রাঙামাটিতে ইউপি নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ তদন্তে ইসি কমিটির বরকল পরিদর্শন

1466952391

নিজস্ব প্রতিনিধি : রাঙামাটিতে গত ৪ জুন অনুষ্ঠিত বরকল উপজেলার ভূষণছড়া ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে একটি কেন্দ্রে ব্যাপক জালভোটসহ অনিয়মের অভিযোগ তদন্তে বরকল পরিদর্শন করে এসেছেন নির্বাচন কমিশন গঠিত তদন্ত কমিটি।

রোববার এক সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটির প্রধান ও চট্টগ্রাম বিভাগের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা আব্দুল বাতেন সকালে ভূষণছড়া ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ছোটহরিণা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রটি সরেজমিন গিয়ে প্রত্যক্ষ করেন। ওই সময় স্থানীয় জনগণের সঙ্গে কথা বলে অভিযোগ সম্পর্কে তত্ত্ব-তালাশ নেন তিনি। পরে বরকল উপজেলা সদরে গিয়ে উপজেলা নির্বাচন অফিসে অভিযোগকারী ও অভিযুক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী, তাদের সমর্থক, পোলিং এজেন্ট, নির্বাচনী কর্মকর্তা-কর্মচারী, প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও আইনশৃংখলা বাহিনীর কর্মকর্তাসহ স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে তাদের সাক্ষ্য নেন তদন্ত কর্মকর্তা আব্দুল বাতেন। ওই সময় জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. নাজিম উদ্দিন, বরকল উজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা সুচমিকা চাকমা তার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, ৪ জুন অনুষ্ঠিত বরকলের ভূষণছড়া ইউপি নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ প্রার্থী মামুনুর রশিদ মামুনের বিরুদ্ধে পাহাড়ি ভোটারদের বের করে দিয়ে ছোটহরিণা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র দখল করে ব্যাপক জালভোটসহ ভোট ডাকাতির অভিযোগ করেন জনসংহতি সমিতির সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থী দিলীপ কুমার চাকমা। তিনি ওই কেন্দ্রের ফল বাতিল করে কেন্দ্রটিতে পুননির্বাচন ঘোষণার দাবিতে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন। পাশাপাশি হাইকোর্টেও একটি রিট আবেদন করেন তিনি। একই সঙ্গে দাবি নিয়ে অবরোধসহ বিভিন্ন কর্মসূচি দিয়ে আন্দোলনে নামে জনসংহতি সমিতি। এসবের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টের আদেশে ১৬ জুন চট্টগ্রামের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা আব্দুল বাতেনকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে নির্বাচন কমিশন।

তদন্তকালে তদন্তকারী কর্মকর্তা আব্দুল বাতেন বলেন, গত ৪ জুন ষষ্ঠ ধাপে রাঙ্গামাটি জেলার ৪৮টি ইউপিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে।ওইসব ইউপির মধ্যে নির্বাচন কমিশনে বরকলের ভূষণছড়া ইউনিয়নের একটি কেন্দ্রে অনিয়মের অভিযোগ দেয়া হয়। আমরা অভিযোগের সত্যতা তদন্ত করে দেখছি। এজন্য সবার সঙ্গে কথা বলেছি। কেন্দ্রটি পরিদর্শন করা হয়েছে। তদন্তে অভিযোগকারী ও অভিযুক্ত প্রার্থী, তাদের সমর্থক, সাধারণ লোকজন, ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা, কর্মচারী, প্রিসাইডিং অফিসার, ষ্ট্রাইকিং ফোর্স, পোলিং এজেন্ট, নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেটসহ যারা ওই কেন্দ্রের দায়িত্বে ছিলেন সবার মৌখিক এবং লিখিত সাক্ষ্য নেয়া হচ্ছে।

এছাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ প্রশাসনিক ও আইনশৃংখলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। সবার সঙ্গে কথা বলে সত্যতা যাচাই করা হচ্ছে। আমরা মনে করি মিথ্যা দু’য়েকজন বলতে পারে কিন্তু সবাই তো বলবে না। সত্যতা পাওয়া গেলে ওই কেন্দ্রে পুন:ভোট গ্রহণ করা হবে। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ অনুযায়ী আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট জমা দেয়া হবে বলে জানান তিনি।

তদন্তকারী কর্মকর্তা বলেন, সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রে ভোট প্রদানে কোনো বিঘ্ন সৃষ্টি হয়েছিল কিনা, ভোট দিতে গিয়ে ভোটাররা কোনোভাবে বাধাগ্রস্ত হয়েছিলেন কিনা এবং কোনো প্রার্থীর পোলিং এজেন্টকে ভোট কেন্দ্র হতে বের করে দেয়ার ঘটনা ঘটেছিল কিনা- সেগুলো সুষ্ঠু তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

অভিযোগ সম্পর্কে জেএসএস সমর্থিত স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী দিলীপ কুমার চাকমা বলেন, ভোটের দিন ভূষণছড়া ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ছোটহরিণা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোটগ্রহণকালে সকালের দিকে বিজিবির সহায়তায় স্থানীয় আওয়ামী লীগের ছত্রচ্ছায়ায় ৫০-৬০ জনের একদল বহিরাগত বাঙালি ওই ভোটকেন্দ্র দখল করে কেন্দ্র থেকে আমার পোলিং এজেন্টদের জোরপূর্বক বের করে দেয় এবং ব্যালটে সিল মেরে বাক্সে ফেলে। ভোট কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার ও পোলিং অফিসারদের উপস্থিতিতে নৌকা প্রতীকে সিল মেরে অবাধ জালভোট প্রদান করে তারা।

তিনি দাবি করেন, ওই সময় আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা পাহাড়ি ভোটারদের কেন্দ্র থেকে তাড়িয়ে দেয় এবং তাদের মারধর করে। এতে রতিবালা চাকমাসহ ৮-১০ জন পাহাড়ি আহত হয়। আওয়ামী লীগ সমর্থনপুষ্ট বহিরাগত বাঙালিদের হামলার ফলে ভোটকেন্দ্রটিতে পাহাড়ি ভোটাররা সুষ্ঠুভাবে ভোট দিতে পারেননি। তাই কেন্দ্রটির ফল বাতিল করে সেখানে পুনর্র্নিবাচনের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, প্রহসনমূলক ও জালভোটের ফল বাতিল করে অচিরেই ছোটহরিণা কেন্দ্রে পুন:ভোট গ্রহণ করতে হবে। অন্যথায় কঠোর আন্দোলনের কর্মসূচি দেয়া হবে।

আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ও নির্বাচিত চেয়ারম্যান মামুনুর রশিদ মামুন ওই কেন্দ্রে ভোট সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ হয়েছে বলে দাবি করে অচিরেই গেজেট প্রকাশের দাবি জানান।

এদিকে ওই ইউনিয়নের ৯টি কেন্দ্রের মধ্যে ৮টি কেন্দ্রের ফলাফলের ব্যাপারে জনসংহতি সমিতির প্রার্থীর আপত্তি না থাকলেও ছোটহরিণা ভোট কেন্দ্রের বিষয়ে তাদরে বক্তব্য হল- ওই কেন্দ্রে ভোটারের সংখ্যা ২ হাজার ৭১২জন। তন্মধ্যে পাহাড়ি ভোটার ২ হাজার ৫৬ এবং বাঙালি ভোটার ৬৫৬ জন। পাহাড়ি ভোটার সংখ্যা বেশি হওয়ায় সেখানে পাহাড়ি সবাই দিলীপ কুমার চাকমাকে ভোট দিয়েছে। তাই সেখানে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীর জেতার বিষয়টি প্রশ্নই আসে না। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের দাবি পাহাড়ি সবাই জনসংহতি সমিতিকে সমর্থন করে এমনটা ভাবার কারণ নেই। আলোচিত ভুষণছড়া কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী মামনুর রশীদ মামুন পেয়েছেন ১ হাজার ৬৬৪ ভোট এবং দিলীপ কুমার চাকমা পেয়েছেন ৮শ’ ভোট।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন