রোহিঙ্গাদের জন্মনিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা জরুরী হয়ে পড়েছে: বললেন বিশেষজ্ঞরা
কক্সবাজার প্রতিনিধি:
মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা নারীদের সন্তানের সংখ্যা বেশি। একেক জন রোহিঙ্গা মায়ের কাছে ৫-৬টি এমনকি ৮-১০টি পর্যন্ত সন্তান রয়েছে। ফলে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের মাঝে শিশুর সংখ্যা বেশি দেখা যায়। এছাড়া অনেক রোহিঙ্গা নারী গর্ভবতী অবস্থায় রয়েছে।
সিভিল সার্জন ও পরিবার পরিকল্পনার হিসাব অনুযায়ী, গত ২৫ আগস্ট থেকে এই পর্যন্ত মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা শিশু জন্ম হয়েছে ৭ শতাধিক। আর প্রাথমিক হিসেবে গর্ভবতী রোহিঙ্গা নারী রয়েছে ২১ হাজার ৪৭৬জন।
রোহিঙ্গাদের মাঝে জন্মনিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা না থাকার এই সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। আর এই সমস্যা যদি বাংলাদেশে অস্থায়ীভাবে অবস্থান নেওয়া রোহিঙ্গাদের মাঝে অব্যাহত থাকে। তা বড় ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হবে বলে জানান বিশেষজ্ঞরা।
এদিকে পরিবার পরিকল্পনার পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, অস্থায়ীভাবে অবস্থান করা রোহিঙ্গাদের জন্ম নিয়ন্ত্রণে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। জন্মনিয়ন্ত্রনে ইনজেকশন, খাবার বড়ি এবং কনডম দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ক্যাম্পে চালানো হচ্ছে জন্মনিয়ন্ত্রণের প্রচারনা।
গতকাল পর্যন্ত ১১ শত ৮০জন নারীকে ৩ মাস মেয়াদের জন্ম নিয়ন্ত্রন ইনজেকশন দেওয়া হয়েছে। জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি খাওয়ানো হয়েছে ১ হাজারেরও বেশি নারীকে। আর ৯ শত এর অধিক কনডম দেওয়া হয়েছে পুরুষদের।
প্রাপ্ত খবরে জানা যায়, মিয়ানমারে থাকা কালিন এসব রোহিঙ্গা নারীদের কাছে জন্মনিয়ন্ত্রণের খবর পৌঁছায়নি। যার ফলে তারা জন্মনিয়ন্ত্রণ সর্ম্পকে অবগত নন।
এ ব্যাপারে বিশেষজ্ঞরা আরো বলছেন, সেটি মিয়ানমারের সমস্যা বা সেদেশের চিত্র। কিন্তু জনসংখ্যা বহুল ও উন্নয়নশীল দেশের জন্য এই চর্চা কোনভাবে কাম্য নয়। তাই অস্থায়ীভাবে অবস্থান করা রোহিঙ্গাদের থাকা, খাওয়া, চিকিৎসা সেবাসহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধার পাশাপাশি জন্মনিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করতে হবে। আর এটি জরুরী হয়ে পড়েছে।
এ ব্যাপারে এডভোকেট সাইফুল ইসলাম বলেন, বেশির ভাগ রোহিঙ্গা অজ্ঞ। তাই তারা জন্মনিয়ন্ত্রণ সর্ম্পকে অবগত নয়। এছাড়া হয়ত মিয়ানমারে তাদেরকে এ বিষয়ে অবগত করা হয়নি। তাই খুব দ্রুত তাদেরকে জন্মনিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে অবগত করানো উচিত। আবার পুরাতন অনেক রোহিঙ্গাদের কাছে জন্মনিয়ন্ত্রণের বার্তা পৌঁছানো আশানুরুপ ফল পাওয়া যাচ্ছেনা। ফলে বরাবরই রোহিঙ্গা নারীদের শিশুর সংখ্যা বেশি।
এ ব্যাপারে কলেজ শিক্ষক মোহাম্মদ মহিউদ্দিন জানান, মানবিক দিক বিবেচনা করে রোহিঙ্গাদের অস্থায়ীভাবে এদেশে থাকতে দেওয়া হয়েছে। তাদেরকে থাকা, খাওয়া ও চিকিৎসা সহ নানা ভাবে সহযোগিতা করা হচ্ছে। তাই বলে এই নয় যে জনবহুল দেশে অপরিকল্পিতভাবে রোহিঙ্গার সংখ্যা বাড়তে থাকুক। তার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের পাশাপাশি রোহিঙ্গাদেরও সচেতন থাকতে হবে।
এ ব্যাপারে পরিবার পরিকল্পনার উপ-পরিচালক ডা. পিন্টু কান্তি ভট্টাচার্য্য জানান, মন্ত্রানালয়ের সিন্ধান্ত শুধু পরিবার পরিকল্পনার উদ্যোগে রোহিঙ্গাদের জন্মনিয়ন্ত্রণ সহ অন্যান্য চিকিৎসা সেবা প্রদানে ৭টি মেডিকেল টিম করা হয়েছে। তার মধ্যে ৪টা উখিয়ায় এবং ৩টা টেকনাফে। বিভিন্ন উপজেলা থেকে কর্মী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে ২০০জন। তারা ক্যাম্পে ক্যাম্পে গিয়ে রোহিঙ্গাদের জন্মনিয়ন্ত্রণ সর্ম্পকে অবহিত করছে। ৩ পদ্ধতিতে তাদের জন্মনিয়ন্ত্রণ করানো হচ্ছে, একটি হল ৩ মাস মেয়াদী ইনজেকশন, জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি ও কনডম। গতকাল পর্যন্ত ১১ শত রোহিঙ্গা নারীকে ইনজেকজন দেওয়া হয়েছে। খাওয়ার বড়ি দেওয়া হয়েছে ১ হাজারেরও বেশি নারীকে। আর কনডম দেওয়া হয়েছে ৯ শত এর বেশি। রোহিঙ্গাদের জন্মনিয়ন্ত্রণ নিয়ে পরিবার পরিকল্পনা সফলতার সাথে এগিয়ে যাচ্ছে।