রোহিঙ্গাদের নিয়ে মঙ্গলবার নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক

পার্বত্যনিউজ ডেস্ক:

যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্সসহ আটটি সদস্যদেশের ডাকে আগামী মঙ্গলবার রোহিঙ্গা পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠকে বসছে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ। রোহিঙ্গাদের সর্বশেষ পরিস্থিতি কী, সেটা এদিন নিরাপত্তা পরিষদের কাছে তুলে ধরার কথা রয়েছে জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনার ফিলিপ্পো গ্রান্ডির।

নিউইয়র্কের একটি কূটনৈতিক সূত্র গতকাল শনিবার প্রথম আলোকে জানায়, নিরাপত্তা পরিষদের তিন স্থায়ী সদস্য যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ছাড়াও অস্থায়ী পাঁচ সদস্যদেশ সুইডেন, পোল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস, কাজাখস্তান ও গিনি পরিষদকে বৈঠক ডাকার অনুরোধ জানায়। নিরাপত্তা পরিষদ মিয়ানমার নিয়ে বিবৃতি দেওয়ার প্রায় তিন মাসের মাথায় ওই বৈঠক ডাকার অনুরোধ এল। মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর লাগাম টেনে ধরে রোহিঙ্গাদের তাদের আবাসে ফেরার পথ সুগম করার আহ্বান জানিয়ে একটি বিবৃতি দিয়েছিল জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ।

নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকটি পূর্বনির্ধারিত হলেও রয়টার্সের অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ‘ম্যাসাকার ইন মিয়ানমার’ প্রকাশের ফলে জাতি হত্যার নতুন অকাট্য তথ্যপ্রমাণ নিয়ে আলোচনা হবে বলে মনে করা হচ্ছে।

এদিকে জাতিসংঘ গত শুক্রবার রাতে জানিয়েছে, মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গাদের নৃশংসভাবে হত্যার পর কবরে পুঁতে ফেলার বিষয়ে রয়টার্সের প্রতিবেদন প্রকাশের পর সেখানে সহিংসতার বিষয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্তের প্রয়োজনীয়তা আবার জোরালো হয়েছে।

মিয়ানমারের সেনাসদস্যদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট নিষেধাজ্ঞার প্রস্তাব দিয়ে মার্কিন সিনেটের বৈদেশিক কমিটিতে রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট-দলীয় সিনেট সদস্যের আনা একটি বিল ভোটাভুটির জন্য উপস্থাপিত হচ্ছে। ভোটাভুটিতে পাস হলে এটি আইনে পরিণত হবে।

নিউইয়র্কে জাতিসংঘ মহাসচিবের উপ-মুখপাত্র ফারহান হক রয়টার্সের প্রতিবেদন সম্পর্কে সাংবাদিকদের বলেন, ‘সাম্প্রতিক প্রতিবেদনের বিষয়টি আমরা জানি এবং এতে বিস্তারিতভাবে যা এসেছে তা অত্যন্ত ভয়ংকর। এটি আবারও রাখাইন রাজ্যের সব ধরনের সহিংসতা ও সেখানকার সব সম্প্রদায়ের বিষয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ তদন্তের গুরুত্বকে সামনে এনেছে।’

মার্কিন সিনেটের বৈদেশিক সম্পর্কবিষয়ক কমিটি মিয়ানমারের বিরুদ্ধে সীমিত আকারে নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রস্তাব নিয়ে ‘দ্য বার্মা হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড ফ্রিডম অ্যাক্ট’ নামের একটি বিল অনুমোদন করেছে। এখন সেটি ভোটাভুটির জন্য সিনেটে উপস্থাপন করা হবে। মার্কিন সিনেটে রিপাবলিকান-দলীয় সিনেটের জন ম্যাককেইন ও ডেমোক্র্যাট-দলীয় সিনেটর বেন কার্ডিনের প্রস্তাবটি বৈদেশিক সম্পর্কবিষয়ক কমিটিতে শুক্রবার পাস হয়েছে।

প্রস্তাবটিতে রাখাইন রাজ্যে মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে অভিযুক্ত জ্যেষ্ঠ সেনা কর্মকর্তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া এতে বলা হয়েছে, সেনা কর্মকর্তারা সহিংসতা থামিয়েছেন—এটি মার্কিন পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা দপ্তর নিশ্চিত না করা পর্যন্ত মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সঙ্গে নির্দিষ্ট কিছু সামরিক সহযোগিতা বন্ধ থাকবে।

এদিকে মিয়ানমারের রোমান ক্যাথলিকদের কার্ডিনাল চার্লস বো মনে করেন, বাংলাদেশে পালিয়ে যাওয়া রোহিঙ্গারা আর রাখাইনে না-ও ফিরতে পারে। রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে জাতি নির্মূলের উপাদানের কারণে যে তারা পালিয়েছে তা এখন দৃশ্যমান। ফেরাতে হলে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা প্রয়োজন। মানব পাচারবিষয়ক এক সম্মেলনে অংশ নিতে ভ্যাটিকানে গিয়ে চার্লস বো এপিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ মন্তব্য করেন।

সূত্র: প্রথম আলো

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন