‘যেভাবে নির্যাতন করছে তাতে কি মিলেমিশে থাকা যায়?’

পার্বত্যনিউজ ডেস্ক:

মিয়ানমারের ডি ফ্যাক্টো নেতা অং সান সু চি বৃহস্পতিবার দেশটির রাখাইন পরিদর্শনে গিয়ে সেখানকার মানুষেরা যাতে ঝগড়া বিবাদ না করে, সে আহ্বান জানিয়েছেন। সেই সঙ্গে তাদের মিলেমিশে থাকারও আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

তবে তার বক্তব্যের সমালোচনা করেছেন বাংলাদেশের কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং শরণার্থী ক্যাম্পের রোহিঙ্গা নারী পুরুষ এবং সেখানকার কম্যুনিটি নেতৃবৃন্দ।

সফুরা খাতুন এবং তার পরিবারের ১৩জন সদস্য ১৫দিন আগে মিয়ানমারের রাখাইন থেকে বাংলাদেশে এসে পৌছেছেন। পরিবারের দুইজন সদস্যকে গুলি করে ও পুড়িয়ে হত্যার পর তারা দেশ ছাড়েন। তার আগে সেনারা দখল করে নেয় তাদের ফসলি জমি আর পুকুর।

সফুরা বলছেন, তার মামাকে গুলি করে ঘরবাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয় সেনাবাহিনী। এরপর তার মামীসহ অন্যরা এদেশে পালিয়ে আসে। সেখানে তাদের জমি, ভিটাবাড়ী আছে। কিন্তু যেদিন তাদের বাড়ি জ্বালিয়ে দেয়া হয়, সেদিনই জমিজমাও কেড়ে নেয় সেনারা। আশেপাশের প্রতিবেশীদের বেশিরভাগ বাংলাদেশে এসেছে। যারা আছে তাদেরও সেনাবাহিনী রোজ ভয় দেখায়।

সফুরার পরিবার উখিয়ার একটি অস্থায়ী আশ্রয় ঠাঁই পেয়েছে, সপ্তাহ দেড়েক হলো। কিন্তু এখনো তার পরিবারের মত যারা সেখানে রয়ে গেছেন, তাদের দেখতে আজ দুপুরে একটি সামরিক বিমানে করে রাখাইনে গিয়েছিলেন মিয়ানমারের ডি ফ্যাক্টো নেতা অং সান সু চি।

সেখানে মিজ সু চি যখন সেখানকার মানুষদের ঝগড়া-বিবাদ না করে মিলেমিশে থাকার আহ্বান জানিয়েছেন, তখনো বুথিদং এর জঙ্গলে কয়েক হাজার মানুষ বাংলাদেশে ঢোকার জন্য অপেক্ষা করছে। আর যারা নাফ নদী পেরিয়ে বাংলাদেশে ঢুকে পড়েছেন, তাদের সকলেই ভয়ংকর পরিস্থিতির মুখে পড়েছেন।

এমনই একজন মো. নুর হোসেন মিজ সু চির ভাষণ সম্পর্কে এই প্রতিবেদকের কাছে শুনে বলছিলেন, ঝগড়া করার মত পরিস্থিতিতে কোন রোহিঙ্গা নেই সেখানে।

“আমরা কিভাবে ঝগড়া করবো? আমাদের নাগরিকত্ব দেয় নাই, আমাদের ছেলেমেয়েদের পড়ালেখা করতে দেয় নাই, আমাদের সহায়-সম্পদ কাড়ি নিছে। আমাদের যদি মানুষের মত অধিকার দেয়, আমার জমিজমা যদি ফেরত দেয়, ওখানে বুদ্ধিষ্টরা যেভাবে চলাফেরা করে সেভাবে আমাদেরও যদি করতে দেয়, তাহলে আমাদের তো এখানে থাকার দরকার নাই।”

উখিয়ার আরেক ক্যাম্পে বাস লায়লা বেগমের। এখানে আসার আগে তার একটি সন্তান নাফ নদীতে ডুবে মারা গেছে। তিনি বলছিলেন, অত্যন্ত কঠিন পরিস্থিতিতে দেশ ছেড়েছেন তিনি। তার কাছে জানতে চেয়েছিলাম রাখাইনে রোহিঙ্গাদের মিলেমিশে থাকার পরিস্থিতি আছে কিনা? “ওদের সাথে কিভাবে মিলিমিশে থাকব? যেভাবে নির্যাতন করছে তাতে কি ওদের সাথে মিলেমিশে থাকা যায় নাকি?”

এখনো প্রতিদিনই ঘরবাড়ি ছেড়ে, নিজেদের সর্বশেষ সম্বলটুকু নিয়ে পরিবার পরিজনের সাথে নৌকায় পাড়ি জমাচ্ছেন হাজারো মানুষ। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো জানাচ্ছে তারা সীমান্তে অপেক্ষা করছে। বুধবারই বাংলাদেশে ঢুকেছে কয়েক হাজার মানুষ। এখানকার অস্থায়ী ক্যাম্পগুলোর রোহিঙ্গা নেতা হিসেবে পরিচিত আমির হোসন। তিনি বলছেন, রোহিঙ্গাদের ওপর এখনো একই ভাবে নিপীড়ন চালানো হচ্ছে। ফলে মিজ সুচি যা বলছেন, তা হাস্যকর। বান্দরবান, টেকনাফ কক্সবাজারসহ কয়েকটি এলাকায় পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা আশ্রয় নিয়েছেন।

বান্দরবান, টেকনাফ কক্সবাজারসহ কয়েকটি এলাকায় পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা আশ্রয় নিয়েছেন।
“এখনো প্রতিদিনই ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয়া হচ্ছে, মহিলাদের ধর্ষণ করা হচ্ছে। যারা আছে তাদের অবরোধ করে রাখা হচ্ছে। বাজারে গিয়ে চালও কিনতে পারছে না তারা। পথে পেলে মারধর করা হচ্ছে। পারলে মেরে ফেলা হচ্ছে।”

এদিকে, অগাষ্টে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর হত্যা-নির্যাতন শুরুর পর থেকে প্রাণ বাঁচাতে এ পর্যন্ত পালিয়ে বাংলাদেশে ঢুকেছে ছয় লাখের বেশি রোহিঙ্গা মুসলমান। বিষয়টি নিয়ে দেশটির নেতা অং সান সুচির প্রতিক্রিয়ায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ব্যপক সমালোচনার মুখে পড়েন তিনি।

 

সূত্র: বিবিসি

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন