় বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের জীবনমান পরিদর্শন করেন এবং তাদের দু:খ-দুর্দশার কথা শোনেন এই দুই অতিথি।

রাখাইনে সংঘটিত নারকীয় ঘটনার বিষয়ে আন্তর্জাতিক শীর্ষ দু’সংস্থা’র প্রধানের কাছে তুলে ধরেন আশ্রিত রোহিঙ্গারা। আন্তর্জাতিক সংস্থা ইউএনএইচসিআর’র সঙ্গে কর্মরত ও রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলার সময় কক্ষে অবস্থান করা রোহিঙ্গা আলী জোহার এসব কথা জানান।

আলী জোহার জানান, রোহিঙ্গারা বলেছেন নাগরিকত্ব, স্বাধীনভাবে চলাফেরা ও কর্মের নিশ্চয়তাসহ মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত তারা মিয়ানমার ফিরতে চান না।

উখিয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার চাইলাউ মারমা জানান, জাতিসংঘ মহাসচিব ও বিশ্ব ব্যাংক প্রেসিডেন্টের নেতৃত্বে আসা টিম ইউএনএইচসিআর নেতৃবৃন্দ বালুখালী ট্রানজিট ক্যাম্প, কুতুপালং রেজিষ্টার্ড ক্যাম্প এবং মহিলাদের আলাদা জায়গা পরিদর্শন করেন। এসময় তারা রোহিঙ্গাদের সঙ্গে ঘটে যাওয়া চরম দুর্দশার কথা শুনেন।

তিনি আরও জানান, কথা বলা শেষে অ্যান্তোনিও এবং কিমরা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সহযোগিতা দেয়া বিভিন্ন আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার চিকিৎসা সেবা কেন্দ্র ও বিভিন্ন এনজিও’র শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঘুরে দেখেন। আজ (সোমবার) বিকেলে তাঁদের ঢাকায় ফিরে যাওয়ার কথা রয়েছে।

এর আগে সোমবার সকালে বাংলাদেশ বিমানের একটি বিশেষ ফ্লাইটে তাঁরা কক্সবাজার বিমানবন্দরে পৌঁছেন। তাঁদের সঙ্গে রয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, আন্তর্জাতিক রেড ক্রস সোসাইটির প্রেডিডেন্ট, ত্রাণ ও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. আবুল কালাম, জেলা প্রশাসক কামাল হোসেন, পুলিশ সুপার ড. একেএম ইকবাল হোসেন, জাতিসংঘ শরণার্থী বিষয়ক বৈশ্বিক সংস্থা ইউএনএইচসিআর’র প্রধান ফিলিপ্পো গ্রান্ডি এবং জাতিসংঘের জনসংখ্যা তহবিল বিষয়ক নির্বাহী পরিচালক ড. নাতালিয়া খানেমসহ বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তারা।

সূত্র জানায়, এর আগে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর’র প্রধান থাকাকালীন ২০০৮ সালের ২৭ মে গুতেরেস কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেছিলেন। জাতিসংঘ মহাসচিবের দায়িত্ব নেয়ার পর বাংলাদেশে এটাই তার প্রথম সফর। তবে বিশ্ব ব্যাংক প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিম দুই বছর আগেই একবার বাংলাদেশ ঘুরে গেছেন। এর আগে দুদিনের সফরে শনিবার দিবাগত রাত ২টার দিকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন জাতিসংঘ মহাসচিব। আর তিনদিনের সফরে শনিবার বিকেলে ঢাকায় আসেন বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিম।

উল্লেখ্য, বিগত কয়েক দশকে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর দমন-পীড়নের মুখে পালিয়ে ৫ লাখের মতো রোহিঙ্গা মুসলিম বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। আর গত বছরের ২৫ আগস্ট এমনই এক অভিযানের মুখে রাখাইন থেকে নতুন করে ৭ লাখের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। এখন প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গা উখিয়া-টেকনাফে অবস্থান করছে। আর জাতিসংঘ মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর ওই অভিযানকে শুরু থেকেই ‘জাতিগত নির্মূল অভিযান’ বলে আখ্যায়িত করে আসছে। রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমার সরকার গত বছরের ২৩ নভেম্বর বাংলাদেশের সঙ্গে একটি চুক্তি সই করলেও তা বাস্তবায়নে গড়িমসি করছে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন