রোহিঙ্গাদের তাড়িয়ে বাংলাদেশের উপজাতীয়দের মিয়ানমারে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে লোভ দেখিয়ে


পার্বত্যনিউজ ডেস্ক:

মিয়ানমারে জাতিগত নিধনের শিকার হয়ে যখন বাংলাদেশে ঢুকছে রোহিঙ্গা মুসলিমরা তখন বিপরীত ঘটনাও ঘটছে। বান্দরবানসহ পার্বত্য অঞ্চলের বিভিন্ন দুর্গম এলাকা থেকে খ্রিস্টান-বৌদ্ধসহ বিভিন্ন ধর্মের অনুসারীদের রাখাইনে নিয়ে যাচ্ছে মিয়ানমারে দালাল চক্র। নানা চেষ্টার পরও এই মানবপাচার বন্ধ করতে পারছে না স্থানীয় প্রশাসন।

সরেজমিন গিয়ে ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেছে। আলী কদমের দুর্গম চেঙ্গী আগাপাড়ার পথে পাওয়া গেছে মারমা সম্প্রদায়ের বেশকিছু মানুষকে। রেমাক্রী ইউনিয়নের উসাথোয়াই পাড়া থেকে পাহাড়ি পথ পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে ছুটছে তারা। চেঙ্গী আগাপাড়া থেকে তাদের যাওয়ার কথা মিয়ানমারের সীমান্ত ঘেঁষা শহর মংডুতে।

স্থানীয়রা বলছেন, চলতি মাসে কেবল উসাথোয়াই পাড়া থেকে নয়টি পরিবার পাড়ি জমিয়েছে মিয়ানমারে। আর গেল কয়েক বছরে বান্দরবানের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর শতাধিক পরিবারকে রাখাইনসহ বিভিন্ন রাজ্যে নিয়ে গেছে দালাল চক্র। নানা প্রলোভনে তাদের ফাঁদে ফেলছে প্রতারকরা।

ইউনিয়ন পর্যায়ে জনপ্রতিনিধি, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও এলাকার পাড়াকার্বারী প্রধানদের তথ্য মতে, এ পর্যন্ত  ৩১ মারমা ও ম্রো পরিবারকে বাংলাদেশ ছেড়ে মায়নমারের রাখাইনে চলে যাওয়ার সত্যতা পাওয়া গেছে ।  চলে যাওয়া ব্যাক্তিদের মধ্যে একজন এলাকার পাড়া কারবারি রয়েছে ।

থানচি উপজেলা সদর থেকে ৮৫ কিলোমিটার রেমাক্রি ইউনিয়নের পাশে সাঙ্গু সংরক্ষিত বনাঞ্চলের লিক্রি এলাকায় থোয়াইচিং পাড়ায় গিয়ে সরজমিনে দেখা যায়, অন্যদের চলে যাওয়া দেখে আরো দুইটি  পরিবার দেশ ছেড়ে যাওয়ার  প্রস্তুতি হিসাবে মালামাল গোছাচ্ছে।  তাদরে মধ্যে পাড়ার কার্বারি থোয়াইচিং মারমাও ছিলেন ।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ ছেড়ে মিয়ানমারের রাখাইনে গেলে মিয়ানমার সরকার তাদের ঘরবাড়ি ও জায়গা জমি দেবে, পাঁচ বছরের খাবার বিনাশ্রমে দেবে। কে দেবে আর কে বলেছে- এই কথা জানতে চাইলে পাড়া কার্বারি বলেন, এটা তিনি বিভিন্ন লোকের কাছে শুনেছেন, তাই তারা বাংলাদেশ ছেড়ে মিয়ানমারের রাখাইনে চলে যাচ্ছেন ।

এছাড়া তিনি আরো বলেন, পাহাড়ী অঞ্চলে জুম চাষ করা খুব কষ্টকর। তবুও জুম চাষ করে তারা যা পান তার অর্ধেক দিয়ে দিতে হয় দাদনদারদের, তখন আর নিজের বলে কিছু থাকে না। পরিবার নিয়ে বেঁচে থাকাটা খুবই কষ্টকর হয়ে যায়, তাই তারা নিরুপায় হয়ে দেশ ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ।

থানচি রেমাক্রী উপজেলার ৯ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য বাওয়াই মারমা বলেন, থোইচিং পাড়া থেকে নয় পরিবার, উসাথোয়াই  পাড়া থেকে সাত পরিবার, থাইংকোয়াই পাড়া থেকে ছয় পরিবার, বড় মদক পাড়া থেকে দুই  পরিবার, পুশৈথোয়াই পাড়া থেকে দুই  পরিবার  কংওয়োপুু হ্লাফং পাড়ার পাঁচ  পরিবার-  মোট ৩১ পরিবার বাংলাদেশে ছেড়ে মায়ানমারের রাখাইনে পাড়ি জমিয়েছে ।

তারা পায়ে হেঁটে থানচি এবং আলীকমের মধ্যবর্তী রাংরাং পাহাড়ের দিকে চলে যায়। এই পাহাড়ি পথ দিয়ে পায়ে হেঁটে রাখাইনে যেতে তাদের দুই দিন লাগবে।  সাঙ্গু সংরক্ষিত বনাঞ্চল এলাকা হওয়ায় লিক্রি এলাকা হয়ে নৌকা ও পায়ে হেঁটে তাদের সেখানে পৌঁছাতে হবে।

জানতে চাইলে মিয়ানমারের পথে পা বাড়ানো রাখাইনদের কয়েকজন জানান, তারা আমাদের গরু-ছাগল দিবে, ঘরবাড়ি করে দিবে, ৭ বছর খাওয়া দেবে। এই নিশ্চয়তা পেয়ে আমরা সেখানে চলে যাচ্ছি।

চেঙ্গী আগাপাড়া ছাড়াও সীমান্তের অরক্ষিত বিভিন্ন পয়েন্টে দিয়ে কমবেশি প্রতিদিনই মিয়ানমারে নেয়া হচ্ছে বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের। নানা উদ্যোগ নিয়েও বন্ধ করা যাচ্ছে না এই মানবপাচার।

রেমাক্রী ইউপি চেয়ারম্যান মুই সুই থুই বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ থেকে আমরা নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা দিয়ে যাচ্ছি তাদের। খাদ্য কর্মসূটি, সোলার সিস্টেম- এরকম অনেক সুবিধা তাদের দেয়া হচ্ছে।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানালেন, মিয়ামানমারে রোহিঙ্গাদের উপর জাতিগত নিধন শুরুর পর সীমান্তে মানবপাচার উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে।

সূত্র- যমুনা নিউজ, এসএনএস২৪

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন