রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়া সাংবিধানিক দায়িত্ব: বিএনপি

জাতীয় ডেস্ক:

মিয়ানমারে রাখাইন রাজ্য থেকে হত্যা-নির্যাতনের মুখে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়া বাংলাদেশ সরকারের সাংবিধানিক দায়িত্ব।

এমন দাবি করে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয়, খাদ্য, নিরাপত্তা ও চিকিৎসা দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বিএনপি।

শুক্রবার রোহিঙ্গা নির্যাতনের প্রতিবাদে আয়োজিত এক মানববন্ধন কর্মসূচি থেকে এ আহ্বান জানান বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

দেশব্যাপী কর্মসূচির অংশ হিসেবে ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সকাল ১০টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত এ মানববন্ধন পালিত হয়।

মির্জা ফখরুল বলেন, বাংলাদেশের সংবিধানে বিশ্ব মানবতা ও নির্যাতিত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর কথা পরিষ্কারভাবে বলা আছে। তাই মানবিক কারণে নির্যাতিত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে আশ্রয় দেয়া ও সাহায্য করা সরকারের সাংবিধানিক দায়িত্ব। কিন্তু সরকার এক্ষেত্রে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে।

রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধান করে তাদের নিজ দেশে ফেরত নিতে আন্তর্জাতিক মহলের মাধ্যমে মিয়ানমার সরকারকে বাধ্য করতে কূটনৈতিক উপায়ে চেষ্টা চালাতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান বিএনপির মহাসচিব।

তিনি বলেন, ১৯৭৮ সালে মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের নির্যাতন করে বাংলাদেশে ঠেলে দিয়েছিল।তখন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান তাদের আশ্রয় দেয়ার পাশাপাশি রোহিঙ্গা নির্যাতনের প্রতিবাদ করে ফেরত নিতে বাধ্য করেছিলেন।

তিনি আরও বলেন, এরপর ১৯৯২ সালে আবারও রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে ঠেলে দিলে বেগম খালেদা জিয়ার সরকার কূটনৈতিকভাবে তাদের ফেরত নিতে মিয়ানমারকে বাধ্য করেন।

কিন্তু বর্তমান সরকার রোহিঙ্গা নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাচ্ছে না। মিয়ানমারের বিমান ১৭ বার বাংলাদেশের আকাশসীমা লঙ্ঘন করলেও তেমন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি বলেও অভিযোগ করেন বিএনপি মহাসচিব।

রোহিঙ্গাদের দায়িত্ব বাংলাদেশের নয় বলে সরকারের বক্তব্যের কঠোর সমালোচনা করে তিনি বলেন, বিশ্ববাসী যখন রাখাইন (আরাকান) রাজ্যে রোহিঙ্গা মুসলিমদের হত্যা, নির্যাতন ও নিজেদের বসতবাড়ি থেকে উৎখাতের বিরুদ্ধে সোচ্চার, তখন বাংলাদেশ সরকার নিশ্চুপ।

সরকার মানবিক ও কূটনৈতিক দিক থেকে রোহিঙ্গাদের আশ্রয়ের বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারেনি বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

মানববন্ধনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী রোহিঙ্গাদের নির্যাতনের জন্য মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সুচি ও দেশটির সেনাবাহিনীর কঠোর সমালোচনা করেন।

গণহত্যা থেকে প্রাণ বাঁচাতে রাখাইন থেকে আসা হাজার হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া সত্ত্বেও এ সরকার রোহিঙ্গা নির্যাতনের প্রতিবাদ জানাতে ব্যর্থ হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

রোহিঙ্গাদের জন্য আয়োজিত মানববন্ধনে বিএনপির কেন্দ্রীয়, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী যোগ দেন।

এ ছাড়া ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, মহিলা দল, শ্রমিক দলসহ বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরাও অংশ নেন।

ব্যাপকসংখ্যক নেতাকর্মীর উপস্থিতির কারণে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনের সড়কে মানববন্ধন কর্মসূচি সমাবেশে পরিণত হয়।

এতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ব্যারিস্টার শাজাহান ওমর, শামসুজ্জামান দুদু, ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, রুহুল কবির রিজভী আহমেদ, হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, বজলুল বাসিত আনজু, কাজী আবুল বাশার, আবদুল সালাম আজাদ, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শফিউল বারী বাবু, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, ছাত্রদল সভাপতি রাজীব আহসান প্রমুখ।

রোহিঙ্গাদের সমর্থনে রাজপথে বিএনপি নেতাকর্মীদের ঢল

এর আগে মিয়ানমারে রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর নির্যাতনের প্রতিবাদ জানাতে ঢাকার রাস্তায় নেমে এসেছেন বিএনপির বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী।

ফলে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে শুরু হওয়া মানববন্ধনটি সকাল ১০টার আগেই মাঝারি ধরনের সমাবেশে পরিণত হয়েছে।

এ কর্মসূচিতে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ বিএনপির কেন্দ্রীয়, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী যোগ দিয়েছেন।

এ ছাড়া মানববন্ধনে ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, মহিলা দল, শ্রমিক দলসহ বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরাও অংশ নিয়েছেন।

রাখাইনে রোহিঙ্গা নির্যাতন বন্ধ ও শরণার্থীদের বাংলাদেশে আশ্রয় দেয়ার দাবিতে আজ সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত সারা দেশে একযোগে পূর্ব ঘোষিত এ মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হচ্ছে।

রোহিঙ্গা ইস্যুতে ১৮ জেলায় বিএনপির কর্মসূচিতে বাধা

এদিকে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আশ্রয়ের দাবিতে রাজধানীসহ সারা দেশে মানববন্ধন করেছে বিএনপি। শুক্রবার সকালের ওই মানববন্ধনে বিভিন্ন জেলায় পুলিশের বাধার সম্মুখীন হয় দলটি।

যুগান্তরের প্রতিনিধিরা জানান, নোয়াখালী, পাবনা, ব্রাহ্মণবাড়ীয়া, খাগড়াছড়ি, যশোর, কুষ্টিয়া, সিলেট, বগুড়া, বান্দরবান, রাঙ্গামাটি, ঝিনাইদহ, ফেনী, চাঁদপুর, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, রাজশাহী, বগুড়া, ও সুনামগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পুলিশ ও আওয়ামী সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের বাধা,হামলা ও নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা হয়েছে।

গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সারা দেশে বিভিন্ন জেলায় পুলিশ ও আওয়ামী সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের বাধা, হামলা ও গ্রেফতারের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।

বিএনপি মহাসচিব জানান, মানববন্ধন কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে বৃহস্পতিবার রাত থেকে সারাদেশে বিএনপি’র নেতাকর্মীদের বাসায় বাসায় পুলিশ তল্লাসীর নামে তাণ্ডব চালিয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট আলী আজম ও মোস্তফা, বান্দরবানে পৌর যুবদলের সহ-সভাপতি মো. শফি, রাজশাহীতে বিএনপি নেতা আবদুল হালিম ও ছাত্রদল নেতা ফরিদুল আলম শাহেদ, কুষ্টিয়ায় ৪২ জন বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মী, যশোরে বিএনপি নেতা আবদুস সালাম আজাদ, যুবদল নেতা রবিউল ইসলাম, ছাত্রদল নেতা আরিফুল ইসলাম ও মো. বাপ্পিকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন