Notice: Trying to get property 'post_excerpt' of non-object in /home/parbatta/public_html/wp-content/themes/artheme-parbattanews/single.php on line 53

Notice: Trying to get property 'guid' of non-object in /home/parbatta/public_html/wp-content/themes/artheme-parbattanews/single.php on line 55

মিয়ানমারে নাগরিকত্ব চাইতে রোহিঙ্গাদের সোচ্চার হতে হবে


তৈমুর ফারুক তুষার ::
রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে উদ্বুদ্ধ করা উচিত বলে মনে করেন মিয়ানমারে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল (অব.) অনুপ কুমার চাকমা। কালের কণ্ঠকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে এখন কূটনৈতিক তৎপরতাই মূল ভূমিকা রাখবে। এটা আমাদের দেশের সব রাজনৈতিক দলের নেতাদের বুঝতে হবে। এ জন্য জাতীয় ঐক্য প্রয়োজন। কোনো দলের নেতাদেরই মিয়ানমারকে নিয়ে এমন কোনো কথা বলা উচিত হবে না যা কূটনৈতিক উদ্যোগকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। অন্যদিকে আমাদের উচিত রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে উদ্বুদ্ধ করা। ’

সাবেক এই রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের জাতিগত স্বীকৃতি না থাকলেও ১৯৪৮ সাল বা তার আগে থেকে সেখানে যারা বসবাস করছে তাদের নাগরিক হওয়ার সুযোগ আছে। চলমান সংকট সমাধানের ক্ষেত্রে রোহিঙ্গাদের এই সুযোগটি গ্রহণ করাই হবে সঠিক কাজ। ’

অনুপ কুমার চাকমা ২০০৯ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছর মিয়ানমারে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে কাজ করেছেন। নিজের অভিজ্ঞতা এবং মিয়ানমারের কূটনীতিকদের সঙ্গে যোগাযোগের আলোকে তিনি বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরেই রোহিঙ্গাদের সঙ্গে আরাকানের মানুষের অবিশ্বাসের সম্পর্ক রয়েছে। তারা মনে করে রোহিঙ্গারা অনুপ্রবেশকারী।

এ সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করে ১৯৮২ সালে মিয়ানমারে নাগরিকত্ব আইন সংশোধনের পর। সে আইনে ১৩৫টি জাতিগোষ্ঠীকে স্বীকৃতি দেওয়া হলেও রোহিঙ্গাদের আলাদা জাতিগোষ্ঠী হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। শুধু রোহিঙ্গা নয়; বার্মিজ চাইনিজ, বার্মিজ ইন্ডিয়ান তাদেরও জাতিগত স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। নতুন নাগরিত্ব আইনের পর রোহিঙ্গাদের বলা হয়, তোমাদের নাগরিত্ববিষয়ক আগের কাগজপত্র বাতিল করা হলো। তোমরা নতুন করে আবেদন কর। তোমাদের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। কিন্তু রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী রোহিঙ্গা হিসেবে জাতিগত স্বীকৃতি না পাওয়া পর্যন্ত আবেদন করতে রাজি হলো না। এতে সমস্যাটা প্রকট আকার ধারণ করল। ’

সংবিধান স্বীকৃত জাতিগোষ্ঠী হিসেবে তালিকাভুক্ত না হলে নাগরিকত্ব পাওয়া সম্ভব কি না জানতে চাইলে অনুপ কুমার চাকমা বলেন, ‘আমাকে মিয়ানমারের কূটনীতিকরা বলেছেন, রোহিঙ্গারা কাগজপত্রসহ আবেদন করলে তাদের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। জাতিগত স্বীকৃতি না থাকলেও নাগরিক হওয়া সম্ভব। বার্মিজ চাইনিজ, বার্মিজ ইন্ডিয়ানরা তো বটেই, এমনকি অনেক রোহিঙ্গাও আবেদন করে নাগরিক হয়েছে। কারণ নাগরিকত্ব আবেদন ফরমে স্বীকৃত জাতিগোষ্ঠী ছাড়াও আদার্স (অন্যান্য) বলে একটা অপশন আছে। ’ তিনি বলেন, ‘রাখাইন রাজ্যেও রোহিঙ্গাদের অনেকে আছে যারা আবেদন করে নাগরিকত্ব পেয়েছে। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ চাকরিতেও তারা নিয়োগ পেয়েছে। ফলে নাগরিকত্ব পাওয়ার সুযোগ একেবারেই নেই এটা ঠিক নয়। কিন্তু রোহিঙ্গা জাতিগত পরিচয়ে নাগরিক হওয়ার সুযোগ নেই। ’

সাবেক এই রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘সংকট যে প্রকট আকার ধারণ করেছে সেখানে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের নাগরিক হওয়ার আবেদন করা উচিত। নাগরিক হয়ে গেলে সংকট সমাধান সহজ হবে। রোহিঙ্গাদের আমাদের বোঝাতে হবে, তোমরা নাগরিক হওয়ার আবেদন করো। ’ তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের উচিত রোহিঙ্গাদের নাগরিক হওয়ার আবেদন করতে উদ্বুদ্ধ করা। আর মিয়ানমারকে বোঝানোর চেষ্টা করা তারা যেন রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন বন্ধ করে। এই দুটি বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে না দেখলে বছরের পর বছর বাংলাদেশকে রোহিঙ্গাদের বোঝা টানতে হবে। ’

অনুপ কুমার চাকমা বলেন, ‘মিয়ানমারে রোহিঙ্গা সংকট নিরসন না হলে সেখানে উগ্রবাদ বাড়বে। দুই পক্ষই উগ্রবাদের দিকে ক্রমেই আরো বেশি ঝুঁকবে এতে কোনো সন্দেহ নেই। কফি আনান কমিশনের প্রতিবেদনেও এমন আশঙ্কা করা হয়েছে। দুই পক্ষের মধ্যে যে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে তা দূর করতে না পারলে মানবতার জন্য তা হবে মারাত্মক হুমকি। ’

রোহিঙ্গা সংকটে বিভিন্ন দেশের ভূমিকা প্রসঙ্গে অনুপ কুমার চাকমা বলেন, ‘এখানে ভূরাজনৈতিক, ব্যবসায়িক নানা স্বার্থ রয়েছে। এসব স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়েই রাষ্ট্রগুলো তাদের ভূমিকা ঠিক করছে। এখানে প্রভাবশালী দেশ চীন, ভারত, রাশিয়ার ব্যবসায়িক নানা স্বার্থ আছে; তাদের বিপুল বিনিয়োগ আছে। মিয়ানমারের বহু সেনা কর্মকর্তা রাশিয়ায় গিয়ে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। ফলে ওই সব দেশ বাংলাদেশের পক্ষে কথা বলে তাদের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক নষ্ট করবে না। ’ তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র চাইছে মিয়ানমারকে চাপে রেখে এ অঞ্চলে তাদের প্রতিদ্বন্দ্বীদের প্রভাব কমিয়ে আনতে। আসলে প্রভাবশালী দেশগুলো মিয়ানমারে তাদের প্রভাব বজায় রাখতে নিজেদের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় লিপ্ত। আর তাদের প্রতিদ্বন্দ্বিতার শিকার হচ্ছি আমরা। ’

জাতিসংঘের ভূমিকার বিষয়ে অনুপ কুমার চাকমা বলেন, ‘জাতিসংঘ সম্প্রতি একটা বিবৃতি দিয়েছে। কিন্তু সেখানে যে রকম কঠোর বার্তা দেওয়ার প্রয়োজন ছিল, সে রকমটা আসেনি। রাশিয়া ও চীনের ভূমিকার কারণে জাতিসংঘ কঠোর অবস্থান নিতে পারছে না। ’

বাংলাদেশের অবস্থান ও করণীয় প্রসঙ্গে সাবেক এই কূটনীতিক বলেন, রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠাতে আমাদের কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার করতে হবে।

সূত্র: কালেরকণ্ঠ

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন