মিয়ানমারের উপর চাপ নয়, শান্তিপূর্ণ আলোচনায় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন কাম্য: মার্ক ফিল্ড


কক্সবাজার প্রতিনিধি:
যুক্তরাজ্যের এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় বিষয়ক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মার্ক ফিল্ড বলেছেন, মিয়ানমারের উপর চাপ প্রয়োগে নয়, শান্তিপূর্ণ আলোচনায় এর সমাধান চাই আমরা। একটু সময়ক্ষেপণ হলেও, আন্তরিকভাবে নাগরিক সম্মান দিয়েই যেন প্রত্যাবাসন হয়, এটিই কাম্য।

তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের বিষয়টি এখন আন্তর্জাতিক ইস্যু। তাই আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সাথে একাত্ম হয়ে বৃটিশ সরকার রোহিঙ্গা সমস্যার স্থায়ী সমাধানে কাজ করছে।

শনিবার (৩০ জুন) উখিয়ায় আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন মার্ক ফিল্ড। দুপুর দেড়টায় উখিয়া কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পৌঁছান যুক্তরাজ্যের এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় বিষয়ক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মার্ক ফিল্ডের নেতৃত্বাধীন পরিদর্শক দল। সেখানে পৌঁছেই তারা ক্যাম্পের বিভিন্ন সেক্টর ঘুরে দেখেন এবং রোহিঙ্গাদের সাথে কথা বলেন।

ক্যাম্প বিষয়ে মার্ক ফিল্ড বলেন, অধিকাংশ ক্যাম্প আমরা ঘুরে দেখেছি। একসাথে এত সংখ্যক লোককে আশ্রয় দিতে গিয়ে বাংলাদেশের প্রকৃতি ও পরিবেশের বেশ ক্ষতি হয়েছে। এরপরও এতসংখ্যক শংকটাপন্ন মানুষকে মানবিক আশ্রয় ও পুনর্বাসনে বাংলাদেশ প্রশংসনীয় কাজ করেছে। বাংলাদেশ সরকারকে আমরা ধন্যবাদ জানাই এবং এ যাত্রায় বৃটিশ সরকার বাংলাদেশের সহযোগী হিসেবে রয়েছে।

মিয়ানমার ছাড়া অন্য কোন রাষ্ট্রে রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনে সহযোগিতার পরিকল্পনা আছে কিনা এমন এক প্রশ্নের জবাবে মার্ক ফিল্ড বলেন, শান্তিপূর্ণভাবে নিজদেশ মিয়ানমারে রোহিঙ্গারা ফিরে যেতে পারলে অন্য দেশে পুনর্বাসিত করার কোন যুক্তিকতা নেই।

উখিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ আবুল খায়ের বলেন, শনিবার দেড়টার দিকে যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মার্ক ফিল্ডের নেতৃত্বে একটি দল উখিয়া কুতুপালং রোহিঙ্গা শিবিরে এসে পৌঁছান। পরে তিনি রোহিঙ্গা শিবির ঘুরে দেখেন। এরপর বেলা সোয়া ২টার দিকে যান উখিয়ার লম্বাশিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকায়। সেখানেও আশ্রিত রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলেন পরিদর্শকগণ।

লম্বাশিয়া এলাকায় বসবাসকারি আশ্রিত রোহিঙ্গা সালামত খান বলেন, বেলা আড়াইটার দিকে বিশাল গাড়ি বহর নিয়ে বিদেশী ডেলিগেটরা লম্বাশিয়া ক্যাম্পে পৌঁছান। এখানে তারা নতুন রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকা পরিদর্শন করেন। সেখানে অবস্থান নেয়া রোহিঙ্গাদের ভালমন্দ খোঁজ নেন তিনি।

লম্বাশিয়া ‘ডাবল জিরো’ ক্যাম্পের মাঝি রহমত উল্লাহ বলেন, রোহিঙ্গারা বৃটিশ মন্ত্রীকে জানিয়েছেন, তারা বাংলাদেশে ভালই আছেন। এরপরও তারা সম্মান নিয়ে নিজ দেশে ফিরে যেতে চান। এটি শোনার পর তিনিও পূর্বে আসা অন্যদের মতো আশ্বাস দিয়ে বলেছেন, নিরাপদ প্রত্যাবাসনে কাজ করছেন তারা। ধীরে ধীরে এতে সফলতা আসবে।

রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন শেষে বৃটিশ মন্ত্রী বেলা সাড়ে তিনটার দিকে ক্যাম্প ত্যাগ করেন।

উল্লেখ্য, গত বছরের ২৫ আগষ্ট পরবর্তী রাখাইনে মুসলিম রোহিঙ্গাদের উপর অভিযান চালায় মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। অভিযানের মুখে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেন। জাতিসংঘ, ইউরোপিয়ান ইউনিয়নসহ পশ্চিমা বিশ্বের অভিযোগ, এই অভিযানের সময় মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ‘জাতিগত নিধন’, ‘গণহত্যা’ ও ‘পদ্ধতিগত’ মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে। যদিও শুরু থেকেই মিয়ানমার এই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। ইতোমধ্যে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকার চুক্তি করেছে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন