রাঙামাটির সাংবাদিক জামাল হত্যার ৯বছর

Jamal (Rangamati) Pic

স্টাফ রিপোর্টার:

২০০৭ সালের ৬ মার্চ রাঙামাটিতে খুন হয় সাংবাদিক মো. জামাল উদ্দিন। কিন্তু তার একদিন আগে নিখোঁজ হয় সে। লম্বা সময় নিয়ে, খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে তাঁকে হত্যা করা হয়। তার লাশ উদ্ধারের পর পুলিশের সুরতহাল রিপোর্টেও সেটা নিশ্চিত করা হয়। রাঙামাটি শহরের পর্যটন এলাকার হেডম্যান পাড়ার একটি গাছের নিচে ফেলে দিয়ে যায় তার রক্তমাখা লাশ। ওই পাহাড়ে একটি ঘরে খুনিদের ফেলে যাওয়া নানা ছাপও ছিল। কিন্তু তার পরও সংবাদিক জামাল হত্যাকারীরা এখনও গ্রেপ্তার হয়নি।

আপাতদৃষ্টিতে সাধারণ একটি হত্যাকান্ড মনে হলেও সেটা যে আদৌ সাধারণ নয়, তা প্রমাণ করে দিয়েছে পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ। হত্যাকা-ের তিন বার তদন্তের পরও নিজেদের ব্যর্থতা স্বীকার করে তদন্ত থেকে সরে দাঁড়িয়েছে তদন্ত কর্মকর্তরা । তবে জামালকে আঘাতেই আঘাতে ক্ষত-বিক্ষতভাবে হত্যা করা হয়েছে। পুলিশের তদন্ত কর্মকর্তার সুরতহাল প্রতিবেদনে এ বিষয়গুলো নিশ্চিত করা হয়েছে।

আবার বিশেষ মহলের ষড়যন্ত্রের কারণে জামালে হত্যাকা-কে আত্মহত্যা বলে নিজেদের দায় এড়াতে চান অনেকে। কিন্তু কেন এই হত্যাকা- তা আজও প্রকাশ হয়নি। তবে এতটুকু বোঝা যায় যে, খুনিরা সাধারণ কেউ নন।

পরিবার সূত্রে জানা যায়, ২০০৭সালে ১৭ ফেব্রুয়ারি ঘটনা। জামাল খুন হওয়ার কিছুদিন পূর্বে রাঙামাটি শহরের বনরূপার আলিফ মার্কেটের ছাদের উপরে গড়ে তোলা একটি ক্লাবের বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত সুপ্রভার পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়। সুকৌশলে সে দোষ চাপানো হয় সাংবাদিক জামালের উপর। যে সংবাদ কিন্তু জামাল করেনি। কারণ সে ওই প্রত্রিকার প্রতিনিধিও ছিলনা। তবুও অজ্ঞাত কারনে তাকে দায়ভার নিতে হয় তাকে। সে ক্লাবের সন্ত্রাসীরা তাকে একা পেয়ে বনরূপা আলিফ মার্কের অন্ধকার গলিতে নিয়ে এলোপাতারি কিল, ঘুষি মারতে মারতে গাড়িতে তুলে নিয়ে যেতে চেয়ে ছিল। কিন্তু সে সময় রাস্তায় নিয়মিত টহলে ছিল সেনাবাহিনীর দল। সেদিন সে সেনা টহল দল সন্ত্রাসীদের হাত থেকে উদ্ধার করে জামালকে। সে সময় আটকরা হয় হাফিজুল হাসানকে। তখন জামাল সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে একটি মামলাও করেন। কিন্তু মামলার পর প্রায় প্রতিদিন ও আসামিরা বিভিন্নভাবে হুমকি দিত মামলা তুলে নিতে। এ ঘটনায় পর সন্ত্রাসীদের ভয়ে জামাল বাসা বের হত না। অবশেষে যেদিন বাসা থেকে বের হয় সেদিন আর ফিরতে পারেনি। এখন সচেতন মহলের প্রশ্ন সে সন্ত্রাসীরা কি ছিল জামাল হত্যার কিলিং মিশিনের মূল হোতা? নাকি প্রভাবশালি মহলেও অদৃশ্য কোন শক্তি!

পুলিশের সুরতহাল রিপোর্টের তথ্য সূত্রে, জামালের লাশ উদ্ধারের সময় তার কপালে কালো দাগ, কানের কিছু অংশে কাটা দাগ, পায়ের গোড়ালির উপর অংশে কালো দাগ, সারা শরীরে ক্ষত-বিক্ষত আঘাতের চিহ্ন, তার মুষ্টিবদ্ধ হাতের মধ্যে নদীর পারের ভিজা মাটি মাখা তাজা ঘাস, চোখ বন্ধ অবস্থাসহ এমন বিভিন্ন আলামত ও প্রমাণাদি পাওয়া যায়। জামালের গলায় যে ন্যাটকীয়ভাবে সুতা পেঁচানো ছিল। লাশ উদ্ধারের সময় পুলিশ জামালের গলায় পেঁচানো সুতা গুলো টেনে দেখলে সুতাগুলো গলার চর্তুপাশে ঘুরছে। এই থেকে বুঝা যায় জামারের গলায় সুতা পেঁচিয়ে তাকে পৈশাচিক ভাবে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু তার পরও ময়নাতদন্ত রিপোর্টে এ হত্যাকা-কে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু তার কোন প্রতিকার হয়নি। সেদিন প্রতিবাদ করারমত তাঁর পরিবারের পাশে কেউ ছিলনা।

এ ব্যাপারে জামালের ছোট বোন সাংবাদিক ফাতেমা জান্নাত মুমু জানান, সাংবাদিক হওয়াটা ছিল আমার ভাই জামালের জন্য কাল। কারণ যারা দেশ ও জাতির জন্য কথা বলে তাদেরও নিরাপত্তা কেউ দেয়না। যার প্রমাণ সাংবাদিক জামাল হত্যা। দীর্ঘ নয় বছর অতিবাহীত হয়ে গেছে। কিন্তু আমার মা তার ছেলে হত্যার বিচার পায়নি। আমি আমার ভাই হত্যার বিচার পায়নি। আদৌ পাবকিনা তা জানিনা। তবুও আমরা সুবিচার চাই। সেই সাথে চাই জামাল হত্যান্ডের পূর্ণ তদন্ত।

প্রসঙ্গত, ২০০৬ সালে বেসরকারি টিভি চ্যানাল এনটিভির রাঙামাটি জেলা প্রতিনিধি হিসেবে যোগদান করেন সাংবাদিক জামাল উদ্দিন। এছাড়া তিনি স্থানীয় দৈনিক গিরিদর্পণের বার্তা প্রধান ও দৈনিক বর্তমান বাংলা, দৈনিক করতোয়া, বার্তা সংস্থা বাসসহ সাংবাদিকতা পেশায় ১০ বছর কাজের দক্ষতার ছাপ রাখেছিলেন। আবার রাঙামাটি পার্বত্য জেলায় একজন আলোক চিত্র সাংবাদিক হিসেবেও অনেক জনপ্রিয়তা লাভ করেন। পাবত্যাঞ্চলের মতো একটি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় অতি অল্প বয়স থেকে সাংবাদিকতা পেশায় সফল হতে সক্ষম হন সাংবাদিক মো. জামাল উদ্দিন। এ সফলতা দেখে ঈর্ষান্বিত হয়ে ঘাতকরা অকালে তার জীবন কাড়ে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন